মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫ | ২৫ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৪৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান

দিনের শেষে আলো আর পৃথিবী গ্রাসকারী অন্ধকার নেমে এলে লিসে থেকে ফিরে আসার সময় মৃত্যুর মতো অজানা ভয় জ্যাকের নিত্যসঙ্গী হতো। তার নানি ঝুলন্ত বাতিটা না জ্বালানো পর্যন্ত ওই অন্ধকার কিছুতেই শেষ হতো না। কাচের চিমনি খাবার টেবিলের ওপর নামিয়ে পায়ের আঙুলের ওপর শরীরের ভর রেখে একটুখানি উঁচু হয়ে টেবিলের কোণায় উরু ঠেকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে মাথা ওপরের দিকে তুলে ছাউনির নিচের বার্নার দেখতেন নানি।

এক হাতে বাতির নিচের দস্তার চাবি ধরে আরেক হাতে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি দিয়ে সলিতার পোড়া অংশ খসে পড়ে উজ্জ্বল আলো না জ্বলা পর্যন্ত ঘষা দিতে থাকতেন। তারপর তিনি চিমনি ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিতেন। দস্তার প্রকোষ্ঠের খাঁজকাটা পটির সঙ্গে চিমনির ঘষা লেগে চিক চিক শব্দ উঠত। চিমনিটা ওখানে বসিয়ে দিয়ে তিনি আবার টেবিলের পাশে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একহাত ওপরের দিকে তুলে সলিতা ঠিক করে দিতেন। নিচে টেবিলের ওপরে কড়া হলুদ আলো পড়ত নিখুঁত গোলাকার হয়ে। টেবিলক্লথের ওপরে আলোর প্রতিফলন পড়ে নানির মুখের ওপর এবং টেবিলের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে নানির কাজ পর্যবেক্ষণরত জ্যাকের মুখের ওপর পড়ত। আলো যত বেশি উজ্জ্বল হতো তার মনটাও তত হালকা হয়ে আসত।

নানি যখন তাকে অন্ধকার উঠোন থেকে মুরগি আনার আদেশ দিতেন ওই একই রকম ভয় সে জয় করার চেষ্টা করত নিজের ভেতরের অহংকার অথবা গর্বের দ্বারা। এরকম দায়িত্ব পালন করতে হতো ইস্টার কিংবা বড় দিনের আগের রাতে। কিংবা আর্থিক দিক থেকে অবস্থাপন্ন কোনো আত্মীয়ের আগমন উপলক্ষে। তাদের চোখে পরিবারের আসল অবস্থা প্রকাশ না করে বরং মার্জিত ও শালীন অবস্থা প্রকাশ করার চেষ্টা থাকত। কাজটা তাকে করতে হতো সাধারণত রাতের বেলা। জ্যাকের লিসেতে পড়ার প্রথম দিকে নানি একবার যোসেফিন মামাকে বলেছিলেন, মামার রবিবারের ব্যবসায়িক অভিযানের সময় যেন নানির জন্য কয়েকটা আরবের মুরগি এনে দেন।

আর্নেস্ট মামাকে ধরে নানি উঠোনের কোণার দিকে প্যাঁচপেঁচে কাদা মাটির ওপরে একটা মুরগির খাঁচা তৈরি করে নিলেন। নানি সেখানে পাঁচ-ছয়টা মুরগি পুষতেন। মুরগিগুলো নিয়মিত ডিম দিত এবং মাঝে মাঝে এরকম অবস্থায় প্রাণ দিয়ে দিত। প্রথমবার যেদিন নানি একটা মুরগির প্রাণদণ্ড কার্যকর করতে চেয়েছিলেন সেদিন পরিবারের সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছিল। তিনি তার বড় নাতিকে হুকুম করলেন দণ্ডিতকে নিয়ে আসতে। কিন্তু লুই (জ্যাকের বড় ভাইকে কখনও কখনও হেনরি বলা হতো, কখনও কখনও লুই বলে ডাকা হতো) সোজাসুজি বলে ফেলল, সে পারবে না। তার ভয় লাগে। নানি এখনকার সময়ের আদুরে বাচ্চাদের প্রতি বিদ্রুপ করলেন এবং উল্লেখ করলেন, তার সময়ের বাচ্চারা বনে জঙ্গলে যেতে ভয় পেত না। তারা কোনো কিছুতেই ভয় পেত না। তিনি জ্যাকের উদ্দেশে বললেন, ওসব বাচ্চাদের চেয়ে জ্যাক অনেক সাহসী। যা, তুই গিয়ে নিয়ে আয়। আসলে জ্যাক অন্য কারো চেয়ে বেশি সাহসী ছিল সেটা সত্যি নয়। তবে হুকুম একবার হয়ে গেছে মানে সে আর না করতে পারবে না। তাকে যেতেই হবে। যা হোক, সে রাতেই প্রথম জ্যাক মুরগি আনতে গেল। অন্ধকারে সিঁড়ি ভেঙে বাম দিকে ঘুরে সব সময় অন্ধকারে থাকা হলরুম পার হয়ে হাতড়াতে হাতড়াতে উঠোনের দিকের দরজাটা খুলে ফেলল। হলরুমের অন্ধকার বাইরের রাতের অন্ধকারের চেয়ে বেশি ঘন। সেজন্য উঠোনে নামার জন্য সবুজ হয়ে যাওয়া চারটে সিঁড়ি বরং আবছা হলেও দেখা যাচ্ছিল। ডান দিকের নাপিত পরিবার এবং আরব পরিবারের ঘরটার খড়খড়ি দিয়ে দুর্বল আলো এসে পড়েছে উঠোনে। উঠোনের এই পাশ থেকেই অন্য প্রান্তে মাটিতে কিংবা নিজেদের বিষ্ঠার স্তম্ভের ওপর ঘুমিয়ে থাকা মুরগিগুলোর ছোপ ছোপ রং আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মুরগির খাঁচার কাছে পৌঁছে জ্যাক জাল ঘেরা আচ্ছাদনের ওপর হাত রাখতেই মৃদু কককক শব্দ শুরু হয়ে গেল। তখনই তার নাকের সামনে ঝাপটা মারল বিষ্ঠা থেকে বের হয়ে আসা বমি উদ্রেককারী উষ্ণ দুর্গন্ধ। মাটি লাগোয়া জাফরির দরজা খুলে নিচু হয়ে ভেতরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই ভেতরের নরম এবং আঠালো পদার্থের ওপর হাত পড়ল। তখনই জ্যাক ছিটকে পিছিয়ে এসে হাত বের করে নিয়ে এল। দোদুল্যমান খাঁচাটায় মুরগিগুলোর পাখা ঝাঁপটানোর আকস্মিক শব্দ, দৌড়াদৌড়ি আর সোরগোলের কারণে জ্যাক চমকে ওঠে ভয়ে। তবু তাকে মন শক্ত করতেই হবে। কারণ তাকে অন্যদের থেকে বেশি সাহসী বলে পদবী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই আবর্জনাময় অন্ধকার জায়গার মুরগিগুলোর ভেতর জেগে ওঠা হৈচৈ আর উত্তেজনায় জ্যাক ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তার পাকস্থলী উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। মাথার ওপরের পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। আকাশজুড়ে পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত তারকারাজি। তারপর এগিয়ে গিয়ে খাঁচার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে নাগালের মধ্যে প্রথম যে পাটা ধরতে পারে সেটা ধরেই একটা সন্ত্রস্ত মুরগি ছোট দরজার কাছে টেনে নিয়ে আসে। আরেক হাত দিয়ে মুরগির আরেক পা ধরে মুরগিটা খাঁচার বাইরে নিয়ে আসে। দরজার পাল্লার সঙ্গে ঘষা লেগে ইতোমধ্যে মুরগিটার কয়েকটা পালক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ততক্ষণে খাঁচার প্রায় সবগুলো মুরগির ভীত-সন্ত্রস্ত কককক শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। পাশের ঘরের বৃদ্ধ আরব লোকটা আলো নিয়ে সতর্ক অবস্থায় বের হয়ে এসে জ্যাককে দেখতে পায় এবং জ্যাক তাকে দেখে নিষ্পৃহ কণ্ঠে বলে ওঠে, আমি, এম তাহার। নানির জন্য একটা মুরগি নিতে এসেছি।

লোকটা বলে, ও তুমি! আমি ভাবলাম চোর ডাকাত কি না। বলেই লোকটা ভেতরে চলে যায়। উঠোন আবার অন্ধকারে ডুবে যায়। এবার জ্যাক দৌড়ানো শুরু করে, হাতের মধ্যে মুরগিটা ছটফট করতে থাকে। হলরুমের দেয়াল আর সিঁড়ির ধাপের সঙ্গে বাড়ি খেতে থাকে। হাতের মধ্যে মুরগিটার ঠাণ্ডা, মোটা এবং ক্রমহ্রস্ব পাদুটো নিয়ে জ্যাক আরও দ্রুত দৌড়াতে থাকে। হলরুম পার হয়ে বীরের মতো ভঙ্গিতে ঢুকে পড়ে খাবার ঘরে। দরজায় দাঁড়ানো জ্যাকের চুল উস্কোখুস্কো, উঠোনের শ্যাওলা লেগে হাঁটুর কাছে সবুজ হয়ে গেছে, মুরগিটাকে যতদূর সম্ভব নিজের শরীর থেকে দূরে ধরে আছে। তার মুখটা ভয়ে ফ্যাকাশে। জ্যাকের বড় ভাইকে শুনিয়ে নানি বললেন, দ্যাখ, ও তোর চেয়ে ছোট। কিন্তু ওর সাহসের প্রমাণ দিয়ে তোকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। নানি মুরগিটা নিজের হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরার আগ পর্যন্ত নিজের গর্বে নিজেকে ভালো করে প্রদর্শনের চেষ্টা করতে থাকে জ্যাক। মুরগিটা এবার হঠাৎ শান্ত হয়ে যায়। মনে হয় বুঝতে পারে, এবার আর কোনো রক্ষা নেই। নির্মম এবং সর্বশেষ হাতে এসে পড়েছে বলে। জ্যাকের ভাই নিরবে ফলার খেতে থাকে। মাঝে দু-একবার জ্যাকের দিকে তাকায় শুধু ভেংচি কাটার জন্য। তাতে জ্যাকের গর্ব এবং সন্তুষ্টি আরও বেড়ে যায়। তবে সেই সš‘ষ্টি খুব সংক্ষিপ্ত হয়। নাতিদের মধ্যে সাহসী হিসেবে একজনকে পাওয়া গেছে দেখে নানি জ্যাককে রান্না ঘরে ডাকেন মুরগিটা জবাই করার কাজে তার সঙ্গে হাত লাগাতে। তিনি ততক্ষণে ঢিলাঢালা এবং বড় একটা নীল রঙের অ্যাপ্রোন পরে নিয়েছেন। মুরগিটা এক হাতে শক্ত করে ধরে আরেক হাত দিয়ে মেঝেতে একটা মাটির গামলা রাখলেন। তার হাতে রান্নাঘরের একটা ছুরি। আর্নেস্ট মামা ওই ছুরিটাতে মাঝে মাঝে একটা লম্বা কালো পাথরের ওপর ঘষে ধার দিয়ে রাখেন। নানি জ্যাককে বললেন, ওই পাশে যা। জ্যাক রান্নাঘরের অপর প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ালে নানি দরজার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়ালেন। মনে হলো, তিনি জ্যাকের এবং মুরগিটার পথ আটকে দাঁড়িয়েছেন। পেছনের দিকে সিঙ্ক আর বামপাশে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দুরু দুরু বুকে জ্যাক উৎসর্গকারীর সুনিশ্চিত নড়াচড়া দেখতে থাকে। একটা কাঠের টেবিলের ওপরে রাখা বাতিটার নিচে প্লেটটা এগিয়ে রাখলেন নানি। মুরগিটা মাটিতে শুইয়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে তিনি মুরগির পা শক্ত করে ধরলেন যাতে ঝাঁপটাঝাঁপটি করতে না পারে। তারপর বাম হাত দিয়ে মাথাটা ধরে প্লেটের ওপরে নিয়ে এলেন। ধারালো ছুরি দিয়ে পুরুষ মানুষের যে জায়গাটাতে কণ্ঠমণি থাকে মুরগিটার ঠিক সেখানে ধীরে ধীরে কাটতে লাগলেন। মুরগির মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভয়ংকর শব্দের সঙ্গে ছুরি চালালেন। প্রবল বেগে আক্ষেপরত মুরগিটাকে তখনও তিনি খুব শক্ত করে ধরে রেখেছেন। টকটকে লাল রক্ত গড়িয়ে গামলাটাতে পড়ছে। রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে জ্যাকের মনে হলো, তার নিজের রক্ত গড়িয়ে পড়ছে; ভয়ে পা কাঁপছে। নানি বললেন, গামলাটা সরিয়ে নিয়ে যা। জ্যাকের মনে হলো, নানি অনেক দীর্ঘ সময় পর কথা বলছেন। মুরগিটার রক্ত পড়া তখন বন্ধ হয়ে গেছে। জ্যাক গামলাটা সযত্নে টেবিলের ওপর রাখল। গামলার ভেতরের রক্ত ততক্ষণে গাঢ় লাল থেকে কিছুটা কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। নানি মুরগিটা গামলার পাশে ধপাস করে রাখলেন। মুরগির পালক চকচকে বর্ণ হারিয়ে অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। চোখের কোঁচকানো পাতা চোখের ওপরে বন্ধ হয়ে গেছে। জ্যাক মুরগিটার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে থাকে: পায়ের নখগুলো কুঁকড়ে জড়ো হয়ে আছে। মাথার ঝুঁটিটা বিবর্ণ হয়ে শিথিল হয়ে গেছে। জ্যাক বুঝতে পারে, মৃত্যু হলো এই। তারপর সে খাবার রুমে চলে গেল।

চলবে

আগের পর্বগুলো পড়ুন

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি করা হবে না: রেল উপদেষ্টা

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকল্প গ্রহণে অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি ব্যয় পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, ক্রয়ধর্মী প্রকল্পের মেয়াদ এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি ব্যয় পরিহার করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনও প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি করা হবে না।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রেল ভবনে এক মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেল পরিচালনা ও সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।

ফাওজুল কবির খান বলেন, রেলের ইঞ্জিন ও কোচের সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত কোচ ও ইঞ্জিন সংগ্রহের জন্য চেষ্টা চলছে। এর আগে ২০০ কোচ কেনার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুততম সময়ে শেষ করতে হবে। পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানাকে অ্যাসেম্বলিং (সংযোজন) ও মেরামত কারখানায় রূপান্তর করতে হবে। এ জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।

প্রকল্প গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করার তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ক্রয়ধর্মী প্রকল্পের মেয়াদ এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে অনলাইন টিকেটিং সেবা প্রদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমকে আরও আন্তরিক ও সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেন রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

তিনি উপস্থিত সহজ ডটকমের প্রতিনিধির উদ্দেশে বলেন, টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে তাঁরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে বিদ্যমান চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যারা টিকিট কালোবাজারি করে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে রেলওয়ের একটি নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স টিম থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঈদুল ফিতরে রেলের যাত্রীসেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রেল উপদেষ্টা বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় মানুষ স্বস্তিতে ও নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পেরেছেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। এবারের ঈদযাত্রায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখতে হবে।

রেলওয়ের আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি খরচ, অর্থাৎ অপচয় কমাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনসহ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

গণহত্যা চালিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, তার ধ্বংস অনিবার্য: টুকু

বক্তব্য রাখছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলির গণহত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন- কখনোই গণহত্যা চালিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নাই। তার ধ্বংস অনিবার্য, ইতিহাস তাই বলে। আজকে মুসলমান হিসেবে শুধু নয়, একজন মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের সকল মানুষ সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ কেউ এই গণহত্যা কে সমর্থন করেনি। পৃথিবীর সকল দেশেই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হচ্ছে।

তিনি বলেন- যে শিশুটি মারা যাচ্ছে তার কি দোষ, তার কি অপরাধ? এভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এ জন্য সারা বিশ্বে ইসরায়েলির পণ্য বর্জন করছে, ঘৃণা করে প্রত্যাখ্যান করছে। এই গণহত্যা চালিয়ে যারা মনে করেছেন টিকে থাকবেন, থাকতে পারবেন না। আমরা কোন গণহত্যাকে প্রশ্রয় ও সমর্থন করবো না। আমরা ঘৃণা করে প্রত্যাখ্যান করি ও নিন্দা জানাই। এই হত্যার বিচারের দাবি জানাই। এদের বিরুদ্ধে সমস্ত বিশ্ব বাসিকে সোচ্চার হতে হবে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইলে ছাত্রদলের আয়োজনে শহীদ মিনারে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমাবেশ। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন- আওয়ামী লীগের দোসররা বিভিন্ন কায়দায় দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য মিছিলে থেকে বিভিন্ন দোকানপাটে হামলা করছে। দোকান পাটে লুটপাট করছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি করছে। আওয়ামী লীগের গণহত্যাকারী দোসরা কিন্তু মিছিলে ঢুকে এই ধরনের অপকর্মের সাথে লিপ্ত হচ্ছে। কাজেই আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। যাতে করে আমাদের সম্পদ কেউ ধ্বংস করতে না পারে।

বিএনপির এই নেতা বলেন- বাংলাদেশেও কিছুদিন আগে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিয়েছে। তারাও কিন্তু নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল। খুনি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নিরীহ ছাত্র জনতার উপরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। প্রায় ৮ জন শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে।

সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আরও বলেন- যে ব্যবসায়ীটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে কিন্তু আমাদের ভাই। যে দোকান ভাঙচুর করা হচ্ছে সেটিও আমাদের ভাইয়ের দোকান। কাজেই আমরা কোন ধরনের বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেব না। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সে জন্য সর্বোচ্চ সচেতন থেকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাব। এই গণহত্যা বন্ধের জন্য আমাদের যা যা করা প্রয়োজন আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।

এ সময় টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দূর্জয় হোড় শুভর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এম এ বাতেনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু প্রমুখ। 

Header Ad
Header Ad

বিদেশি বিনিয়োগের এমন অনুকূল পরিবেশ আগে কখনো ছিল না: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এত অনুকূল পরিবেশ আগে কখনো সৃষ্টি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনা বিনিয়োগকারীদের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বিনিয়োগকারীরা এই বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন।

বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, "গত আট মাস ধরে আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ করতে কাজ করছি। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এখানে আগের মতো এত সুবিধাজনক পরিবেশ কখনো ছিল না।" তিনি আরও জানান, বিদেশি বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে বাণিজ্য, শ্রম এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত নানা সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যা বাংলাদেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, চীনা ও দক্ষিণ কোরীয় বিনিয়োগকারীদের সাথে নিয়মিত প্রাতঃরাশ সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তারা বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেকোনো উদ্বেগ তুলে ধরতে পারবেন এবং দ্রুতগতিতে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করার সুযোগ পাবেন।

এছাড়া, তিনি বলেন, "বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) প্রতি মাসে চীনা এবং কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক আয়োজন করবে। আমি নিজেও কিছু বৈঠকে যোগ দেব এবং বিনিয়োগকারীদের উত্থাপিত সমস্যাগুলো শোনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করব।"

প্রধান উপদেষ্টা একটি হটলাইন এবং কল সেন্টার সেবা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেকোনো সমস্যা দ্রুততার সাথে সমাধান করতে পারেন।

এ সময় বৈঠকে অন্তত ৩০ জন চীনা বিনিয়োগকারী অংশ নেন, যারা বিভিন্ন খাতে—যেমন অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পরিবহন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেক্সটাইল, মোবাইল টেলিযোগাযোগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সরবরাহ এবং আইটি পরিষেবা—বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

ড. ইউনূস বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সাথে সাম্প্রতিক বৈঠকের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট শি শীর্ষ চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সময় চীনা বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামে একটি ডেডিকেটেড চীনা ইকোনমিক জোন এবং মংলায় চায়নিজ ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন, যেখানে চীন সমুদ্রবন্দর আধুনিকায়নের কাজ শুরু করবে।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, “আমাদের বাজার রয়েছে, এবং আপনি নেপাল ও ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতেও সরবরাহ করতে পারবেন।” তিনি বলেন, কয়েকটি বৃহৎ চীনা কোম্পানি ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি), লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন, বায়ু টারবাইন, এবং অফশোর সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।

এর আগে, কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের একটি দলও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি করা হবে না: রেল উপদেষ্টা
গণহত্যা চালিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, তার ধ্বংস অনিবার্য: টুকু
বিদেশি বিনিয়োগের এমন অনুকূল পরিবেশ আগে কখনো ছিল না: প্রধান উপদেষ্টা
বিরামপুরে স্কাউটস দিবস পালিত
১৩৫ সরকারি কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ
নাইজেরিয়ার বন্দুকধারীদের হামলায় ৫২ জন নিহত
এফডিসিকে পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম সিটি বানানো হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
আমি ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী ছিলাম না: আদালতে তুরিন আফরোজ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের বৈঠক
টাঙ্গাইলে বিয়ের ১৫ বছর পর একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম দিলেন গৃহবধূ
নেতানিয়াহুকে ট্রাম্প বললেন ‘তুরস্কের সঙ্গে যৌক্তিক আচরণ করবেন’
৫৪তম দেশ হিসেবে নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ চুক্তি সই করল বাংলাদেশ
লাইভে এসে ছাত্রদল নেতার বহিষ্কার চাইলেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপি সভাপতি
চালু হচ্ছে সরকারি ফার্মেসি, স্বল্পমূল্যে মিলবে ওষুধ
অভিনেত্রী মালাইকা অরোরার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ম্যাক্স ও তমা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, ইমাম গ্রেপ্তার
বদলে গেল বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ও পশ্চিম থানার নাম
ট্রেনের পাওয়ার কারে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ, শাস্তির আওতায় আসবে চালকরা