শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান

লাঠিটা ছিল মোটা বেঁটে একটা কাঠের রুলার। কালি আর দাগদাগালি ভরা। এম বার্নার্ড কোনো এক ছাত্রের কাছ থেকে শাস্তিস্বরূপ কেড়ে নিয়েছিলেন। নিজের জায়গা থেকে উঠে বালক লাঠিটা তুলে দিত এম বার্নার্ডের হাতে। তিনি একটুখানি বিদ্রুপের হাসি ছড়িয়ে লাঠিটা হাতে নিতেন এবং দুপা ছড়িয়ে দাঁড়াতেন। বালকটা শিক্ষকের হাঁটুর মাঝখানে মাথা রাখত। আর তিনি তাকে আটকে রেখে পাছায় কষে বাড়ি মারতেন। আপরাধের মাত্রা বুঝে বাড়ির সংখ্যা নির্ধারিত হতো, দুপাশে সমান সমান। এই শাস্তির প্রতিক্রিয়া ছাত্রের স্বভাবের ওপর নির্ভর করত: কেউ কেউ গায়ে বাড়ি লাগার আগেই কেঁদে ফেলত। এম বার্নার্ড দেখতেন, ছাত্র শাস্তির স্বাদ আগেই পাওয়া শুরু করেছে।

কেউ কেউ হাত দিয়ে পাছা আড়াল করার চেষ্টা করত। তখন তিনি হালকা দুচারটে বাড়ি দিয়ে আগে হাত এক পাশে সরিয়ে দিতেন। কেউ কেউ তীব্র ব্যথায় বেপরোয়াভাবে পিঠ বাঁকিয়ে তুলত। আরেক রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যেত অন্যদের বেলায়। এদের মধ্যে ছিল জ্যাক: শুধু ব্যথায় কাঁপতে থাকত, তবে মুখে কোনো রকম ব্যথার উচ্চারণ করত না। অশ্রুর বন্যা ঠেকানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যেত। এই শাস্তির সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল এর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ না ঘটা। প্রথমত এই শিশুরা প্রায় সবাই বাড়িতে আচ্ছামতো পিটুনি খেতে খেতে বড় হতো এবং তাদের সবার ধারণাই ছিল ছোটদের বড় করার জন্য মারের দরকার আছে। তাদের বড় করার এটাও একটা পদ্ধতি। আরেকটা কারণ হলো, শিক্ষক সবার প্রতি সমান নজর দিতেন। কাউকে আপন কাউকে পর মনে করতেন না। সবাই আগেই জানত, কোন আইনের বরখেলাপ হলে এরকম শাস্তি পেতে হবে। সাধারণত একই রকম অপরাধের জন্যই এরকম শাস্তি দেওয়া হতো। অর্জিত নম্বর থেকে বাদ দেওয়ার শাস্তি পাওয়ার মতো অপরাধের চেয়ে গুরুতর অপরাধ করলে এই শাস্তি পেতে হবে সেটাও সবাই জানত। সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই এমন শাস্তি দেওয়া হতো।

ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র থেকে শুরু করে সবচেয়ে খারাপ ছাত্র পর্যন্ত একই রকম শাস্তির বিধান করা হতো। জ্যাককে এম বার্নার্ড খুব ভালোবাসতেন। তবু গুরুতর কোনো অপরাধ করে থাকলে সেও এই শাস্তির শিকার হতো। দেখা যেত, আগের দিন এম বার্নার্ড তার খুব প্রশংসা করেছেন, আবার পরের দিনই তাকে এই শাস্তি পেতে হচ্ছে। একদিন জ্যাক ব্ল্যাকবোর্ডে সঠিক উত্তর লিখলে এম বার্নার্ড জ্যাকের গণ্ডদেশে আদর করে দিলেন। তখনই ক্লাসের ভেতর থেকে কে যেন ফিসফিস করে বলে উঠল, ‘স্যারের পোষা ছাত্র’। তিনি জ্যাককে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমি করমারির প্রতি পক্ষপাতি। তোমাদের মধ্যে যারা যুদ্ধে বাবাকে হারিয়েছ তাদের সবার প্রতিই আমি সম মাত্রায় পক্ষপাতি। আমি তাদের বাবাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, আমি বেঁচে এসেছি। কাজেই এখানে আমি আমার প্রয়াত বন্ধুদের জায়গায় নিজেকে দেখতে চেষ্টা করি। এরপর যদি কেউ বলতে চাও আমার ‘পোষা’ ছাত্র আছে তাহলে উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলো। তার এই কথার উত্তরে শুধু নীরবতা ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না। দিনের শেষে জ্যাক জিজ্ঞেস করেছিল, কে তাকে স্যারের পোষা বলে আখ্যা দিয়েছিল। এরকম অপমান নীরবে মেনে নেওয়া মানে সম্মানের হানি করা।

আমি বলেছিলাম, মুনোজ নামের একটা শ্বেতাঙ্গ থলথলে চেহারার বিরস মুখের ছেলে উত্তর দিল। সে অবশ্য সব সময় সবার সামনে নিজেকে জাহির করার মতো ছেলে নয়। তবু সব সময় জ্যাকের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করত।

জ্যাক বলল, ঠিক আছে। তাহলে তোর মা একজন বেশ্যা। কাউকে অপমান করার মতো বহুল প্রচলিত মন্তব্যের অন্যতম ছিল তার মা সম্পর্কে কিংবা মৃত কোনো আত্মীয় সম্পর্কে এরকম মন্তব্য। স্মরণাতীত কাল থেকে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এলাকায় প্রচলিত এরকম কটু মন্তব্য বিবাদী দুপক্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে সংঘর্ষের সূচনা করে দিতে পারে। তবু মুনোজ যেন কিছুটা দ্বিধায় পড়ে রইল। কিন্তু প্রচলিত নিয়ম তো অন্য কিছুর সঙ্গে আপোষ করবে না। অন্যরা তার হয়ে কথা বলতে লাগল, ঠিক আছে, দেখা হবে সবুজ মাঠে। সবুজ মাঠ মানে একটা পড়ো জায়গা। তাদের স্কুল থেকে খুব দূরে নয়। ফেলে দেওয়া লোহার বলয়, টিনের কেনেস্তারা, মরচেপড়া পিপা বোঝাই এবং মামড়ি-পড়া রুগ্ন ঘাস গজানো একটা জায়গা। এখানেই ডোনাদগুলো সংঘটিত হতো। ডোনাদ মানে দ্বন্দ্বযুদ্ধ। এখানে তরবারির জায়গায় থাকে শুধু যোদ্ধার মুষ্টি। তবে তরবারি যুদ্ধের সঙ্গে অন্য সব দিক থেকে মিল আছে এই যুদ্ধের, বিশেষ করে যোদ্ধাদের আত্মিক অবস্থার দিকে থেকে। দুজনের একজনের হয়তো সম্মানে আঘাত লেগেছে। আর সেই আঘাতের ফলে সৃষ্ট ঝগড়ার মীমাংসা করার এটা একটা পদ্ধতি।

এরকম ঝগড়ার অবশ্য অনেক কারণ থাকতে পারে: হয়তো কেউ বাবা মা কিংবা মৃত কোনো আত্মীয়কে তুলে গালি দিয়েছে, জাতি তুলে কথা বলেছে, সরাসরি না হলেও অন্যের মাধ্যমে কারো দ্বারা এরকম কোনো কটুক্তির কথা শুনেছে, কোনো জিনিস চুরি গেছে, কিংবা চুরির অপবাদ দেওয়া হয়েছে, কিংবা আরও কত কী হতে পারে, বিশেষ করে অল্প বয়সীদের সমাজে যেসব হয়ে থাকে আর কী। যখন কারো দ্বারা সরাসরি কেউ অপমানিত হয় কিংবা অন্যের মুখে শুনে থাকে তৃতীয় কোনোজন তাকে এরকম অপমানের কথা বলেছে তখন সেটার একটা হেস্তনেস্ত হতেই হবে। আর মীমাংসার প্রচলিত চ্যালেঞ্জটা হলো, বিকেল চারটেয় সবুজ মাঠে। চ্যালেঞ্জ একবার ঘোষণা হয়ে গেলে মুখে মুখে ছড়ানো উসকানিমূলক কথাবার্তা আপাতত বন্ধ থাকে এবং সব ধরণের চাপা কানাঘুষাও থেমে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন একজন আরেকজনের থেকে দূরে দূরে থাকে এবং তাদের চারপাশে নিজ নিজ বন্ধু-সহচররা ঘুর ঘুর করতে থাকে।

পরবর্তীতে যেসব ক্লাস হয় সেখানে এক বেঞ্চ থেকে আরেক বেঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বী দুজনের নাম দ্রুত ছড়াতে থাকে। অন্যরা তাদের দিকে আড় চোখে তাকাতে থাকে। তাদের কারণে পৌরুষ জাহির করার জন্য যে চাপা দৃঢ়তা প্রদর্শনের দরকার সেটা নষ্ট হয়ে যায়। তাদের এরকম মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় হলো প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার সময় যতই এগিয়ে আসে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তিও নিজের কাজকর্মে মাঝে মাঝে বেখেয়াল হয়ে যায়। কারণ তখন তো তাকে সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে হবে। তবে প্রতিপক্ষ শিবিরের কাউকে এমন সুযোগ দেওয়া যাবে না যাতে তারা তাচ্ছিল্যের ভাব দেখাতে পারে, কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি ঘোষিত সময়কে অসম্মান করেছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে। নইলে তারা ওকে ‘শালা কাপুরুষ’ বলে গালি দিতেও ছাড়বে না।

মুনোজকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে জ্যাক তার পৌরুষ জাহির করেছে ঠিকই, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে-ও শঙ্কিত বোধ করেছে। আগেও যখন এরকম সংঘর্ষপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তখনও শঙ্কিত বোধ করেছে। তবে সময় মতো আবার একাই পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার সে নিয়ে ফেলেছে, এখন আর ফেরার প্রশ্নই ওঠে না। সে জানে, এরকম পরিস্থিতির বাস্তবতা; সত্যি সত্যি যখন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তখন আগেকার সব আশঙ্কা তার নিজের হিংস্রতার বাতাসেই উড়ে যাবে। আগেও সে দেখেছে, এই হিংস্রতাই তাকে জিতিয়ে দিয়েছে। তবে নিজের এরকম হিংস্রতার কারণেই মনের ভেতর খচখচ করেছে।

সেদিন বিকেলে মুনোজের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সবকিছু প্রথা অনুযায়ীই ঘটল। যোদ্ধারা দুজনই তাদের সহযোগীদের সঙ্গে করে মাঠে হাজির হলো। তাদের দুজনের ব্যাগও তাদের সহযোগীরা নিয়ে এল। তাদের পিছে পিছে এসে হাজির হলো উৎসাহী দর্শকদের দল। যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধাদের ঘিরে তারা সবাই গোল হয়ে দাঁড়াল। যোদ্ধারা তাদের হাফ প্যান্ট এবং প্রাবার খুলে তাদের সহযোগীদের হাতে দিল। জ্যাকের উত্তুঙ্গ ভাব তার অনুকূলে কাজে দিল: প্রথমেই সে আঘাত হানল এবং আঘাতে মুনোজ পিছু হটতে বাধ্য হলো।

মুনোজ কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে জ্যাকের আঘাতটা ঠেকিয়ে দিয়ে তার চোয়াল বরাবর একটা ঘুষি মারল। তাতে জ্যাকের ভেতরের অন্ধ ক্রোধ আরো বেড়ে গেল এবং চারপাশের চিৎকার, হাসি আর দর্শকদের ভীড়ের ভেতর থেকে আসা অনুপ্রেরণায় তার ভেতরের শক্তি যেন ফুঁসে উঠল। সর্বশক্তি দিয়ে মুনোজের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুষির বৃষ্টি নামাতে লাগল সে। বিমূঢ় মুনোজের ওপরে জ্যাক কনুইয়ের একটা ভয়ঙ্কর রকমের আঘাত হানল। তারপর একটা দশাসই ঘুষি বসিয়ে দিল তার হতভাগা প্রতিপক্ষের ডান চোখের ওপরে। পুরোপুরি ভারসাম্যহীন অবস্থায় মুনোজ মাটির ওপরে পাছা ঠেকিয়ে পড়ে গেল। তার এক চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু করল। আরেক চোখ সঙ্গে সঙ্গে ফুলে উঠল। জ্যাক এরকম একটা ঘুষি চালাতেই চেয়েছিল। কেননা মুনোজের ফোলা চোখ সামনের বেশ কয়েক দিন জ্যাকের বিজয়ের প্রমাণ বয়ে বেড়াবে। তার চোখের হাল দেখে দর্শকেরা গলা ফাটিয়ে একটা উল্লাসের চিৎকার ছুড়ে দিল। মুনোজ সহজে আর উঠে দাঁড়াতে পরল না। এই ফাঁকে জ্যাকের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু পিয়েরে মুষ্টিযুদ্ধের বৃত্তের ভেতর ঢুকে পড়ে কর্তৃত্বপূর্ণ কণ্ঠে জ্যাককে বিজয়ী ঘোষণা করে দিল। তারপর জ্যাককে জ্যাকেট পরতে এবং প্রাবার কাঁধে রাখতে হাত লাগাল। দেরি না করে পিয়েরে মাঠ ছেড়ে যেতে থাকলে একদল সমর্থক তাদের পিছে পিছে যেতে থাকল। ততক্ষণে মুনোজ উঠে দাঁড়াচ্ছে। তার চারপাশে অল্প কয়েকজন সমর্থক মাত্র; সবার মুখ বিষ্ন্ন। এত বড় বিজয় এত তাড়াতাড়ি আসবে জ্যাক কল্পনাও করতে পারেনি।

বিজয়ের দ্রুততায় তার মাথা যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। চারপাশে বন্ধুদের অভিনন্দন এবং যুদ্ধের আলঙ্কারিক বর্ণনা তার কানে খুব একটা ঢোকে না। সে আনন্দিত হতে চেয়েছিল এবং হয়েছে। মনের কোন কোণায় যেন অহংকারের আকাক্সক্ষা যেন পূর্ণ হয়ে গেছে। তবু মাঠ ছাড়ার সময় পিছে ফিরে তাকিয়ে তার নিজের হাতে পরাজিত মুনোজের অন্ধকার মুখটা তার মনটাকে কেমন যেন মিইয়ে দেয়। তখন তার মনে হয়, যুদ্ধ জিনিসটা আসলে ভালো কিছু নয়: কাউকে পরাস্ত করার মধ্যে নিজে পরাস্ত হওয়ার কষ্টটাই থাকে।

চলবে...

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা

ছবি: সংগৃহীত

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াই মানেই ফুটবল দুনিয়ায় বাড়তি উত্তেজনা। স্প্যানিশ ফুটবলের এই দুই মহারথীর লড়াই কেবল মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে মিশে আছে স্পেন ও কাতালুনিয়ার জাতিসত্ত্বার লড়াই এবং রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের ইতিহাসও।

এবারের কোপা দেল রে ফাইনালে (শনিবার দিবাগত রাত ২টা, বাংলাদেশ সময়) আবার মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল ও বার্সা। তবে এবারের লড়াইয়ে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। রেফারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সেভিয়ায় ফাইনালের আগে নির্ধারিত অনুশীলন করেনি রিয়াল, সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি কোচ ও খেলোয়াড়রা। এমনকি দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজেও থাকছেন না রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। গুঞ্জন উঠেছিল, রিয়াল হয়তো ফাইনাল বয়কটও করতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা খেলবে।

এদিকে, বার্সেলোনার সামনে রয়েছে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। লা লিগায় শীর্ষে থাকা বার্সা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে। কোপা দেল রে শিরোপা তাদের ট্রেবল যাত্রার প্রথম ধাপ হতে পারে।

 

ছবি: সংগৃহীত

বার্সার জন্য দুঃসংবাদ, ইনজুরির কারণে দলের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি এই ফাইনালে খেলতে পারবেন না। তার জায়গায় শুরুতে দেখা যেতে পারে ফেরান তোরেসকে। তবে দলের বাকিরা সুস্থ ও প্রস্তুত রয়েছেন। লিগের শেষ ম্যাচে অধিকাংশ মূল খেলোয়াড় বিশ্রামে থাকায় বার্সেলোনা কিছুটা সতেজ ভাবেই নামবে মাঠে।

রিয়াল মাদ্রিদেও রয়েছে ইনজুরি সমস্যা। দলের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে চোটে পড়েছিলেন আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে। শেষ মুহূর্তে তার ফিটনেস দেখে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ডিফেন্ডার ফার্লান্দ মেন্ডি ফাইনালে থাকছেন না, এটা নিশ্চিত।

এখন পর্যন্ত সামগ্রিক এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে—১০৫ জয়। বার্সেলোনা জয় পেয়েছে ১০২ ম্যাচে। তবে কোপা দেল রে’র ইতিহাসে এগিয়ে আছে বার্সা। ৩৭ দেখায় বার্সা জিতেছে ১৬ ম্যাচ, রিয়াল ১৩টি। ৮ ম্যাচ ছিল ড্র।

তবে কোপা দেল রে’র ফাইনালে ৭ বার এল ক্লাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে রিয়াল জিতেছে ৪ বার এবং বার্সা ৩ বার।

চলতি মৌসুমে দুই দলের দুই দেখায় দুটিতেই বার্সেলোনা জয়ী হয়েছে—লা লিগায় ৪-০ এবং সুপারকোপা দে এস্পানার ফাইনালে ৫-২ ব্যবধানে।

 

স্টেডিয়াম: দে লা কার্তুহা, সেভিল
সময়: বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ২টা

 

Header Ad
Header Ad

মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার মুরাদনগরে নাঈম সরকার (১৯) নামের এক যুবককে মাদকাসক্তির কারণে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন তার বাবা মফিজুল ইসলাম। ছেলের মাদকাসক্তি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

মফিজুল ইসলাম উপজেলার কোম্পানীগঞ্জের নগরপাড় এলাকার বাসিন্দা। তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কুমিল্লা নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এক হলফনামার মাধ্যমে ছেলে নাঈমের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

হলফনামায় মফিজুল উল্লেখ করেন, নাঈম একাদশ শ্রেণির ছাত্র হলেও দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। সে মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে পরিবারে প্রতিনিয়ত অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছিল। গভীর রাতে বাড়ি ফেরা, মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিল নাঈম। পরিবারের মান-মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মফিজুল ইসলাম বলেন, "সন্তানের এমন বিপথগামী আচরণে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। বহু চেষ্টা করেও তাকে সঠিক পথে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে পরিবার ও সমাজের সম্মান রক্ষার্থে তার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।"

Header Ad
Header Ad

গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে ক্রমাগত গরম বাড়ছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং ও ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। তবে এ নিয়ে আশার খবর দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, "এবারের গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। আমরা সীমিত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের প্রজেকশনে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আশা করছি, অনেকটাই ম্যানেজ করতে পারবো।"

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টারস বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত 'জ্বালানি সংকট উত্তরণের পথ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উপদেষ্টা আরও জানান, লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা হবে। জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে হবে। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারের মেয়াদ স্বল্প হওয়ায় কাজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, "জ্বালানির ক্ষেত্রে যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগে। আমরা এমন কিছু হাতে নিচ্ছি না, যা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বকেয়া পরিশোধে। বিল পরিশোধ না করলে কোনো দেশ ব্যবসা করবে না।"

তিনি আরও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে সিস্টেম লস ৫০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাইন লিকেজ ও গ্যাস চুরির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আগামী বছর আর কোনো বকেয়া থাকবে না, শুধুমাত্র কারেন্ট পেমেন্ট দিতে হবে। ভর্তুকি বাড়বে না, বরং কমবে। আমরা যে সংকটের গহ্বরে পড়েছিলাম, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।"

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, বিট নিলামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে পুনরায় রি-টেন্ডার করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
অন্য নারীতে মজেছেন সৃজিত! মিথিলা কোথায়?
৪ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন ১০ বছরের অটিস্টিক শিশু আহমাদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়: আলী রীয়াজ
১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর, যা বললেন বিসিবি সভাপতি
কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান সেনা
বাইরে থেকে ফিরেই ঠান্ডা গোসল? সাবধান! এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারত পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি
আইন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
নিজ দেশেই বিমান হামলা চালালো ভারত, ‘অসাবধানতা’ বলছে বিমান বাহিনী
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি
আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে যা বললেন ডা. তাসনিম জারা