সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতারা মানবতার ছবক শেখায়: প্রধানমন্ত্রী
কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে, আমাদের স্যাংশন দেয়। তারা তো খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। তারাই আমাদের মানবতার ছবক শেখায়। যারা আমার বাবা-মা, নারী ও শিশু হত্যা করেছে তাদেরকে তারা রক্ষা করে। আমার প্রশ্ন আমাদের মানবাধিকার কোথায়? তার কি জবাব আমরা পাব? যারা খুনিদের লালন-পালন করল অর্থাৎ যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী খুনি বা জঙ্গি সন্ত্রাসী তাদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর মামলা করার অধিকার ছিল না উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের মামলা করাও অধিকার ছিল না। কারণ ইনডেমনিটি দিয়ে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছে। খুনিদের রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমান নিজে উদ্যোগী হয়ে লিবিয়াতে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টকে অনুরোধ করে তার মাধ্যমে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির সঙ্গে কথা বলে খুনিদের সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পরে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করেছে। সে যদি খুনি না হবে ষড়যন্ত্রকারী না হবে তাহলে খুনি মোস্তাক তাকে সরবরাহ করবে কেন? আর সে এই খুনিদের কেন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবে?
তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন খুনি পাশা এবং হুদাকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল করেছিলেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি (প্রগস)। আর জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে দিয়ে ফ্রিডম পার্টি গঠন করায়। খালেদা জিয়া তো আরও এক ধাপ উপরে। খুনি ফারুক, রশীদ এবং হুদা তাদের নির্বাচনে প্রার্থী করে। ফারুক জিততে পারেনি সেখানকার প্রশাসন তাদের কথা মানেনি বলে। খুনিদের নির্বাচিত করে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতা বানায় খালেদা জিয়া। এরা কী করে অস্বীকার করবে এই হত্যাকাণ্ডের ষড়ন্ত্রের সঙ্গে জড়িত না?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি। আন্দোলন হয়, খালেদা জিয়া বাধ্য হয় পদত্যাগ করতে। ৩০ মার্চ পদত্যাগ করে। জুন মাসে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করতে পারে বলেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতে সক্ষম হই। সেটা বাতিল এত সহজ ছিল না। আপনারা খোঁজ করে দেখবেন সেদিন খুনিদের পক্ষে কারা কারা দাঁড়িয়েছিল। কোন কোন আইনজীবী সেটা একটু খোঁজ করে দেখবেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যেদিন বিচারের রায় হবে সেদিন বিএনপি হরতাল ডেকেছিল খুনিদের বাঁচাতে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সব বিচারকাজ বন্ধ করে। আমরা যখন আবার ক্ষমতায় এসে বিচারের জন্য আপিল করি তখন কত বিচারক। বিচারকদের তালিকায় লেখা আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক কোর্টে গেলে তারা বিব্রত বোধ করেন। মানে তারা এই বিচারের রায় দিতে পারবেন না। তোফাজ্জেল হোসেন সাহেব রায় দিয়েছিলেন বলেই খুনিদের ফাঁসি দিতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে আমাদের স্যাংশন দেয় তারা তো খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। খুনি রাশেদ ছিল কমান্ডিং অফিসার। যে মিন্টু রোডের অপারেশনে কমান্ডিং অফিসার ছিল। অপারেশনে রাশেদ, শাহরিয়ার এবং মাজেদ ছিল। মাজেদকে আনতে পেরেছি। রাশেদ আমেরিকায়। বারবার আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেছি এখনও তাকে তারা দিচ্ছে না। তাকে তারা লালন-পালন করে রেখে দিচ্ছে। নূর কানাডায়। এদের কাছ থেকে আমাদের মানবতার ছবক নিতে হয়। তারা আমাদের মানবতার ছবক শেখায়। যারা আমার বাবা-মা, নারী, শিশু হত্যা করেছে। তাদেরকে তারা রক্ষা করে। রশীদ লিবিয়াতে পড়ে থাকে মাঝে মাঝে পাকিস্তানে যায়। ডালিমের খোঁজ পাকিস্তানের লাহোরে আছে এতটুকু জানি। কিন্তু খুব বেশি খবর পাওয়া যাচ্ছে না। মোসলেম উদ্দীন ভারতের আসামে কোন অঞ্চলে ছিল তা জানার বহু চেষ্টা করেছি। তারা নাম পাল্টে ফেলেছে। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার প্রশ্ন আমাদের মানবাধিকার কোথায়? তার কি জবাব আমরা পাব? যারা খুনিদের লালন-পালন করল অর্থাৎ যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী খুনি বা জঙ্গি সন্ত্রাসী, তাদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত। বিএনপি তো তাদের মদদদাতা। বিএনপি তাদের লালন-পালনকারী। কাজেই তাদের তারা লালন-পালন করে।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কোন শক্তি নাই, আমার কোন অর্থ সম্পদ নাই, কিন্তু একটা শক্তি আছে জনতার শক্তি। সেই শক্তি দিয়ে সেই আত্মবিশ্বাস দিয়ে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম প্রমাণ দিতে হবে দুর্নীতি কোথায় হয়েছে। আমি দুর্নীতি করতে আসিনি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি।
এসএম/এসজি/