গ্যারি বেকারের বিয়ে তত্ত্ব
একা থাকার অভ্যাস বাড়ছে শিক্ষিত নারীদের, কমছে বিয়ের আগ্রহ

ছবি: সংগৃহীত
অসংখ্য শিক্ষিত নারীদের মধ্যে বাড়ছে একা থাকার অভ্যাস। হঠাৎ একা থাকা কিংবা বিয়ে করার হার কমছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্যারি বেকারের বিয়ের তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
বেকার তার তত্ত্বে বিয়েকে একটি ‘বাজার’ হিসেবে দেখিয়েছিলেন যেখানে মানুষ নিজেদের লাভ-ক্ষতির হিসাব করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দেখে বিয়ের মাধ্যমে তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা, সঙ্গ এবং সন্তান পালনের সুযোগ কতটা বৃদ্ধি পাবে। যদি ক্ষতির চেয়ে বিয়েতে লাভ বেশি হয় তবে তারা বিয়েতে আগ্রহী হয়।
একজন আদর্শ নারীর উদাহরণ হলো- তরুণ, শিক্ষিত এবং উপার্জনক্ষম। তবে পুরুষের তুলনায় তার উপার্জন বেশি হওয়া চলবে না। এই ধাঁচ ‘ডক্টর বউ’ নামে পরিচিত। তবে পাকিস্তানের স্বাধীন ও উচ্চশিক্ষিত নারীরা যারা হয়তো দেশের বাইরে থাকেন এবং পুরুষদের চেয়ে বেশি উপার্জনক্ষম, বেকারের তত্ত্বকে মানতে নারাজ। পুরোনো প্রথাগত ধারণা অনুযায়ী- নারীরা ঘরের কাজ সামলাবে আর পুরুষেরা বাইরের কাজে পারদর্শী হবে। কিন্তু যদি নারী নিজেই উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষ হন, তখন বিয়ের প্রথাগত অর্থনৈতিক লাভের ধারণা আর কাজ করে না।
এই পরিস্থিতিতে একজন স্বাধীন নারীর কাছে প্রশ্ন জাগে, বিয়ে কি আদৌ প্রয়োজনীয়? তার জন্য বিয়ে লাভজনক হতে পারে কেবল সঙ্গীর আকাঙ্ক্ষা। মানুষ সামাজিক প্রাণী এবং একাকীত্বের থেকে সঙ্গের প্রয়োজন অনেক সময় বেশি গুরুত্ব পায় তার কাছে। কিন্তু যদি শুধুই সঙ্গ পাওয়া বিয়ের মূল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সঠিক সঙ্গী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় অনেক ক্ষেত্রে। বেকারের তত্ত্ব প্রাসঙ্গিক এখানেই যে, নারীরা সাধারণত তাদের সমপর্যায়ের বা তাদের চেয়ে উচ্চতর স্তরের সঙ্গী খোঁজেন। যদি একজন নারী স্নাতক ডিগ্রিধারী হন তবে তার জন্য সমান শিক্ষিত বা কর্মজীবী সঙ্গী খোঁজাই যুক্তিযুক্ত হয়ে ওঠে।
বেকার এই প্রক্রিয়াকে ‘‘পজিটিভ অ্যাসারটেটিভ মেটিং’’ বলে অভিহিত করেছেন, যেখানে সমপর্যায়ের মানুষরা একে অপরের সঙ্গে বিয়ে করেন। পাকিস্তানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষিত নারীরা এখন সঙ্গী নির্বাচনে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মূল্যবোধকে বেশি গুরুত্ব দেন। অন্যদিকে, “প্রসপেক্ট থিওরি” অনুসারে, নারীরা বিয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং ক্ষতিগুলির ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে আর্থিকভাবে স্বাধীন নারীরা অনেক সময় সম্পর্কের ঝুঁকি এড়িয়ে চলেন, কারণ তাঁদের কাছে একাকীত্ব অনেক নিরাপদ ও আরামদায়ক মনে হয়।
বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ‘The Atlantic-এ ‘The People Who Quit Dating’ শিরোনামের একটি আলোচিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে অনেকেই সঙ্গীর সন্ধান ছেড়ে দিয়েছেন। তবে অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি কোনও 'ক্ষতি' নয়, বরং একটি “অনিশ্চয়তা”। সঠিক সময়ে সঠিক সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে শেষ পর্যন্ত, মানুষের সিদ্ধান্ত একটাই- সেই সঙ্গীকে বেছে নেওয়া, যিনি জীবনে মূল্যবোধ যোগ করবেন, যাতে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
