বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৫৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান

শুধু কি এমনই ছিল সব? সেই আদব, ওইসব খেলাধুলা, ওই রকম সাহস, পরিবার, কেরোসিনের বাতি, অন্ধকার সিঁড়ি, বাতাসের তালগাছ, সমুদ্রে জন্ম ও অভিসিঞ্চন এবং শেষে গ্রীষ্মের কঠোর পরিশ্রমই কি সব ছিল? ওইসব কিছু ছিল ঠিকই। তবে তার নিজের সত্তার গহন গোপন বলতেও একটা কিছু ছিল।

ভূতলের অপরিমেয় পানির মতো তার ভেতর থেকে একটা কিছু নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল এতগুলো বছর ধরে। ভূতলের পানি শিলাময় গোলকধাঁধার নিচে থেকে আলোর মুখ দেখে না। তবু কে জানে আবছাভাবে পৃথিবীর বিকীরণশীল কেন্দ্র থেকে কৈশিক নালির মধ্য দিয়ে গুহার কৃষ্ণ বাতাসে আলোর বিচ্ছুরণ ফেলে। তার ফলে যেখানে অন্য কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয় সেখানেও অতিভোজী ঊদ্ভিদের খাদ্যলাভ সম্ভব হয়। তার ভেতরের ওই অন্ধ নাড়া কখনো থামেনি। এখনো সে টের পায় এর অস্তিত্ব। মাটির নিচের পচা উদ্ভিদের আগুনের মতো তার ভেতরের আগুন বাইরে বেরিয়ে এসেছে। তবু ভেতরের জ্বলুনি থামেনি। বরং পচা উদ্ভিদের বাইরের ফাটল কুণ্ডলি পাকিয়ে বের হয়ে এসে ছড়িয়ে পড়েছে গাছপালার জগতে। তাতে জলাভূমির পচা উদ্ভিদের মতোই বাইরের কর্দমাক্ত ভূপৃষ্ঠও একই গতি ও ছন্দে এগিয়ে গেছে। আর সেই অদৃশ্য ঢেউগুলো দিনের পর দিন তার সবচেয়ে ভয়াবহ এবং প্রচণ্ড কামনা বাসনার জন্ম দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আরও জন্ম দিয়েছে সবচেয়ে ঊষর দুশ্চিন্তা, সবচেয়ে ফলপ্রসু স্মৃতিকাতরতা, তার আকস্মিক ক্ষমতাহীনতা ও সংযম এবং কেউ না হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

হ্যা, তার ভেতরের এই আলোড়ন এই বিশাল দেশটার সঙ্গে মানানসই হয়েই তার সঙ্গে সঙ্গে ছিল এতগুলো বছর। বালক বয়স থেকেই সে এই আলোড়নের চাপ, সামনের বিশাল সমুদ্রের এবং পেছনে সীমাহীন পাহাড়ের বিস্তৃতি, সমতলভূমি, অন্তর্জগৎ বলে পরিচিত মরুভূমি— এসবের চাপ অনুভব করেছে। সামনে পেছনের মাঝে ছিল অহর্নিশ বিপদ। সে বিপদের কথা কেউ মুখ ফুটে বলেনি। কারণ সেটাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে সবার কাছে। কিন্তু জ্যাক এর অস্তিত্ব টের পেয়েছে বিরমানড্রাইসের উঁচু খিলানের মতো ছাদ এবং সাদা রং করা দেয়ালঅলা ছোট খামারবাড়িতে থাকাকালে। সেখানে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় তার খালা ভালো করে পরোখ করেছেন পুরু কাঠের তৈরি ঝাঁপ ঠিকমতো বন্ধ করা হয়েছে কি না। সেখানে তার মনে হতো, তাকে জোর করে ফেলে দেওয়া হয়েছে যেন সে সেখানকার প্রথম বাসিন্দা কিংবা প্রথম বিজেতা। সেখানে যেন তখনও জঙ্গল জীবনের আইন বলবত। করুণা ছাড়াই ন্যায়বিচার যেন শুধু শাস্তি দিতে প্রস্তুত এবং সেই ব্যবস্থাকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ প্রচলিত প্রথাও। তার সামনের মানুষগুলোকে মনে হতো প্রলুব্ধকর তবে বিরক্তিকর, খুব কাছের কিন্তু বিচ্ছিন্ন। তাদের চারপশেই সারাদিন থাকতে হতো। কখনোবা বন্ধুত্ব কিংবা সৌহার্দ্য তৈরি হতো। সন্ধ্যার দিকে তারা সবাই যার যার বন্ধ ঘরে ফিরে যেত। সেসব ঘরে জ্যাক কখনো ঢুকে দেখেনি। ঘরে ঢোকার পথে আরেক বাধা ছিল তাদের নারীরা। তাদেরকে হয়ত কখনো দেখা হয়নি। কিংবা রাস্তা-ঘাটে দেখা হলেও পরে চেনার কোনো উপায় ছিল না, মুখের বেশিরভাগ ঢাকা থাকত বোরকায়। তাদের সাদা পোশাকের ফাঁকে দেখা যেত সুন্দর, আকর্ষণীয়, কোমল চোখ। এমনকি চাল চলনে ক্লান্ত এবং নমনীয় হলেও এলাকাজুড়ে তাদের সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে, তাদের উপস্থিতি প্রায়ই উপদ্রবের মতো মনে হতো, বিশেষ করে যখন সন্ধ্যার সময় রাস্তায় কোনো ফরাসি লোকের সঙ্গে কোনো আরব লোকের মারামারি শুরু হয়ে যেত। মারামারি অবশ্য দুজন আরবের মধ্যে কিংবা দুজন ফরাসি লোকের মধ্যেও হতে পারত। তবে সেসব ক্ষেত্রে লড়াইটাতে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতো না। রংচটা নীল রঙের ঢিলা পোশাক কিংবা বিশ্রী রঙের আলখাল্লা পরিহিত পাড়ার আরব লোকেরা চারদিক থেকে চলমান ধারার মতো ধীরে ধীরে এগিয়ে আসত। কোনো রকম উচ্চবাচ্য না করলেও গায়ে গা লাগানোর মতো ভিড়ের নিঃশব্দ ধাবমান চেহারা দেখেই মারামারি দেখতে আসা গুটিকয় ফরাসি লোক এলাকাছাড়া হয়ে যেত। আর যে ফরাসি লোকটা মারামারিতে জড়িত থাকত সে খানিক পরে দেখতে পেত, তার সামনে তার প্রতিপক্ষ তো আছেই, তার চারপাশে অগণিত দুর্বোধ্য মুখের উপস্থিতিও প্রচণ্ড জোরালো। সে যদি এই দেশে জন্মগ্রহণ না করে থাকত এবং এখানে টিকে থাকতে হলে সাহস থাকা চাই— এই সত্য যদি তার জানা না থাকত তাহলে ওই মুখগুলো তার সমস্ত সাহস বিলীন করে দিত। সে যা-ই হোক, ওই মুহূর্তে তার সামনের ভিড়ের আরব জনতা তার কাছে উচ্চবাচ্য করে কোনো রকম ভয়ভীতি দেখাত না ঠিকই। কিন্তু তাদের উপস্থিতি এবং সামনের দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে আসাটাই ছিল তার জন্য যথেষ্ট ভয়ের। আর সাধারণত ওই আরব লোকদের ভিড়ের অধীনেই চলে যেত রণক্ষেত্রের দখল। শেষে পড়িমরি করে ফরাসি লোকটা পালিয়ে বাঁচত পুলিশ আসার আগেই। মারামারি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য কে বা কারা পুলিশকে চটজলদি জানিয়ে দিত। পুলিশ এসে পারতপক্ষে মারামারিতে জড়িতদের ধরে নিয়ে যেত। জোর জবরদস্তি করে পুলিশের লোকেরা আসামিদের নিয়ে জ্যাকের জানালার পাশ দিয়ে থানার দিকে চলে যেত। তাদের চলে যাওয়া দেখে জ্যাকের মা বলে উঠতেন, বেচারা সব!

আসামিদের দুজনকে শক্ত করে বেঁধে ঘাড় ধরে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যেত পুলিশ। তারা চলে যাওয়ার পর জ্যাক বুঝতে পারত রাস্তায় সংঘর্ষ, ভয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়ে বালক জ্যাকের কণ্ঠ পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত। সেরকম কোনো রাত তার মনের ভেতর জট পাকানো শিকড়-বাকড় নিয়ে এই বিশাল এবং ভয়াবহ দেশের সঙ্গে তাকে বেঁধে ফেলতেন দেশের তাপে ফুটন্ত দিন, হৃদয় ভেঙে দেওয়ার মতো দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসা গোধূলির সঙ্গেও তাকে একাত্ব করে দিত। সেটাই ছিল দ্বিতীয় জীবনের মতো। দ্বিতীয় জীবনটাই তার বাইরের জীবনের প্রাত্যহিকতার চেয়ে যেন বেশি সত্যি বলে মনে হতো। ওই জীবনের ইতিহাস বয়ান করা যেতে পারত আবছা আকুলতা এবং শক্তিশালী অবর্ণনীয় চাঞ্চল্যে স্কুলের নিজস্ব গন্ধে, পাড়ার আস্তাবলগুলোর গন্ধে, মায়ের হাতে লন্ড্রি করতে দেওয়া কাপড়গুলোর গন্ধে, শহরের দিকের ওপরের এলাকার জুঁই, মধুমতি ফুলের সুগন্ধে, অভিধান এবং গোগ্রাসে পড়া বইগুলোর গন্ধে, বাড়ির এবং চাকরি করার সময়ের সেই দোকানের টয়লেটের কটু গন্ধে, ক্লাসের আগে কিংবা পরে একা একা দেখতে যাওয়া সুপরিসর ঠাণ্ডা শ্রেণিকক্ষের গন্ধে, তার প্রিয় সহপাঠিদের শরীরের উষ্ণতায় এবং দিদিয়েরের আনা পশমি কাপড়ের গন্ধে। বিশাল বপুঅলা মার্কোনির মা তার গায়ে বেশি করে কোলনের গন্ধ মেখে দিতেন। জ্যাক ওর খুব কাছে ঘেঁষে বসার চেষ্টা করত। পিয়েরে তার খালাদের কাছ থেকে লিপস্টিকের গন্ধ নিয়ে আসত। সবাই মিলে সে গন্ধ শুঁকে দেখত। উত্তেজনায় তাদের অবস্থা হতো কোনো বাড়িতে কামদশায় থাকা কোনো মাদী কুকুরের কাছে চলে আসা পুরুষ কুকুরের মতো। কল্পনায় তারা বুঝতে পারত, এটাই নারীর অস্তিত্বের লক্ষণ। কসমেটিক ক্রিমের মিষ্টি গন্ধে তাদের হৈচৈ, চিৎকার, ঘাম আর ধূলির জগৎ থেকে তাদের এক মার্জিত, কোমল এবং অবর্ণনীয় রকমের প্রলুব্ধকর জগতে নিয়ে যেত। লিপস্টিক সম্পর্কে তাদের মুখ থেকে বের হয়ে আসা অশ্রাব্য ভাষার খিস্তিও ওই মোহনীয় জগৎ থেকে তাদের ফিরিয়ে রাখতে পারত না। খুব ছোটবেলা থেকে শরীরের প্রতি ভালো লাগা, শরীরের সৌন্দর্য তার ভেতরে হাসির উদ্রেক করত। সমদ্রতটে দেখা নারী শরীরের প্রতি টান তার কখনো কমেনি। মনের মধ্যে অবশ্য বিশেষ কোনো জান্তব অস্বাভাবিকতা থাকত না। শরীরকে পাওয়ার মতো কোনো বাসনা তখন থাকত না। অবশ্য পাওয়ার পথও তার জানা ছিল না তখন, শুধু শরীরের ঔজ্জ্বল্যের ভেতর থাকতে ইচ্ছে করত। বন্ধুদের কারো কাঁধের সঙ্গে হেলে থেকে কিছুটা আত্মবিশ্বাসের অনুভূতির ছোঁয়া পেত। কখনো ট্রলিবাসের মধ্যে কোনো নারীর হাত তার হাতের ওপর খানিকক্ষণ রেখে দিলে ওই টানটা টের পেত সে। এই পার্থিব জীবন সবচেয়ে যে উষ্ণতাটা দিতে পারে তেমনি একটা উষ্ণতা সে পেত ওই সময়। মনে হতো, ওই প্রশান্তির মধ্যে ডুবে গিয়ে অনেকক্ষণ থেকে যায়। মায়ের কাছ থেকেও তেমনি প্রশান্তির উষ্ণতা প্রত্যাশা করত জ্যাক। কেন প্রত্যাশা করত সেই ব্যাখ্যা তার জানা ছিল না। সেই প্রশান্তি পেত না সে। পাওয়ার দুঃসাহসও ছিল না। তাদের বাড়ির কুকুর ব্রিলিয়ান্টের পাশে শুয়ে পশমের কড়া গন্ধের মধ্যে সেই প্রশান্তির উষ্ণতা পেত সে। আরও একটা অপ্রতিরোধ্য জান্তব গন্ধ পেত ব্রিলিয়ান্টের গা থেকে। সেই গন্ধের মধ্যে জীবনের একটা চমৎকার উষ্ণতা তার জন্য পুষে রাখা হয়েছে। সেই উষ্ণতা ছাড়া তার চলে না।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৫৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৫৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৫৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৫২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৫১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৫০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান:পর্ব-৪৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’