শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৫০

দ্য ফার্স্ট ম্যান

বইটা কোন পদ্ধতিতে ছাপা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে পাঠক আগেই বুঝতে পারত, ওই বই থেকে কী ধরনের এবং কতখানি আনন্দ লাভ করতে পারবে। জ্যাক এবং পিয়েরে বড় বড় অক্ষরে দুপাশে সুপরিসর মার্জিনঅলা বই পছন্দ করত না। মার্জিত রুচির পাঠকদের জন্য তেমন বই পছন্দ হলেও তাদের পছন্দ ছিল ছোট অক্ষরে টাইপ করা এবং পৃষ্ঠায় কম মার্জিন সংবলিত বই। শব্দ আর বাক্যে পুরোপুরি ঠাসা বই ছিল তাদের প্রিয়। বড় আকারের পুরনো গামলার মধ্যে অনেক পরিমাণ খাবার যেমন ভয়াবহ ক্ষুধা নিবৃত্ত করার পরও কিছু খাবার অবশিষ্ট থাকে তেমনভাবে বইয়ের মধ্যে অনেক কিছু থাকবে যা দিয়ে তাদের পড়ার ক্ষুধা নিবৃত্ত করা যায়। সুক্ষ ব্যাপার স্যাপার তাদের পছন্দ ছিল না। তারা যেহেতু কোনো কিছুই ভালো করে জানত না, তাদের সবকিছুই জানার দরকার ছিল। বইটা সুলিখিত না হলে, কিংবা ভালো বাঁধাই না থাকলেও তাতে তাদের কিছু যেত আসত না। লেখার বক্তব্য হওয়া চাই প্রাঞ্জল এবং পৃষ্ঠা ভরা থাকা চাই অত্তুগ্র ঘটনাবলী। তাহলে ওইসব বই তাদের স্বপ্নের ক্ষুধা মিটাতে পারত এবং ওইসব বই পড়ার মাধ্যমে তারা যেন একটা প্রবল ঘুমের ভেতর ডুবে যেতে পারত।

তা ছাড়া প্রত্যেক বইয়ের ছিল আলাদা আলাদা সুগন্ধ, যে কাগজের উপর ছাপা হতো অক্ষরগুলো সেই কাগজেরও গন্ধ থাকত। বইয়ের গন্ধ সব সময় খুব কোমল আর অনন্য। একেকটা বইয়ের নিজস্ব গন্ধ একেক রকম। চোখ বন্ধ করেই জ্যাক বলে দিতে পারত, বইটা নেলসন সিরিজের কি না। তখনকার দিনে নেলসন সিরিজের বই প্রকাশ করত ফাসকেল। পড়া শুরু করার আগেই একেকটা বই জ্যাককে প্রতিশ্রুতিভরা জগতে টেনে নিয়ে যেত। ওই গন্ধে জ্যাক নিজের অবস্থানের ঘরটা পর্যন্ত ভুলে যেত। বাড়ির আশপাশের এলাকা, এলাকার হৈচৈ, খোদ শহরটা এবং বাস্তবের গোটা জগৎই তার বোধ থেকে মুছে যেত। বুনো অবাধ একটা বোধ নিয়ে পড়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সামনের জগৎটা বিলীন হয়ে যেত। জ্যাক নিজেই অন্যরূপের ভেতর প্রবেশ করত। বার বার তাকে ডাকা হতো, জ্যাক, তৃতীয় বারের মতো টেবিল ঠিক কর। তবু তার চেতনা ফিরত না। আরও ডাকাডাকির পর সে টেবিল সাজাত ঠিকই, তবে তার দৃষ্টি থাকত বইয়ের দিকে। মনে হতো, সে মাতাল অবস্থায় আছে। টেবিলের কাজ সেরে বইয়ের কাছে আবার ফিরে আসত। মনে হতো, সে পড়া ছেড়ে ওঠেইনি। তারপর তাকে বলা হতো, জ্যাক খেতে বসো। খেতে বসলে তার মনে হতো খাবারগুলো বইয়ের কথাগুলোর চেয়ে ভারী, তবে অবাস্তব। খাবার শেষ করে টেবিল পরিষ্কার করে আবার পড়ায় ফিরে যেত সে। কখনো কখনো মা তার নিজস্ব জায়গায় বসতে যাওয়ার আগে তার কাছে আসতেন। মা বলতেন, লাইব্রেরি থেকে আনা। অবশ্য লাইব্রেরি কথাটা মা ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারতেন না। তিনি শুধু তার ছেলের মুখে লাইব্রেরি কথাটা উচ্চারিত হতে শুনেছেন। তার কাছে কথাটার নিজস্ব কোনো অর্থ ছিল না। তবে তিনি বইয়ের মলাটের চেহারাটা ঠিক ঠিক চিনতেন এবং তার কথার সুরে জ্যাক মায়ের দিকে না তাকিয়েই বলে উঠত, হ্যাঁ। মা জ্যাকের কাঁধের উপর ঝুঁকে থাকতেন। মা লেখার লাইনগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে বইয়ের গন্ধ নিতেন। কখনো কখনো তার লন্ড্রির কাজ করে ফোলা আঙুল বইয়ের পাতার উপর ছুঁইয়ে যেতেন যেন বুঝতে চেষ্টা করছেন, বই জিনিসটা আসলে কেমন, যেন ওই রহস্যময় চিহ্নগুলোর আরও কাছে আসতে চাইছেন, দেখতে চাইছেন ওই দুর্বোধ্য চিহ্নগুলো কীভাবে তার ছেলেকে বার বার টেনে নিয়ে যায়। তার বোধের বাইরের এক জগতে ছেলে কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছে। সেখান থেকে ফেরার সময় তার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন তিনি অচেনা কেউ। মায়ের খসখসে আঙুলগুলো মাঝে মাঝে জ্যাকের মাথায় আদর বুলিয়ে যেত। মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার নিজের জায়গায় গিয়ে বসতেন, জ্যাকের থেকে বেশ দূরে। নানি পর পর বেশ কয়েকবার আদেশ দিতেন, জ্যাক, ঘুমোতে যা। না হলে কাল সকালে দেরি হয়ে যাবে। জ্যাক উঠে দাঁড়িয়ে পরের দিনের ক্লাসের বইপত্র ব্যাগে গোছাতে শুরু করত; তবে বইটা তার বগলে ধরাই থাকত। বিছানায় মাতালের মতো ধপাস করে শুয়ে বইটা আস্তে করে পাশবালিশের নিচে চালান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত।

সুতরাং বেশ কয়েক বছর জ্যাকের অস্তিত্ব দুটো জগতের মাঝে অসমভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ওই জগৎ দুটো সে কোনোভাবেই এক করে মেলাতে পারেনি। দিনের প্রায় বারো ঘণ্টার জন্য তাকে থাকতে হতো যে জগতে সেখানে ছিল ঢোলের বাজনা, ছাত্র-শিক্ষকদের আনাগোনা, খেলাধুলা এবং পড়াশোনা। অন্যদিকে প্রাত্যহিক জীবনের দুতিন ঘণ্টা থাকতে হতো বাড়িতে, বাড়ির আশপাশের জগতে, মায়ের সান্নিধ্যে। অবশ্য শুধু গরিব মানুষের ঘুম ছাড়া আর কোনোভাবে মায়ের জগতের সঙ্গে সে নিজেকে মেলাতে পারেনি। যদিও বাড়ির আশপাশের জগৎ ছিল তার জীবনের প্রথমভাগের অংশ, তার বর্তমান এবং ভবিষ্যত ছিল লিসে। সুতরাং তার বাড়ির জগৎটা মিশে থাকত তার রাত, ঘুম এবং স্বপ্নের সঙ্গে। যে রাতে সে সিমেন্টের ওপর পড়ে গিয়েছিল তখনো কি মরুভূমির মতো হয়ে যাওয়া বাড়ির প্রতিবেশ তার সঙ্গেই ছিল?

লিসেতে কারও সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই জ্যাক তার মায়ের কথা কিংবা বাড়ির কথা বলতে পারত না। অন্যদিকে লিসের কথা বাড়ির কারও সঙ্গে বলার মতো ছিল না। প্রবেশিকা পরীক্ষার পূর্বে তার কোনো বন্ধু কিংবা কোনো শিক্ষক তার বাড়িতে কখনো আসেননি। বছরে শুধু একবার, জুলাই মাসের শুরুতে পুরস্কার প্রদানের সময় ছাড়া তার নানি এবং মা কখনো লিসেতে যাননি। সেদিন তারা লিসের বিশাল দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন পুরোদস্তুর পোশাকে সজ্জিত সব পিতামাতা এবং ছাত্রদের ভিড়ের মধ্যে। কখনো বাইরে যাবার সময় নানি সাধারণত কালো পোশাক এবং মাথায় ওড়না পরিহিত অবস্থায় যেতেন। লিসেতে যাওয়ার সময়ও সেই পোশাকই পড়তেন। বাদামী জাল আর কালো মোমের তৈরি আঙুরশোভিত হ্যাট, বাদামী রঙের গ্রীষ্মকালীন পোশাক এবং তার একমাত্র উঁচুতলাঅলা জুতা জোড়া পরে যেতেন মা। খোলা গলার কলারঅলা হাফহাতা সাদা শার্ট আর ট্রাউজার পরে যেত জ্যাক। দুটোই আগের রাতে মা খুব যত্ন করে ইস্ত্রি করে রাখতেন। তাদের দুজনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে জ্যাক তাদের লাল ট্রলিবাসের দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত। দুপুর একটার দিকে তারা যাত্রা করত। বাসের মধ্যে নানি এবং মাকে সিটে বসিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত জ্যাক। মাঝখানের কাঁচের দেয়াল ভেদ করে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকত সে। মা মাঝে মাঝে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে হাসতেন। কিছুক্ষণ পর পরই মা তার হ্যাটের কৌণিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখতেন, তার ঢিলা মোজা জোড়া নিচের দিকে নেমে যায় কি না দেখতেন এবং তার গলায় পরা পাতলা একটা মালার সঙ্গে মেরি মাতার ছোট সোনার একটা মেডেল পরোখ করে দেখতেন। দু গভার্নমেন্টে থেকে রিউ বাব আজুন পর্যন্ত পথটুকু জ্যাক তাদের দুজনের সঙ্গে বছরে একবার পাড়ি দিত। মা সেদিন একটা লোশন ব্যবহার করতেন? জ্যাক মায়ের গায়ের লোশনের সুগন্ধ নিতে নিতে হাঁটত। নানি মাথা উচু করে গর্বভরা পদক্ষেপে এগিয়ে যেতেন। পায়ে ব্যথা লাগছে বলে মা কিছু বললে নানি তাকে বকুনি দিয়ে বলতেন, কষ্ট হলেও তার বয়সের তুলনায় ছোট জুতা পড়ার অভ্যাসটা হয়ে যাচ্ছে আপাতত। তখন জ্যাক আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে দুপাশের দোকানপাট এমনকি দোকানিদেরও দেখিয়ে দিত নানি এবং মাকে। বুঝাতে চাইত, তার জীবনে এইসব চাকচিক্য এসেছে তার লিসেতে পড়াশোনা করার কল্যাণে। লিসেতে পৌঁছে দেখতে পেত বিশাল দরজা খোলা। সিঁড়ির উপর থেকে একেবারে নিচ পর্যন্ত টবের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। যেসব ছাত্র প্রথম ভর্তি হয়েছে তাদের বাবা মায়েরা প্রথম বারের মতো ওই সিঁড়ি দিয়ে প্রবেশ করবেন। রকমারি পরিবার অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে এসে উপস্থিত হতো। গরিব লোকেরা সব সময় এ রকম করেই থাকে। কারণ, তাদের সামাজিক দায়দায়িত্ব এবং আনন্দের সুযোগ খুব কমই থাকে। কাজেই যে অল্প সংখ্যক সুযোগ পাওয়া যায় সেখানে যেন অনিয়মানুবর্তিতার ঘটনা না ঘটে। ভেতরের উঠোনের মতো জায়গাটাতে ঢুকে তারা পুরনো ছাত্র এবং অভিভাবকদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বসে পড়ত। সারি সারি সুসজ্জিত অনেক চেয়ার। চেয়ারগুলো ভাড়া করা হতো নাচ এবং গানের অনুষ্ঠানের আয়োজক একটা প্রতিষ্ঠান থেকে। ঊঠোনের অন্য প্রান্তে বিশাল ঘড়িটার নিচে উঁচু জায়গার সবটুকু ফাঁকা জায়গা ভরে থাকত সাধারণ চেয়ার এবং হাতলঅলা চেয়ারে। ওই জায়গাটাও জাকজমকপূর্ণভাবে সাজানো থাকত সবুজ গাছপালার টব দিয়ে। আস্তে আস্তে বসার পুরো জায়গাটাই ভরে উঠত। বিচিত্র রকমের হালকা রঙের পোশাক পরা মানুষ, তাদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেশি। যারা আগে আসত তারা গাছের ছায়ার নিচে জায়গা নিয়ে বসত। অন্যরা আরব দেশের তৈরি বিনুনি করা খড়ের সঙ্গে প্রান্তভাগে লাল পশমী সুতোর টাসেলঅলা পাখা দিয়ে নিজেদের বাতাস করত। শ্রোতাদের যারা রোদে বসতে বাধ্য হতো তাদের মাথার উপরের সূর্য নীলাকাশটা আরও বেশি নীল করে জমাট বাধিয়ে দিতে থাকত আর নিচের দর্শকরা ভাজা এবং সিদ্ধ হতে থাকত।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান:পর্ব-৪৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

 

Header Ad
Header Ad

নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি নিহতদের পরিবারের

নিহতদের বিচারের দাবি স্বজনদের। ছবি: সংগৃহীত

আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের পরিবার। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ নামের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি উঠে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের স্বজনরা বলেন, একদল রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আরেক দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চাচ্ছে। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেওয়া যাবে না।

তারা বলেন, এই দুই হাজার হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে একজন হত্যাকারী পুলিশ কিংবা হেলমেট বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হলেও দুই হাজার জন গ্রেপ্তার হতো। কিন্তু নগণ্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মো. সিয়ামের ভাই মো. রাশেদ বলেন, এই সরকারের কাছে বেশি কিছু চাই না, ভাই হত্যার বিচার চাই। দেশে কোনো নির্বাচন দেওয়ার আগে ভাই হত্যার বিচার করুন।

নিহত সিফাতের বাবা কামাল হাওলাদার বলেন, আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন দল নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি করছে। অথচ আমাদের সন্তান হত্যার বিচারের কথা কেউ বলছে না।

নিহত সাজ্জাত হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, পুলিশ আমার ছেলেকে আশুলিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সাত মাস হয়ে গেল আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার পেলাম না। কান্না করতে করতে এখন চোখের জল শুকিয়ে গেছে। তবুও ছেলে হত্যার বিচার পাচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে তিনজন উপদেষ্টা নিয়ে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়। সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদে আছেন মো. মহিউদ্দিন, শহিদুল ইসলাম ভুইয়া এবং মো. মীর মোস্তাফিজুর রহমান। নির্বাহী পরিষদ কমিটিতে চেয়ারম্যান হয়েছেন মো. গোলাম রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল ভুইয়া। কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছে আব্দুল্লাহ আল মারুফ ও জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা। সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম মাহমুদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল হাওলাদার ও সহ সাধারণ সম্পাদক সাবিনা আক্তার রিমা।

এছাড়া কোষাধক্ষ্য হয়েছেন জারতাজ পারভীন ও সহকোষাধক্ষ্য আবু হোসেন, জনসংযোগ সম্পাদক শিল্পী আক্তার, দপ্তর সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ও সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন রাহাত আহম্মেদ খান, ক্রিয়া সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কবির হোসেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার খান পলাশ এবং সহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সাবরিনা আফরুজ সেবন্ধী।

নির্বাহী সদস্য হয়েছেন সামছি আরা জামান, মো. সাইদুল ইসলাম, মো. অব্দুল বাসার অনিক, স্বর্ণা আক্তার, রাজু আহমেদ, শাহিনা বেগম, ফারহানা ইসলাম পপি, খালেদ সাইফুল্লাহ, রাজু আহমেদ, মো. সুমন মিয়া, আহমেদ লামিয়া, পাপিয়া আক্তার শমী এবং এম. এ. মতিন।

Header Ad
Header Ad

চলন্ত বাসে ডাকাতি-যৌন নিপীড়ন: মির্জাপুর থানার এএসআই বরখাস্ত

মির্জাপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিকুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানীর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এইচএম মাহবুব রেজওয়ান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ভুক্তভোগী কয়েকজন বাসযাত্রী মির্জাপুর থানায় গিয়ে চলন্ত বাসে ডাকাতির বিষয়ে ডিউটি অফিসার মো. আতিকুজ্জামানকে অবহিত করেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় কয়েক মিনিট পর তারা থানা ত্যাগ করেন।

এছাড়া ডিউটি অফিসার তাদের নাম ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর সহ কোন তথ্যই রাখেননি তিনি। যার কারণে মামলা গ্রহণ করতে বিলম্ব হয়। এরপর ঘটনার তিনদিন পরে এক ভুক্তভোগী বাস যাত্রীর মামলা নিতে হয়েছে।

এদিকে, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান গত শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই এএসআই আতিকুজ্জামানকে মির্জাপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করেন। শনিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এএসআই আতিকুজ্জামানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এইচএম মাহবুব রেজওয়ান জানান, শনিবার আতিকুজ্জামানের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন।

Header Ad
Header Ad

ছাত্রদের নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা

ছবি: সংগৃহীত

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৬ অথবা ২৭ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল। এই দলে যোগ দিচ্ছেন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দল ঘোষণার আগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন বাহিনীর সাবেক কয়েকজন সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

নতুন দল ঘোষণা নিয়ে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের দায়িত্ব নেয়ায় জোড়ালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দলের সদস্যসচিব পদ নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। পরে আলোচনার ভিত্তিতে দলের শীর্ষ চারটি পদ মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পদগুলোতে কারা থাকছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে আরও দুটি পদের বিষয়েও প্রস্তাব এসেছে।

এর আগে, জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যুক্ত হতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাম্পেইন চালায় সংগঠনটি। এরপর ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি জনমত জরিপও চালালো হয়। সেখানে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম, লোগোসহ বিভিন্ন মতামত জানতে চাওয়া হয়। এদিকে নয়া রাজনৈতিক দলের নাম ইংরেজীতে হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি নিহতদের পরিবারের
চলন্ত বাসে ডাকাতি-যৌন নিপীড়ন: মির্জাপুর থানার এএসআই বরখাস্ত
ছাত্রদের নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা
চলন্ত বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি: পুলিশ সুপার
ময়মনসিংহে দেড় শতাধিক বিড়ালের মিলনমেলা
বিচার ও পুলিশ বিভাগের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
১৩ দিনের চীন সফরে যাচ্ছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির
২৯ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পেয়েছে ২ সদস্যের একটি অপরিচিত বাংলাদেশি ফার্ম: ট্রাম্প
ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা: প্রাণে বাঁচলেন দিতি কন্যা লামিয়া
ফাগুনের দুপুরে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
‘আমাদের অনেক বয়স হয়েছে, নবীন-তরুণরা দেশকে নতুন করে চিন্তা করছেন’
ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব: তারেক রহমান
চলন্তবাসে বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি, টাঙ্গাইলে গ্রেফতার ৩
আমরা কারো দাবার গুটি হবো না: জামায়াত আমির
গরমে স্যুট পরে এসির তাপমাত্রা কমানো বন্ধ করুন: জ্বালানি উপদেষ্টা
সেনাবাহিনীতে চাকরির সুযোগ, আবেদন শুরু ২৮ ফেব্রুয়ারি
নতুন দলের শীর্ষ ছয়টি পদ নিয়ে ‘সমঝোতা’
মিঠাপুকুরে তোপের মুখে পালিয়ে গেলেন সাব রেজিস্ট্রার
আমার মা চাইতেন না আমি বিয়ে করে সংসারী হই : পপি  
ঝিনাইদহে ৩ জনকে হত্যা, দায় স্বীকার করলো চরমপন্থী সংগঠন