হাওরে মাছের আকাল, বিপাকে কয়েক হাজার জেলে পরিবার
একসময় নেত্রকোনা জেলার বৃহত্তম হাওর ডিঙিপোতা ছিল মাছের রাজ্য। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এখান থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ চলে যেত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সেই চিত্র।
সরকারি আইন ভঙ্গ করে নিষেধাজ্ঞার সময়ে পোনা ও মা মাছ ধরার কারণে কমে গেছে মাছের উৎপাদন। তাই ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না পর্যাপ্ত মাছ। এ কারণে স্থানীয় বাজারে মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাতে হাওরের মাছের ওপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার জেলে পরিবার পড়েছে বিপাকে।
জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙিউথা হাওর বর্ষার ছয় মাস পূর্ণ থাকে অথৈ জলে। এই হাওরের দারকিনা, নানিদ, মাশুল, লাচো, কালিবাউশ, পাবদা, চিংড়ি, বাতাসি, বোয়াল, বাঁশপাতা, বাঁচা, বাঘাইড়, মাগুর, চাপিলা মাছ স্বাদে অনন্য। সেগুলোর চাহিদাও আকাশচুম্বী বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির কারণ জানতে চাইলে আধুনিক মাছ চাষ পদ্ধতি, জমিতে যথেচ্ছভাবে সারের ব্যবহার, কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, পোনা ও মা মাছ নির্বিচারে ধরা, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরার মতো প্রবণতাকে দায়ী করেছেন জেলেরা। আর এ কারণে তাদেরই ভুগতে হচ্ছে।
জেলেরা বলছেন, অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে রয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে অন্য মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় হাওর পাড়ের খুরশিমুল, সিয়াদার, বলদশি, রামপাশা, তেতুলিয়া, পুঁটিউগা, চেছরাখালি, শামপুরসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন না। মাছ না পাওয়ায় জেলে পরিবারগুলো কর্মহীনতায় ভুগছে।
খুরশিমুল গ্রামের জেলে পরিতোষ বলেন, দেশি মাছ বাঁচানির লাইগা সরহারের সাহায্য দরহার। আর অনেকে পনা ও মা মাছ ধইরা খায়। অনেকে চায়না মশারির মতো জাল দিয়া মাছের বংশ শেষ কইরা দিতাছে। সরহার যদি সুদ ছাড়া ঋণ দিতো নিজের জাল দিয়া মাছ ধরতাম। ধনীরার মতো বেক মাছ ধরতাম না।
হাওর অঞ্চলে বিলুপ্ত হতে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম স্থাপনসহ প্রচুর পরিমাণে পোনা মাছ ছেড়ে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকাবাসী। হাওরবাসী এলাকাটিকে পুনরায় দেশীয় মাছের ভাণ্ডার হিসেবে গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়া বলেন, জেলেদের পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পরিচয়পত্র পাওয়া জেলেদের মধ্যে অসহায় ও দুর্ঘটনায় পড়েছেন এমন জেলেদের সরকারিভাবে সহযোগিতা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট কাজ করছে। তবে পোনা ও মা মাছ ধরাসহ পানি শুকিয়ে মাছ ধরা এবং জমিতে যথেচ্ছভাবে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধে কৃষকদের সচেতন হতে হবে।
এসজি/