পেশাগত দক্ষতার দিকে মনযোগ দেওয়া জরুরি
কূটনৈতিকভাবে আমরা চাপের মধ্যে আছি এ কথা সত্যি। যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিককালে র্যাবের উপর একটি নিষেধাজ্ঞা এবং আরেকটি জিএসপি দিয়েছিল ২০১৩ সালে। আমরা কোনোটিরই এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা করতে পারিনি। আমরা যদি এটি পেশাগতভাবে দেখতাম অর্থাৎ রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো না হতো তাহলেই বরং ভালো ছিল। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যখনই আমরা দেখার চেষ্টা করি, রাজনীতির নাম নিয়ে ফেললেই বিষয়গুলো অনিষ্পত্তি থেকে যায়। আমরা নিজেরাও বেশ অস্বস্তিতে ভুগি। এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যের ঘাটতি ঘটায়।
আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘ কাউন্সিলে একধরনের অস্বস্তি আছে। আমরা অনেক সময় অনেক কিছু পছন্দ করি না। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যখন একটি কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য ভিন্নপথ অবলম্বনের মাধ্যমে বিষয়গুলোকে সমাধানের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে সেই বিষয়গুলোর প্রতি আমরা মনযোগী হব।
আমরা তো বিশ্ব সম্প্রদায়েরই অংশ। আমাদের অর্থনীতির যে যোগাযোগ তা বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমরা যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলি, এটিকে নিরবচ্ছিন্ন রাখব, সেক্ষেত্রে সেই বিষয়গুলো আমার মনে হয় গুরুত্বের মধ্যে নেওয়া দরকার। তার কারণ হলো— এগুলো আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের ব্যাংকগুলো যারা বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করে, সেক্ষেত্রে এলসি খুলতে গেলে তাদের যে অনুরোধ থাকে, তারা খুব সাদরে গ্রহণ করছিল না। এটি কিন্তু আমাদের ভাবমূর্তিগত সমস্যা অথবা জটিলতা সৃষ্টি করেছে। আইএমএফ থেকে আমরা যে অর্থ পাব, এর মধ্য দিয়েই কিন্তু বিশ্বাসের ঘাটতিটুকু খানিকটা দূর করার জন্য আমরা সচেষ্ট হব।
আইএমএফ আমাদের চার মিলিয়ন ডলার দেবে। আমাদের চল্লিশ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আছে, বিশ বিলিয়নের উপরে আমরা রেমিট্যান্স পাই। এগুলো সবকিছুই কিন্তু বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে নির্ভরশীল। কাজেই আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার কারণে যদি আমরা চাপে পড়ি, তাহলে সমাধানতো আমাদেরই করতে হবে। তা না হলে আমরা জাতীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু পরিশ্রম করে, বিদেশে যারা টাকা রোজগার করে, তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ করতে পারবেন না। যারা রেমিট্যান্স পাঠায় তারা বাংলাদেশেকে সম্পদ দিচ্ছে। কাজেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আসলে সমস্যা কি এবং এর সমাধান কোথায় আমাদের সেটি ভাবতে হবে।
কাজেই আমরা যদি আমাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রেক্ষাপটে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারি, সেক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তাটুকু খুব বেশি। পেশাগত দক্ষতা ও সুশাসনের যে প্রয়োজনীয়তা, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি— তাহলে আমার ধারণা চাপের যে কথাটি বলা হয় সেটি লাঘব হবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রের যে চাপ, সেটিতো বাজারভিত্তিক। আইএমএফ আমাদের সাময়িক স্বস্তি দিচ্ছে। যেখানে মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য করে খেতে হবে, সেক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কাজগুলো আমাদের যথাযথভাবে করতে হবে। যদি আমরা সেটি যথাযথভাবে করতে পারি, তাহলে আমরা যে চাপের কথা বলছি, সেটি তৈরি হবে না। কাজেই আমি মনে করি আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন জাতি হিসেবে আমাদের পেশাগত দক্ষতার দিকটিতে সবচেয়ে বেশি মনযোগ দেওয়া দরকার।
এম. হুমায়ূন কবির: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/