নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য বলা যায় না
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে ঠিকই, তবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকলে সেই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বলা যায় না। আর বিএনপিই এখানে প্রথম বিরোধী দল। তাদের কোনো প্রার্থী নির্বাচনে ছিল না।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী যেভাবে হয়রানি, নির্যাতন, হামলা, মামলার শিকার হয়েছিলেন, তাতে তারা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। আর যেখানে বিরোধী দলের প্রার্থী নেই, সেখানে সত্যিকার চয়েস (বেছে নেওয়ার সুযোগ) থাকে না। তাই এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলা যাবে না।
কয়েকটি কারণে গাজীপুরে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে বলা যায়। ২০১৮ সালে বিএনপি প্রার্থীকে মাঠছাড়া করা হয়েছিল, এবার তেমন প্রতিপক্ষ ছিল না। যেহেতু বিরোধী দলের প্রার্থী ছিল না, তাই দলীয়ভাবে অনুগত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও বাড়াবাড়ি করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে পরিবর্তনও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে বড় ভূমিকা রেখেছে। কারণ, সরকারি দলের নেতা-কর্মী বা যারাই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের মাথার ওপর ভিসানীতির খড়গটা ছিল। নির্বাচনী অপরাধে লিপ্ত হলে তারা নিজেরা ও পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন। আর এই ভিসাটা সবার কাছে আকর্ষণীয়।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে ফলাফল যে কারও পক্ষেই যেতে পারে, যা পুরোপুরি প্রার্থীদের ভোটারদের সমর্থন আদায়ের উপর নির্ভর করে। যেসব নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় সেগুলোতে ভোট পড়ার হারও বেশি হয়। পক্ষান্তরে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে বা একতরফা হলে ভোটাররাও ভোট প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। একাদশ সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী নির্বাচনগুলো যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে ভোটারদের সামনে প্রার্থী বেছে নেওয়ার অর্থপূর্ণ বিকল্প থাকে, ফলে ভোটারদের প্রদত্ত ভোট নির্বাচনের ফলাফলের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পারে।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার রদবদল হবে। সেখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। অর্থাৎ যিনি দলের প্রধান, তিনিই সরকারপ্রধান, তিনিই সংসদের প্রধান এবং তার মন্ত্রিসভার অধীনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে তা কোনোভাবেই বলা যায় না। তবে মার্কিন ভিসানীতি যেহেতু জাতীয় নির্বাচনেও প্রযোজ্য, তাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও হতে পারে। তবে নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। বরিশালে সরকারি দলের মধ্যেই বিভক্তি আছে। সেখানে শক্তিশালী বিরোধী প্রার্থী আছে। সেখানেও নির্বাচন শাক্তিপূর্ণ হবে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
মনে রাখতে হবে, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অনেকগুলো স্টেক হোল্ডার বা অংশীজন থাকে। যার মধ্যে নির্বাচন কমিশন হলো সবচেয়ে বড় অংশীজন। নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। বুঝতে হবে এটা সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কাজেই এই প্রতিষ্ঠানে সঠিক ব্যক্তি নিয়োগ পাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি যে, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে, আইনের বিধি-নিষেধের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যদি কয়েকজন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। সেক্ষেত্রে আশা করা যায় যে, আগামীতে আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পেতে পারি।
বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
আরএ/