সরকারের আচরণে সবাই অস্থির
সরকারের আচরণে সবাই খুবই অস্থির। জনগণের অবস্থা বেশ খারাপ। আমি আপনি আমরা সবাই বুঝতে পারছি। সরকার বলছেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। তাই সরকারও দাম বাড়িয়েছে। সরকারের এমন আচরণ আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার তো জনগণের জন্যই। এতদিন মানুষকে তেলে ভাজা হচ্ছিল। এখন তো সরকার মানুষকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের অবস্থা খুবই নাজুক। উচ্চ মধ্যবিত্তরা হয়তো সামলাতে পারবে। কিন্তু অবস্থাতো অত্যন্ত খারাপ।
দুই তিন মাসে অবস্থার আরও অবনতি হয়ে যাবে। বিশেষ করে অক্টোবর মাসে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। তবে এই যে মূল্যবৃদ্ধি এটি কিন্তু আইনানুগভাবে হয়নি। একটি অসুস্থ প্রক্রিয়ায় মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে একটি রিটও করেছি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তো আছেই। হতাশাও চরম আকার ধারণ করেছে বলে আমি মনে করি। মানুষের জীবনমানের ব্যাপক অবনতির আশঙ্কা করছি। এখন সরকার হচ্ছে মানুষের ভালাে মন্দ দেখার কথা। কেন যে ভালো মন্দ দেখে না। এদের মধ্যে দেখা যায় সীমাহীন উদ্ধত্য যা বাড়ছে। পরিণতি সম্পর্কে আমি জানি না তবে এখনই সাবধান না হলে আগামীতে ঘোর অন্ধকার।
সরকারের দিক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার মূল দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এ জন্য প্রায় আট বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি সেল গঠন করে। ‘দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল নামে সেলটি দেশে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর গঠিত হলেও সেলটি আছে শুধু নামেই। এটি দ্রব্যমূল্য নিয়ে পর্যালোচনাও করছে না, কোনো পূর্বাভাসও দিচ্ছে না। বোঝাই যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস দেওয়ার কাজটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সেলের পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। উপসচিব থেকে বাণিজ্যসচিব পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এ কাজ কোনো গবেষণা সংস্থাকে দিয়েই করানো উচিত।’ বাজারে এখন চাল, ডাল, তেল, চিনি, সাবান, টুথপেস্টসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেশি।
গত মে মাসের পর ডলারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি করা সব পণ্যের দাম বাড়ছে। এমন অবস্থায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে বড় সংকটে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত ছিল ঘাটতি সমন্বয়। দাম বাড়িয়ে ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়ে জনগণের ওপরের যে আঘাত হানা হয়েছে, তা সিডর–আইলার মতো ঘূর্ণিঝড়কে হার মানায়। দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করেও ঘাটতি সমন্বয় করা যেত। সরকার সেই পথে হাঁটেনি। জ্বালানি তেলের দাম গণশুনানি করে বাড়ালে তা সহনীয় থাকত। এখন যে ‘টর্নেডো’ চালিয়ে দেওয়া হলো, তাতে ভোক্তার অধিকার তছনছ হয়ে গেছে। যা রীতিমতো আইন ভঙ্গ করার শামিল। আমরা ইতিমধ্যে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি। আদালতে রিট করেছি। এর ফলাফল কী হবে জানি না। তবে সরকারকে এক সময় এর মাসুল খুব ভালোভাবেই দিতে হবে।
লেখক: সভাপতি, ক্যাব