নতুন প্রকল্প নয়, চলমান প্রকল্প দ্রুত শেষ করার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে চলমান প্রকল্পসমূহের কাজ নির্ধারিত সময়ে নিশ্চিত করা, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ব্যতীত অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই অনুশাসন যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি ইস্যু করেছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিযা স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে ১৫টি নির্দেশনা দিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল। গত ১৩ জুন ইস্যু করা হয় চিটির অনুলিপি সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের একান্ত সচিবকে দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে নতুন প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন ও সংশোধনের জন্য গাইডলাইন তৈরি করার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন একনেক সভায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নের বিষয়ে। তারপরও কোনো কোনো প্রকল্পে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। সঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। নানান অযুহাতে প্রকল্পের সময় বাড়ছে। একই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসায় নতুন করে এই নির্দেশনা জারি করা হল।
সূত্র জানায়, নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রায় এক হাজারের মতো অনুশাসন দিয়েছেন। যা বাস্তবায়ন করলে কখনো কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ত্রুটি দেখা দিবে না। কিন্তু দেখা গেছে অনেক মন্ত্রণালয় তা মানে না। তাই প্রকল্প সঠিক সময়ে হচ্ছে না। এতে বাড়ছে ব্যয়। অথচ সরকার প্রতি বছর লাখ লাখ কোটি টাকা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করছে। চলতি অর্থবছরে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের জন্যও আড়াই লাখ কোটি টাকা কোটি বরাদ্দ দিয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা সদরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। যা ২০১৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চারবার সংশোধন করে শেষ হয়নি। আবারও দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ৭৩২ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি এক যুগেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উন্নয়নমূলক প্রায় প্রকল্পের একই দশা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্প যাচাইবাছাই কমিটি কর্তৃক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে দ্রুততম সময়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম গুরুতপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, ফাষ্ট ট্যাক প্রকল্প, ও মেগা প্রকল্পসহ বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদনশীলতা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সামাজিক সুরক্ষা স্বাস্থ্য সেবার মতো অপরিহার্য প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধীকার দিতে হবে।
ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ বাস্তবায়ন না করলে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুন প্রকল্প গ্রহণকালে অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বৈততা পরিহার করতে হবে। প্রকল্প গ্রহণের সকল ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এমটিবিএফ এর বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনে আরও বলা হয়েছে-প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে নিবিড় তত্বাবধায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি(পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটিসহ ( পিএসসি) অন্য সভা যথা নিয়মে নিশ্চিত করতে হবে। জেলা প্রশাসনকে নির্ধারিত সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রত্যাশী সংস্থার কাছে ভূমি দখল হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের আগেই পূর্বের অবস্থা যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় ভিডিও চিত্র ধারণ করতে হবে। নতুন সড়ক নির্মাণে খাল ও নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণে নেভিগেশন চ্যানেল অক্ষুন্ন রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি সড়ক থেকে জলাধারে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে, অগ্নিনির্বাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরও বলা হয়েছে-একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে-তা প্রতিপালন করতে হবে। দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন কর্মকর্তা নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের গাড়ি, যন্ত্রপাতির তালিকা তৈরি করে পরিবহনপুলে জমা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত গাইড লাইনের (পরিপত্র) নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জেডএ/এনএইচবি