দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর জামাতা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বহাল তবিয়তে
বাংলাদেশের স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী । ছবি সংগৃহিত
সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর জামাতা মো:জিল্লুর রহমানের চৌধুরী এর বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি শত শত অভিযোগ। অসংখ্য অভিযোগ সত্ত্বেও তিনি এখনো স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় চাকরির ক্ষেত্রে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাকে পদায়ন করা হয় :
(১) জেলা প্রশাসক, লক্ষ্মীপুর (২০১৫ হতে ২০১৬ পর্যন্ত)
(২) জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম
(২০১৬ নভেম্বর হতে ২০১৮ অক্টোবর পর্যন্ত)
(৩) বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা (৩রা জুলাই ২০২২ হতে ১৫ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত)
(৪) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ
(২০ জুলাই ২০২৩ হতে চলমান ) এ সময় তিনি অতিরিক্ত সচিব হতে পদোন্নতি লাভ করে গ্রেট-১ কর্মকর্তা হন.
বাংলাদেশের স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর দখলে রয়েছে দেশের চব্বিশটি স্থল বন্দর। শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ স্থল বন্দর এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী। চেয়ারে বসেই শুরু করেন অনিয়ম-দুর্নীতি আর নিয়োগ বাণিজ্য। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ৫ একর জমিতে গড়ে তুলেন আলিশান বাড়ি। মালিক হয়ে যান একাধিক বিলাসী গাড়ি। শ্বশুরবাড়ি এলাকায় লালমনিরহাটে স্ত্রীর নামে একশত একর জমি কেনেন জিল্লুর রহমান। দুর্নীতির টাকায় এলাকায় সমাজ সেবা করে বেড়ান জিল্লুর রহমান। একাধিক মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান খুলে সেখানে অবৈধ আয় এর দোকান খুলে বসেছেন তিনি। আট থেকে দশ জন শিশুকে এতিম দেখিয়ে সরকারি-বেসরকারি অর্থ হাতানো শুরু করেন জিল্লুর রহমান। তার অবৈধ আয় এর অন্যতম খাত নিয়োগ-বাণিজ্য,বড় বড় প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ,টেন্ডার বাজি । আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে শত শত নিয়োগ দিতে থাকেন জিল্লুর রহমান। যাতে জনপ্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অন্য দিকে নিজ প্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষে স্বজনদের নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে পারিবারিক কেন্দ্র বানিয়ে ফেলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত দুই মাসের মধ্যে স্থল বন্দরে নিজ পরিবারে মধ্যে যাদের চাকরি দিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
(১) আবু রায়হান চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (ট্র্যাফিক), আপন বড় ভাইয়ের ছেলে।
(২) সামিয়া আক্তার নীলা, ফায়ার হাইড্রেন অপারেটর, আপন বোনের মেয়ে।
(৩) তানভির আহমদ,ফায়ার হাউজ ড্রাইভার,আপন মেজ ভাইয়ের ছেলে।
(৪) মো. আতাউর,পাওয়ার হাউজ ড্রাইভার, আপন বড় ভাই নাতি.
(৫) মোহাম্মদ শরীফ মোল্লা, কার ড্রাইভার, আপন বোনের পালিত ছেলে।এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার নেতৃত্বদানকারী ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমা খাতুন লাভলীকে চলতি মাসের ১ তারিখে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেন। এই নেত্রী ৩রা আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে সাক্ষাৎকারের ছবি প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্থলবন্দরে একটি গাড়ি পেলেও তিনি তার দখলে রাখেন তিনটি গাড়ি। বাধ্য হয়ে বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী চুক্তিভিত্তিক ভাড়া গাড়িতে অফিস করেন। এছাড়াও একের পর এক ভৌতিক প্রকল্প দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি। জিল্লুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে বন্দরের অনেককে দিতে হয়েছে মাশুল। বদলি,কারণ দর্শানোর নোটিশ, বিভাগীয় ব্যবস্থার মত শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। তার দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতা অপব্যবহার সংক্রান্ত বিভিন্ন মহলে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হলেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর জামাতা হওয়ায় সরকার কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে বহাল তবিয়তে রেখেছেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ৩ হাজার ৪শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পসহ ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতায় জিল্লুর রহমানকে স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান পদে পদায়ন করা হয়।তিনি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নিজ ক্ষমতায় বাটা লাগতে পারে সেজন্য ৮ই আগস্ট তড়িঘড়ি করে আরো কিছু নিয়োগ-বাণিজ্য করেন।
এছাড়াও গত ৫আগস্ট সরকার পতনের দু-দিন পর রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সরকারি বাসায় সপরিবারে তার শ্বশুর সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ আত্মগোপনে ছিলেন। পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা হলে গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তার শ্বশুর লালমনিরহাট-২ আসনের এমপি সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ন্যাম ভবনের বাসার মালামাল আনতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হয় মালামাল সহ স্থলবন্দরের দুটি গাড়ি। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর থেকে আরেকটি মাইক্রোবাস যোগে বন্দরের কতিপয় নিরাপত্তাকর্মী গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাত থেকে বন্ধুর চেয়ারম্যান ও সরকারি গাড়ি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জিল্লুর রহমান বলেন।তবে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরের গাড়িচালক মাজেদুর রহমান লিটন বলেন, সোমবার দুপুরে স্যারের (জিল্লুর রহমান) গাড়িটি ন্যাম ভবনে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে স্যারদের সহায়তায় আরেক সহকর্মীকে নিয়ে ন্যাম ভবন থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে নিয়ে আসি।জিল্লুর রহমান তার শ্বশুরের মালামাল নামাতে ব্যবহার করেন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সদর দপ্তরের নিরাপত্তারক্ষী অপুসহ কয়েকজনকে। অপু বলেন, স্যাররা বলেছেন, তাই গেছি। বেশিক্ষণ ছিলাম না। লিফটের ৯ তলায় স্যারের শ্বশুরের কিছু মাল নামিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থী ও ন্যাম ভবনের স্যাররা নিষেধ করায় ১২ টার দিকে রেখে চলে আসছি।এদিকে তার শশুররে নেম ভবনের ফ্ল্যাট হতে মূল্যবান গহনা, বস্তা ভর্তি টাকা ও মূল্যবান দ্রব্যাদি ইস্কাটন রোডের ১ নম্বর গেইটের রজনীগন্ধা ভবনের ৫ তলায় তার নির্ধারিত সরকারি ফ্লাটে নিজ হেফাজতে সরিয়ে রাখার অভিযোগও রয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, গ্রেট-১(পরিচিতি নং-৬১০৩) এর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিল করা হলেও তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এতই প্রভাবশালী ছিলেন যে অভিযোগটি দুদক আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সাহসও পর্যন্ত পায়নি।
এই অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে জানার জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায় নাই।