আলাপচারিতায় আ. ফ. ম রুহুল হক
ছাত্রজীবনের আন্দোলন 'পদ্মা সেতু বানাতে হবে'
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। পদ্মা সেতুর কারণে বদলে যাবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা। শিল্পায়নের বিপ্লব ঘটবে। বাড়বে মানুষের জীবন যাত্রার মান। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম দুই স্থলবন্দর ভোমরায ও বেনাপোলের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে গতি। পদ্মা সেতু কি ধরনের বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে- সে নিয়েই ঢাকাপ্রকাশ-এর পক্ষ থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন ঢাকাপ্রকাশের প্রতিবেদক।
গত ১৬ জুন (বৃহস্পতিবার) সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আ. ফ.ম.রুহুল হক ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে আলাপচারিতায় পদ্মা সেতুর কারণে কি ধরণের পরিবর্তন আসবে সেসব বিষয়ে নানান কথা বলেছেন। 'পদ্মা সেতু বানাতে হবে' এজন্য ছাত্রজীবনে আন্দোলন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের সাতক্ষীরা- ৩ আসনের সংসদ সদস্য আ.ফ.ম রুহুল হক। তাছাড়া এই সেতু জাতীয় অর্থনীতিতে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখবে বলেও মনে করেন সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
৭৮ বছর বয়সী এই আওয়ামী লীগ নেতা পদ্মা সেতুর বহুমাত্রিকতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, একদিন হয়তো ট্রেনে চড়ে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে এশিয়া ছাড়িয়ে প্যারিসে চলে যাওয়া যাবে, আমাদের বয়সীরা হয়তো দেখবো না। বিষয়টি সময় সাপেক্ষ নয় বলেও জানান তিনি।
রুহুল হক বলেন, সব সড়কই তো আছে, শুধু সিদ্ধান্তের বিষয় যে, এই সুযোগ আমরা (সংশ্লিষ্ট দেশগুলো) কাজে লাগাবো কিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু যানবাহনের জন্য খুলে দিলে কীভাবে তার সংসদীয় আসনের মানুষ উপকৃত হবে, সারাদেশের মানুষ উপকৃত হবে। এমনকি এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব প্রত্যক্ষভাবে এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
রুহুল হক বলেন,পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলসহ সারাদেশের মানুষ উপকৃত হবে। এখানকার উৎপাদিত মাছসহ কাঁচা পণ্য আগে ফেরির অপেক্ষায় থেকে অনেকখানি পচে নষ্ট হয়ে যেতো। এখন তা হবে না। ফলে সাতক্ষীরার কৃষক বা উৎপাদনকারী উপকৃত হবেন। আবার পচে নষ্ট হওয়া পণ্যের টাকা তুলতে মধ্যসত্ত্বভোগীরা নষ্ট না হওয়া বাকি ভালো পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিতেন শহুরে ক্রেতার কাছ থেকে। সেতু হওয়াতে এখন পণ্য পচবে না, তাই শহুরে ক্রেতাকে বাড়তি পয়সাও দিতে হবে না৷ তার মানে শুধু দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে তা নয়, রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষই উপকৃত হবে।
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগে মাছসহ কাঁচাপণ্যের পচন ঠেকাতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার হতো। ফলে ভোক্তার স্বাস্থ্যহানী হতো। এখন পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়াতে ফেরিতে পড়ে থেকে কাঁচা পণ্য পচে নষ্ট হওয়ার কারণই নেই, তাই ফরমালিন দিয়ে মানুষের স্বাস্থ্যহানীর ঝুঁকিও নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যগত এই উপকারিতার কথাতো অর্থনীতির হিসেবে আসবে না। তাই পদ্মা সেতু জাতীয় অর্থনীতিতে যা অবদান রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে, বাস্তবে তারচেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা অতিমারিতে করণীয় নিয়েও কথা বলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে কমিটির সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়েও কথা বলেন তিনি। এছাড়া তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে 'কক্সবাজার ঘোষণাপত্র' নিয়েও কথা বলেন এই সংসদ সদস্য।
করোনাকালে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকলে বাড়তি কী উদ্যোগ নিতেন বা কোন উদ্যোগটি এড়িয়ে যেতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আ. ফ. ম রুহুল হক বলেন, করোনার শুরুর দিকে পূর্বানুমানটা (ফরকাস্টিং) আরও যথাযথভাবে করতাম। তবে করোনা ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রী নিজে তদারকি করেছেন বলেই পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের চেয়ে আমাদের দেশে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। করোনায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক তাদের মতামত নিয়েছেন বলেও জানান আ. ফ. ম রুহুল হক।
এনএইচবি/এএজেড