পদ্মা সেতু/ সংকটে পড়ার শঙ্কায় ঘাট নির্ভর মানুষ
আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর সব অপেক্ষার অবসান। খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলবে যানবাহন। থাকবেনা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি।
অন্য দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাওয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটকে কেন্দ্র করে যে মানুষগুলো বছরের পর বছর জীবন-জীবীকা নির্বাহ করে আসছে তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। প্রতিদিন শত শত বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার আর মোটরসাইকেলের ভিড়ে যখন ফেরিঘাট ছিল মুখোরিত। সেই ঘাটে এখনই শূন্যতার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সেতু চালুর সময় যত নিকটে আসছে আসছে ঘাট কেন্দ্রিক কর্মজীবী মানুষের চিন্তার ভাঁজটা ততই গভীর হচ্ছে।
মাওয়া ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে ঘাটে কর্মরত মানুষের কথা শুনে মনে হয়ে স্বস্তি আর আনন্দের পাশাপাশি বেশ চিন্তিত তারা।
ফেরিঘাটের জোগান রাসেল মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘‘সেতু চালু হলে এই ঘাট থাকব না। আমাদের কাজ থাকব না।’
তবে সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘাট বন্ধ হচ্ছে না। যখন পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে তখন হয়তো যাত্রী থাকবে না, তবে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করবে।
ঘাট কেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি রহিম মিয়া। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা স্ত্রী সন্তানসহ ৩ জন। পুরো পরিবার তার আয়ের উপর নির্ভরশীল। রহিম মিয়ার কাজ সেতু দেখতে আসা মানুষকে নিয়ে সেতুর কাছাকাছি ঘুরে দেখানো। ঘাট খাজনা বাদ দিয়ে তার মাসিক আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা।
রহিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই সেতু লাখ লাখ মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছে। এই সেতু শুধু সেতু না, আমাদের জন্য আর্শীবাদও। পদ্মা সেতু চালু হলেও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হবে না। সুন্দর এ সেতু দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসবেই। আর যদি ঘাটে ঘুরতেও আসে আমাদের নৌকায় মানুষ উঠতে চাইবে। তাই আমাদের ব্যবসা বন্ধ হবে না।
অন্যদিকে ঘাটপাড়ের খাবার হোটেলগুলোও পর্যটকদেরর জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। ঘাট কর্মী জামাল উদ্দিন বলেন, সেতু চালু হলে সমস্যা কি, সমস্যা তো কিছু না। এই ঘাট বন্ধ হবে অন্য ঘাটে চলে যাবো। তবে ঘাট এখনই বন্ধ হচ্ছে না। সেতু চালু হলেও অতি ভারী যানবাহন ফেরি দিয়েই পার হবে। তবে সেতু চালুর কথা শুনে অনেক লঞ্চ মালিক লঞ্চ বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই ঘাটে আগের মতো ভিড় নাই। বলতে গেলে ঘাটের যৌবন হারিয়ে যাচ্ছে।
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় উদ্বোধন হবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু দেশের উত্তর-দক্ষিণকে যুক্ত করছে এক সুতোয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সুধি সমাবেশ শেষে সেতুর উদ্বোধন করে সেতু দিয়ে পাড়ি দেবেন পদ্মা। যাবেন মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এলাকায়। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সেখানে একটি বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
এসএম/এনএইচবি/এএস