রাত পোহালেই কুমিল্লায় ভোটগ্রহণ
নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। রাত পোহালেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের গোমতী তীরের শহর কুমিল্লায়। এটি হচ্ছে এই করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। ভোটাররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। ১৫ জুন (বুধবার) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ। এই সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন তাদের মেয়াদে প্রথম কোন বড় নির্বাচন করতে যাচ্ছে। বলা যায়, এটি আউয়াল কমিশনের প্রথম পরীক্ষা।
ইতোমধ্যে নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। নির্বাচনকে ঘিরে পুরো নগরী ঢেকে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য নগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব। আছে স্ট্রাইকিং ফোর্সের টহল।
ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে কুসিক নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনী নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ভোটাররা কোন ভয় বা সংকোচন ছাড়া ভোট দিতে আসবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।
তিনি বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালিয়েছেন-তেমনি নির্বাচনের দিনও সে শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। সকলের সহযোগিতায় একটি সুন্দর নির্বাচন হবে।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। মোট কেন্দ্র ১০৫টি। নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে সংঘাতমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে মাঠে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটের দিন ২৭ ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন হাজার ৬০৮ জন সদস্য থাকবে। ৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম, ১০৫ কেন্দ্রে এক হাজার ২৬০ আনসার সদস্য ও এপিবিএনের ৫০ জন সদস্য নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়জিত থাকবেন।
অপরদিকে ভোটের আগেরদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট তিন প্রার্থী। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু কথা বলেন নিজ বাসভবনে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরজুড়ে বহিরাগতদের মহড়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল করবে না: রিফাত
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্র দখল করতে যাবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। তার দাবি বিএনপির দুই নেতা (বহিস্কৃত) প্রার্থী হওয়ায় উল্টো সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। ভোটের আগেরদিন মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোন কেন্দ্র দখল করবে না। বরং বিএনপির দুই প্রার্থীর দ্বন্দ্বে নৌকা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। আমরা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে রিফাত বলেন, ‘অন্য কেউ বিজয়ী হলে আমি ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে নিবো।’
ভোটারবিহীন নির্বাচন মেনে নিবো না: সাক্কু
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, নির্বাচনে কাকে ভোট দিবেন জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন। এখন নির্বাচনি পরিবেশের ব্যাপার। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে জনগণ কেন্দ্রে যাবে,ভোট দিবে।
মঙ্গলবার(১৪ জুন) দুপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, এর আগের নির্বাচনেও দেখেছি কেন্দ্রের সামনে ৩০০/৪০০ লোক দাঁড়িয়ে থাকে। এতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়, ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে ভয় পায়। নির্বাচন কমিশন অনেক আশ্বাস দিচ্ছে, যদি তা প্রয়োগ না হয় তাহলে আমি কি ভাবে বলবো লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড থাকবে?
নির্বাচনে যেকোনো ফলাফল মেনে নেবেন কি না- এমন প্রশ্নে সাক্কু বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই মেনে নেবো। কিন্তু ভোটাররা যদি কেন্দ্রে যেতে না পারে, ভোট দিতে না পারে... ভোটারবিহীন নির্বাচন আমি মেনে নেবো না।
কায়সার প্রার্থী হওয়ায় ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে সাক্কু বলেন, তারা (কায়সারের সমর্থকরা) কখনোই আমাকে ভোট দিতো না। এবার কায়সারের ভোট নৌকায় যাবে না, উনার ভোট উনার কাছে যাবে- এটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।
বহিরাগতদের তাড়াতে সঠিক পদক্ষেপ দাবি কায়সারের
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত রাখতে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে ‘ছড়িয়ে ছিটিয়ে’ থাকা বহিরাগতদের তাড়াতে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকার দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। মঙ্গলবার (১৪ জুন) বিকালে কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলা এলাকায় ধর্মসাগর পাড়স্থ বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।
কায়সার বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নগরীজুড়ে বহিরাগত লোকজন মহড়া দিচ্ছেন। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। বহিরাগতদের তাড়াতে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত।
ভোটের দিন সরকারি আাধা-সরকারি অফিস খোলা থাকার বিষয়টিকে ‘চক্রান্ত’ মনে হচ্ছে- উল্লেখ করে কায়সার বলেন, সিটি এলাকায় ইপিজেড রয়েছে। এখানে অসংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন। ভোটের দিন তারা যখন বের হবে তখন রাস্তায় জ্যাম হবে, ভোটারদের কেন্দ্রে আসা-যাওয়ায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই ইপিজেড-এ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হোক।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু যা ভোট পাবেন, আমি তার ডাবল পাবো আশা করি।
ভোটের মাঠ ছেড়ে না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘মৃত্যু ছাড়া কেউ আমাকে নির্বাচন থেকে সরাতে পারবে না।’
জেএস/এনএইচবি/এএস