পদ্মা সেতু-১৬
এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু ১ জুলাই
আপাতত প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা হারে টোল গুণতে হবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকেই টোল গুণতে হবে এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী যানবাহনগুলোকে। টোল আদায় হবে মোট ছয়টি পয়েন্টে।
সড়কে টোল পরিশোধ করে মাত্র ৭০ মিনিটে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পৌঁছা যাবে কোনো রকম ট্রাফিক ছাড়া। তবে সেতু অতিক্রম করার সময় সেতুর টোল গুণতে হবে পৃথকভাবে। আর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী যানবাহনকে পদ্মা সেতু ছাড়া অন্য কোনো সেতুতে অর্থাৎ বুড়িগঙ্গার উপর পোস্তগোলা সেতু, ধলেশ্বরী সেতু এবং আড়িয়াল খাঁ সেতুর উপর কোনো টোল দিতে হবে না। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে সরকার ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করে। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো রকমের সিগ্যানাল নেই। নেই কোনো স্পিড-ব্রেকার। ৮০ কিলোমিটার গতিতে এই সড়কে চলবে যানবাহন। মূল এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে রয়েছে কম গতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন। যারা টোল চাড়া চলাচল করতে চান তারা দুই পাশের লেন দিয়ে যানবাহন চালাবেন।
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হবে দেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা ‘পদ্মা সেতু’। এই সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে এখন চলচে নানারকম ব্যবস্থতা। সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই টোল আদায় শুরু হবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে। সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। ইতিমধ্যে এই এক্সপ্রেসওয়ের জন্য অর্ন্তবর্তিকালীন একটি টোল ধার্য করেছে সরকার। এক্সপ্রেসওয়ে শতভাগ নির্মাণ শেষ হওয়ার পর পরই সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এই সড়কের অর্ন্তবর্তিকালীন টোল নির্ধারণ করে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা।
কিন্তু সরকারের বিদ্যমান টোল নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটারে ১৮ টাকা ৪০ পয়সা করে টোল আদায়ের কথা। আবার টোল নীতিমালা সাত বছর পুরনো হওয়ার কারণে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ ধরে গুণিতক আসে এক টাকা ৪১ পয়সা। আর লেভেল অব সার্ভিস গুণিতক ধরা হয়েছে এক টাকা ৫ পাঁচ পয়সা। এই দুই গুণিতক হিসাবের গুণফল অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটারে ৩৩ টাকা ৭১ পয়সা করার একটি প্রস্তাব দিয়েছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
এসব প্রস্তাব নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে গত ৭ জুন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে একটি সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে সেই সভা হয়নি। এই অবস্থায় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপাতত এক্সপ্রেসওয়ের জন্য অর্ন্তবর্তি যে টোল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি বহাল রেখে এক্সপ্রেসওয়ের থেকে টোল আদায় করা হবে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় এবং এক্সেপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার ‘কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি)’কে নিয়োগ দেওয়ার একটি প্রস্তাব সম্প্রতি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিল সড়ক বিভাগ। কিন্তু গত সপ্তাহে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক না হওয়ায় প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়নি।
জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন’এর নিয়োগ চূড়ান্ত হলে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য পরিশোধ করতে হবে ৭১৭ কোটি চার লাখ ৯৯৯ টাকা।
মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, এই প্রস্তাবটি আগামী বুধবার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে সরকারের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ কেইসি’র সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করবে।
সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন,টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি অনুমোদন পেলে আগামী ১ জুলাই থেকেই ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করা হবে।
সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে এক্সপ্রেসওয়ের আব্দুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী, শ্রীনগর, মালিগ্রাম, কুলিয়ারবাজার এবং ভাঙ্গা টোল প্লাজায় টোল আদায় করা হবে। এরমধ্যে আব্দুল্লাহপুর, শ্রীনগর, মালিগ্রাম ও কুলিয়ারবাজারে থাকবে এন্ট্রি ও এক্সিজ পয়েন্ট। টোল আদায়ের জন্য এই চার পয়েন্টের প্রত্যেকটিতে দুটি করে মোট আটটি বুথ বা কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে ধলেশ্বরী ও ভাঙ্গা প্রান্তে টোল প্লাজায় বুথ বা কাউন্টার থাকবে ১২টি করে মোট ২৪টি। সব মিলিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের জন্য বুথ থাকবে ৩২টি।
আধুনিক পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবং ম্যানুয়েল পদ্ধতি ব্যবহার করে টোল আদায় করা হবে। যে পয়েন্ট থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ করবেন সেই পয়েন্টেই টোল পরিশোধ করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চারটি এন্ট্রি পয়েন্টে বুথ স্থাপনের কাজ চলছে। টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং নির্ধারিত সময় থেকেই টোল আদায় করা হবে।
এসব বিষয় জানতে চাইলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী সোমবার (১৩ জুন) রাতে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা এখন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে ব্যস্ত। যার ফলে গত ৭ জুন যে সভা হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়নি। সেতু উদ্বোধনের পর আমরা এ বিষয়ে সভা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিব। তবে এর আগে পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের জন্য যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছিল আপাতত সেটিই আদায় করা হবে।
এনএইচবি/এমএমএ/