পদ্মা সেতু-১৫
ঢাকা-বরিশাল দূরত্ব কমবে ৪ ঘণ্টা, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান
পদ্মা সেতু দক্ষিণ জনপদের ছয় জেলাকে বদলে দেওয়ার নানামুখি স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। সেতুকে ঘিরেই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা গড়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন বরিশাল তথা ওই বিভাগের অন্য পাঁচ জেলার মানুষ। পর্যটন খাত নিয়েও নদী এবং সাগর ঘেরা দক্ষিণ জনপদে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ মানুষ। বহুমুখী কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বরিশালের ছয় জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে যাচ্ছে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু। যার মধ্য দিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমানোর পাশাপাশি দূরত্ব কমিয়ে আনবে। এক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবসায়ও সম্ভাবনা জাগিয়েছে পদ্মা সেতু।
সাকুরা, হানিফ, ঈগল, গ্লোডেন লইন পরিবহণের বরিশাল অফিসের ম্যানেজাররা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে সময়ের ব্যবধানে বরিশাল থেকে রাজধানীর ঢাকার দূরত্ব কমবে কমপক্ষে চার ঘণ্টা।
বরিশাল থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দূরত্ব প্রায় ১৮৭ কিলোমিটার। এই সড়ক পাড়ি দিতে এখন সময় লাগে ছয় থেকে আট ঘণ্টা। কোনো কোনো সময় তারও বেশি বেশি সময় ব্যয় হত বরিশাল থেকে ঢাকা পৌঁছাতে। শুধুমাত্র ফেরিতে উঠতে গিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। ভোগান্তির শেষ নেই। একইভাবে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকেও ফেরিঘাটে বসে থাকত হয় ২-৩ দিন। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার ফলে এই সময় এখন কমে আসবে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায়। একই সঙ্গে দীর্ঘকালের দুর্ভোগেরও ইতি ঘটবে।
সময়ের এই দূরত্ব কমে আসার ফলে সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, কুয়াকাটা সড়কসহ ওই অঞ্চলের অন্যান্য সড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে। সড়ক পথে চাপ বাড়বে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের। এখন বেশির ভাগ যানবাহন মাওয়া প্রান্তে গিয়ে লঞ্চে যাত্রী পারাপার করে জাজিরা প্রান্ত থেকে আবার তাদের পরিবহন ধারাই যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। এটি কাটা সার্ভিস হিসেবে পরিচিত। সেতু চালু হওয়ার পর এই পরিবহনগুলোও ঢাকা থেকে সরাসরি দক্ষিলাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাবে। এর পাশাপাশি অনেক পরিবহন ইতিমধ্যে নতুন গাড়ি প্রস্তুত করে রেখেছে। যেগুলো যাত্রা শুরু করবে সেতু চালুর পর পরই।
আট ঘণ্টায় কুয়াকাটা
পদ্মা সেতু বহুমুখী সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ঢাকা থেকে যেতে এখন সময় লাগে ১২/১৩ ঘণ্টা। কখনও তারও বেশি। কিন্তু পদ্মা সেতু সেই সময় কমিয়ে আনছে প্রায় আট ঘণ্টা। কোনো রকম বিরতি ছাড়াই রাজধানী থেকে সমুদ্রের তীরে নামা যাবে ক্লান্তিহীন যাত্রার মধ্য দিয়ে।
কুয়াকাটায় এখন নতুন নতুন হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠছে। ব্যবসায়ীদের চোখেও নতুন স্বপ্ন। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
সম্ভাবনার সঙ্গী আশঙ্কাও
পদ্মা সেতু নিয়ে বরিশালের মানুষের মধ্যে যেমন উচ্ছাস আছে, তেমনি আশঙ্কাও আছে। সেতু খুলে দেওয়ার পর যানবাহনের চাপ বাড়বে ঢাকা-বরিশাল সড়কে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশে সমস্যা তৈরি না হলেও ভাঙ্গা মোড় থেকে বরিশাল এবং বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটায় যেতেই ভোগান্তির শিকার হবেন সবচেয়ে বেশি। যানবাহনের চাপে এই সড়কে যানজট লেগে থাকবে নিত্য। গতি কমবে গাড়ির। কারণ এ সড়কের প্রশস্ততা মাত্র ২৪ ফুট।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ভাঙ্গা মোড় থেকে বরিশাল এবং বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটি (বিআরটিএ) বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় বরিশালের সড়ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সভায় বলা হয়েছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পরই বরিশালের দিকে যানবাহনের চাপ বাড়বে। কিন্তু বরিশালে বাইপাস কোন সড়ক নেই।
সভায় আরও বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনাও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে, যাতে করে এই অঞ্চলের মানুষ পদ্ম সেতু সুফল পান। এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা জরুরি।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশালের সড়কে গাড়ি চলাচল বাড়বে। তাই যানবাহনের এই চাপ সামলাতে চার লেন বাস্তবায়নের আগে বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কের সোল্ডার (দুই পাশ) ৩ ফুট করে প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া মানুষ দ্রুততম সময়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দক্ষিণাঞ্চল মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
এনএইচবি/এমএমএ/