‘দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামীতে চলা কঠিন হবে’
রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারের মতো নিউমার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজারেও মাছ, গরুর মাংস, মুরগির মাংসসহ প্রায় ধরনের সবজি দাম বেশি।
ক্রেতাদের অভিযোগ,পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামীতে চলা আরও কঠিন হবে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় মুরগির মাংস ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। তবে অনেক ক্রেতার অভিযোগ কমার পরেও পূর্বের তুলনায় দাম এখনো অনেক বেশি।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ ) সরেজমিনে নিউমার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানে বিভিন্ন উৎসব ও হোটেল বন্ধ থাকায় মুরগির চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমছে। এ ছাড়া, ফার্ম থেকেও দাম কমানো হয়েছে। এ জন্য আমরাও কম দামে কিনে কম দামেই বিক্রি করছি। তবে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে মুরগির বিক্রি কমেছে।
বনলতা কাঁচাবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, দেখেন আগে ব্রয়লার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। তাতে লাভ ১০ টাকাও থাকত না। কয়েক দিন থেকে দাম কমতির দিকে। কারণ, একদিকে বিভিন্ন উৎসব, অন্যদিকে হোটেলও বন্ধ। আবার সরকারের চাপাচাপিতে ফার্ম থেকেও দাম কমিয়েছে। তাই আমরাও কম দামে কিনতে পারছি। এ জন্য কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে। এখন কেজিতে ২০ টাকা লাভ থাকছে।
মাংস ব্যবসায়ী হানিফ বলেন, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা। রমজানের আগেও এই দামে বিক্রি করেছি। তাই বাড়েনি। খামার মালিকরা সিন্ডিকেট করে মাংস বিক্রি করছে। তাই দাম বেশি। তারা কমালে দাম কমবে। আব্দুল করিম ও মোহাম্মদ আলাউদ্দীন নামে মাংস ব্যবসায়ী বলেন, ‘লন লন, খাসির মাংস ১০০০ টাকা।’ তারা আরও বলেন, ‘ঈদে আবার চাহিদা বাড়বে। তখন দামও বাড়বে।’
রূপসা চিকেন হাউজের মুরগি ব্যবসায়ী শাওন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ২০৫ থেকে ২১০ টাকা কেজি ব্রয়লার বিক্রি করা হচ্ছে। কম দামে কেনা, তাই কম দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কম হলে লাভ বেশি হয় জানিয়ে শাওন বলেন, বর্তমানে ১৮০ টাকার মতো কেনা। খরচা বাদে লাভ ২০ টাকা। আর আগে বেশি দামে থাকায় অনেকে ঘুরে ঘুরে কিনত। পাকিস্তানি ও লেয়ার মুরগি ৩৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এখন দাম কম। ঈদের আগে আবার বাড়তে পারে।
লাভলী নামে এক ক্রেতা বলেন, আগে পাকিস্থানি মুরগি ৩৫০ টাকা কেজি ছিল। বর্তমানে ৩০০ টাকার মতো। একেক দোকানে একেক রকম দাম নিচ্ছে। দাম কমলে সবার জন্য ভালো হয়। কেজিতে ৪০ টাকা কমলে অনেক। তাহলে সবাই কিনতে পারবে।
এখানকার মাছ ব্যবসায়ী মাহতাব বলেন, রুই ও কাতলা মাছ ৪০০ টাকা কেজি। ট্যাংড়া ৮০০ টাকা কেজি। নদীর কোনো মাছ নেই। রমজানের দিনে মিথ্যে কথা বলব না। রমজানে মাছের দাম বাড়েনি। যা বাড়ার আগে বেড়েছে।
অন্যান্য বাজারের মতো নিউমার্কেটেও শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি ও লেবুর হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
বনলতা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন,তাদের বাজারে দাম বেশি এটা ঠিক। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজার, কৃষিমার্কেটসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে পণ্য আনতে হয় এখানে।’
পরিবহন খরচ আছে। সঙ্গে কিছু পণ্য নষ্টও হয়ে যায়, তা ফেলে দিতে হয়। কারণ, এই মার্কেটে কোনো মরা মুরগি, পচা মাছ বিক্রি করা হয় না। এ ছাড়া, তরিতরকারিও টাটকা বিক্রি করা হয়। বর্তমানে এ মার্কেটে যে দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে তা স্বাভাবিক বলে তিনি জানান।
বনলতা বাজারে দেখা গেছে, ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা ডজন। আগে ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। এ সময় শামিমা নামে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আসলে দাম ওভাবে কমেনি। আগেও ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজন ডিম কিনতাম। এখনো প্রায় সে দামই। সরকারের তদারকি থাকলে আরও দাম কমত। দাম বাড়ার কারণে ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছি।
এদিকে নিত্যপণ্যের মতো এই কাঁচাবাজারে ফলের দামও বেশ চড়া। ফল ব্যবসায়ী হেলাল বলেন, তিউনিশিয়া খেজুর ৪৫০ টাকা কেজি বলা হলেও তা ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আম্বার খেজুর ১০০০ টাকা, ম্যাগজুইস ১২০০ টাকা কেজি। এটাই সর্বোচ্চ দাম। রমজানের আগে ১০০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। ফরিদা ৩০০ টাকা ও জিহাদী সবচেয়ে কম দামে ১৬০ কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সব পদের খেজুর রয়েছে।
তিনি বলেন, তারা বাদামতলী ফল মার্কেট থেকে বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু তিনি বাদামতলি মার্কেট থেকে ফল কেনার কোনো মেমো দেখাতে পারেননি বা দোকানের নামও বলতে পারেননি।
ফল ব্যবসায়ী হোসেনসহ অন্যরা বলেন, আপেল ২৮০, মালটা ২২০ টাকা, আঙুর ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। রোজার আগে দাম আরও বেশি ছিল। কয়েকদিন থেকে দাম কিছুটা কমছে। তবে গত রমজানের চেয়ে প্রায় সব ফলের দামই বেশি।
কলা বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, সাগর, সবরি, বাংলা কলা ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। রোজার আগেও এই দামে বিক্রি করা হতো। তবে নরসিংদীর কলার দাম একটু বেশি, ১৫০ টাকা ডজন। বিক্রিও কম হচ্ছে।
এনএইচবি/এমএমএ/