ব্রয়লার মুরগির দাম লেখা ২০০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল ৯টা। রাজধানীর অভিজাত ক্রেতাদের বাজার হিসেবে পরিচিত হাতিরপুল কাঁচাবাজার গিয়ে দেখা গেল, একাধিক দোকানে মুরগির মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। অথচ স্টিকারে দাম লেখা ২০০ টাকা। চোখের সামনে সেই স্টিকার খুলে ২১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
এই কাঁচাবাজারের ক্রেতা সাধারণত হাতিরপুল ও এর আশপাশের এলাকায় বাসিন্দারা। তারা নিয়মিত এ বাজার থেকে কেনাকাটা করেন। এ বাজারে মাছ, মাংস, সব ধরনের সবজি, ফলমূলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাওয়া যায়।
এলিট শ্রেণির কাঁচাবাজার নগরীর হাতিরপুল প্রধান সড়কের পাশে গড়ে ওঠা এই বাজারকে বলা হয়, কিছু পণ্যের দাম পূর্ব নির্ধারিত হলেও অন্য সব কাঁচাবাজার থেকে হাতিরপুল কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি। এই বেশি দাম নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগের শেষ নেই।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারের অধিকাংশ ক্রেতা চাকরিজীবী, যারা প্রতিদিন বাজার করেন না। এদের কেউ এক সপ্তাহ, কেউ ১৫ দিন আবার কেউ এক মাসের কাঁচাবাজার একসঙ্গে করে নিয়ে যায়। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত সাধারণ ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম। তবে তাদের মধ্যে যারা হাতিরপুল কাঁচাবাজারে পণ্য ক্রয় করতে আসেন তাদেরকে ক্রয় করার ক্ষেত্রে দরকষাকষি করতে দেখা যায়।
গরুর মাংস কিনতে আসা একজন নারী এনজিও কর্মী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন. ‘মাংসের দাম পূর্বনির্ধারিত হলেও অন্যান্য কাঁচাবাজার থেকে হাতিরপুল কাঁচাবাজারে যে মাংস পাওয়া যায় সেটা অপেক্ষাকৃত ফ্রেশ মাংস। তাই কিছুটা দাম বেশি। বাজার দূরে হলেও এখান থেকেই মাসিক বাজার করি।’
১১২ নম্বর মাংসের দোকানের মো. বশির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অন্যান্য বারের রমজানে যে পরিমাণ মাংস বিক্রি করেছি এবার তার ধারেকাছেও যাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। আজ সকাল ৭টায় দোকান খুলেছি এখন সকাল ১০টা অথচ মাংস (গরু) বিক্রয় করেছি দুই কেজি। মাংসের দাম কিছুটা কমেছে,এখন ৭২০ টাকা প্রতি কেজি।
কাঁঠাল বাগানের বাসিন্দা মন্নাফ মিয়া নামে একজন ক্রেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আপনি বেশ কয়েকজনকে দাম জিজ্ঞাসা করছেন এবং আমি আপনার গলায় কার্ড ঝুলানো দেখে সবজি কিনতে রিকশা থেকে নেমে এসেছি। কারণ, সাংবাদিকদের সামনে অন্তত কিছু কম দামে সবজি কিনতে পারব।’
মায়ের দোয়া খাসির মাংসের দোকানদার বিল্লাল হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রতি কেজি মাংস ১১০০ টাকা, সকাল থেকে এক কেজিও বিক্রি হয়নি। দাম বেশি তাই কাস্টমার কম। কাস্টমারদের অনেকেই দাম জিজ্ঞাসা করে না কিনে চলে যান।
বেলা সাড়ে দশটার দিকে কথা হয় মুরগির (দেশি) দোকানদার আবুল হাসান এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমি এখানে মুরগির মাংস বিক্রি করছি। দেশি মুরগির মাংস বিক্রি করছি প্রতি কেজি ৬৬০ টাকা। কয়েক দিন পূর্বে প্রতি কেজি মাংস বিক্রি করেছি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি কোনো দোকানে ২০০ টাকা আবার কোনো দোকানে ২১০ টাকা, লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা, পাকিস্তানি সোনালী কক প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা। দেশি মুরগি কোনো দোকানে প্রতি কেজি ৬৬০ টাকা আবার কোনো দোকানে ৬৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী তারেক মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সকাল হয়েছে তিন ঘণ্টা, তারপরও বিকিকিনি নাই। রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে কাস্টমার ছাড়া সকালেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছি। সব কিছুর দাম বেশি তাই কাস্টমার কম, এটা ধরেই বসে আছি।
তিনি বলেন, ফুলকপি বড় সাইজ ৪০/৫০ টাকা, পাকা টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা, চিকন লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, কয়েক দিন আগে ১০০/১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। কাঁচা মরিচ খুচরা প্রতি কেজি ১০০ টাকা। তবে পাইকারি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সাদা মরিচ প্রতি কেজি ৭০/৮০, লেবু (বড়) এক হালি ৬০ টাকা, ছোট লেবু প্রতি হালি ৫০/৫৫, শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা।
কথা হয় মাছ ব্যবসায়ী রিয়াদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, রোজার মাসে সকালে তুলনামূলক বেচাকেনা কম হয়। দশটার পর থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে কম। রুই মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৩২০ টাকা, শোল মাছ প্রতি কেজি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ও গরু মাংস কিনতে আসা একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা (অবসর প্রাপ্ত) আবুল কালাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাসার কাছে বাজার তাই নিয়মিত বাজার এখানেই করি। যদিও অনেকে বলে থাকেন এই বাজারে নাকি দাম বেশি রাখা হয়।
দাম বেশি জেনেও হাতিরপুল কাঁচাবাজারে কেন আসেন এমন প্রশ্নে তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘আরে মিয়া সুস্থ থাকতে কে না চায়, তাই বেশি দাম জেনেও অপেক্ষাকৃত ফ্রেশ পণ্যের সন্ধানে এখানে আসি।
এনএইচবি/এমএমএ/