দাম বেশি, ক্রেতা কম
দাম বেশি তাই ক্রেতা কম। বসে আছেন বিক্রেতারা। সেই অর্থে ক্রেতা নাই বললেই চলে। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে বিক্রি কমেছে। এ চিত্র রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সরেজমিন মালিবাগ কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ বিক্রেতাকেই চুপচাপ বসে আছেন।
মুরগি কিনতে এসেছেন সরকারি এক কর্মচারী। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। একেকবার দোকানিকে একেক ধরনের সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। বোঝা গেল তিনি আসলে দামে কুলাতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সরকারি কর্মচারী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সব ধরনের মুরগীর দাম আকাশছোঁয়া। এখানে এসে যেই মুরগি ধরি সেটার দামই নাগালের বাইরে। কী করব বুঝতে পারছি না।’
মুরগির দোকানি রহিম মোল্লা জানালেন, তাদেরও কিছু করার নাই। কারণ, তারাও বেশি দাম দিয়েই কিনে আনেন। বিষয়টা এমন নয় যে তারা কম দামে কিনে আনেন। আর খুচরা পর্যায়ে বেশি চাইছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে রহিম মোল্লা জানান, দাম বাড়লে ক্রেতা কমবে এটাই তো স্বাভাবিক। অনেক দিনই তো হয়ে গেল দাম বাড়তি। তাই ক্রেতাও আগের মতো পাই না।
মুরগীর দোকানের পাশেই রয়েছে সাইফুল গোশত বিতান। দোকানের একটি মূল্যতালিকা রয়েছে। সেখানে দেখা গেল, খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি এবং বকরির মাংস ১০০০ টাকা কেজি।
সাইফুল গোশত বিতানের পাশেই রয়েছে তাহের গোশত বিতান। এখানেও একটি মূল্য তালিকা রয়েছে। এখানে শুধু গরুর মাংস বিক্রি করা হয়। মূল্যতালিকা থেকে দেখা গেল এখানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা।
দুই মাংসের দোকানিই ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বেচাবিক্রি খুবই কম। কাস্টমার কমেছে। সবকিছুর দাম বাড়ায় মানুষ মাংস কেনাও কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
তারপর বাজারের আরও ভেতরে গিয়ে দেখা গেল থরে থরে সাজানো রয়েছে সবকিছু। কিন্তু বাজার একরকম ক্রেতাশূন্য।
কাঁচা তরকারির দোকানি রহমত আলী জানালেন, তিনি বেগুন ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা কেজি, করলা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, কচুর লতি ৯০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০/৫০ টাকা, শিম ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। টমেটো ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা কেজি, আলু ২৫ টাকা কেজি, সজনে ১২০ টাকা কেজি, লাউ ৫০/৬০ টাকা পিস এবং কাঁচামরিচ ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। লেবুর হালি ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
একইভাবে মাছের দোকানগুলো ক্রেতাশূন্য হলেও মাছের দামের কিন্তু কমতি দেখা যায়নি। বেলে মাছের দামও চাওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। বড় আকারের চাষের রুই-কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছোট রুই-কাতলা ৩০০ টাকা, শিং-মাগুরের দাম আকারভেদে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি শিং-মাগুর আকারভেদে হাজার টাকার বেশি। এ ছাড়া চিংড়ি ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ফলের দামে আগুন, ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতারা
মালিবাগ কাঁচাবাজারে ফলে দোকানগুলো মেইন রাস্তার সঙ্গে। থরে থরে সাজানো বিভিন্ন ধরনের ফল। দোকানগুলোতে প্রচুর ফল থাকলেও ক্রেতা নেই।
দোকানিরা বিরস ভঙ্গিতে বসে আছেন। তারা বলছেন, দাম তো অনেক বেশি। আমাদেরও কিছু করার থাকে না। ফলে ক্রেতারা ফিরে যান বেশিরভাগ সময়ই।
কথা হয় কুমিল্লা ফলভান্ডারের দোকানির সঙ্গে। তিনি জানালেন, আপেল ৩৩০ টাকা, কমলা ২৫০ টাকা, বেদানা ৪৬০ টাকা, মাল্টা ২৫০ টাকা, নাসপাতি ৩৪০ টাকা, পেয়ারা ৮০ টাকা, খেজুর ১ হাজার টাকা, সাদা আঙ্গুর ২৮০ টাকা, লাল আঙুর ৫০০ টাকা, ফুজি আপেল ৩৪০ টাকা, আম ১২৫০ টাকা, সবুজ আপেল ৩৩০ টাকা কেজি দরে এবং তরমুজ ৫২০ টাকায় বিক্রি করছেন।
একই অবস্থা অন্য ফলের দোকানগুলোতেও দেখা গেল। দোকানে ফলের অভাব নাই, কিন্তু ক্রেতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।
এনএইচবি/এমএমএ/