‘সবজি খেতে পারি না, ফল খাব কীভাবে’
সম্প্রতি রমজানে প্রতিটা দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এ শ্রেণির ভোক্তাদের অভিযোগ, এমনিতেই কয়েক মাস থেকে দ্রব্যের দাম বাড়তেই আছে। সেই সঙ্গে রমজানে বেড়েছে আরও কয়েকগুণ।
সরেজমিনে ফলের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা অনেকেই বলছেন, যেভাবে শাকসবজির দাম বেড়েছে তাতে সবজি খেতে পারি না, ফল খাব কীভাবে?
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, রমজান এলে মানুষের একটু খরচ বাড়ে, একটু বেশি কেনাকাটাও করতে হয়। ঠিক এই সুযোগটা গ্রহণ করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। যদিও পাইকারি বাজারে বাড়ে ১ টাকা কিন্তু এই পণ্যটি যখন অন্যান্য বাজারে ছড়িয়ে যায় তখন ওই পণ্যটির ৫ গুণ হারে বেশি দাম নেয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যা দেখার কেউ নেই।
তবে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিয়ম মেনেই আমরা ব্যবসা করছি। তবে পাইকারি বাজার থেকে প্রতিটা দ্রব্যের দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে এ কারণেই একটু দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর পলাশী বাজারে সরেজমিনে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-এর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। এতে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে।
পলাশী বাজারে ফল কিনতে এসেছেন আজিমপুরের বাসিন্দা মো. জুলহাস। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছি। না পারছি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কেনাকাটা করে পরিবারকে দিতে, না পারছি নিজেরা খেতে। তিনি বলেন, এমন কিছু সবজি আছে যেগুলোর দাম ১০০ টাকা করে— প্রায় ফলের দামের মতো।
তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছেলে-মেয়েরা আপেল, আঙুর, বেদানা, ও মালটা খেতে চেয়েছে। এজন্য বাজারে ফল কিনতে এসেছি। এসে দেখি ফলের বাজারে আগুন। রমজানের আগে যে আপেলের কেজি ছিল ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা সেই আপেল এখন চায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রায় প্রতি কেজিতে ১০০ টাকার মত বেড়েছে প্রতিটা ফলের দাম। বিদেশি ফলের দাম তো বেড়েছে সঙ্গে বেড়েছে আমাদের দেশীয় ফলের দামও। আয় রোজগার মোটেই বাড়েনি, বেড়েছে খরচ। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকব কীভাবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী স্টাফ কোয়ার্টার থেকে বাবার জন্য ফল কিনতে এসেছেন জেরিন আক্তার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা অসুস্থ, রোজা থাকতে তার কষ্ট হয়। প্রতিদিন এক দুই পিস করে ফল কিনে নিয়ে যাই বাবার জন্য। বাজারে এসে দেখি প্রতিটা ফলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এভাবে দাম বাড়লে আমরা এ সব কিনব কি করে? সবকিছু আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বুয়েট বাজারে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন গাউসুল আজম। তিনি রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন পলাশী বাজার থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করেন। জানতে চাইলে আজম বলেন, আবাসিক এলাকা হওয়ায় এবং আশেপাশে উন্নত মানের একটি বাজার থাকায় আমাদের এই বাজারে প্রতিটা সবজির দাম দুইগুণ। তিনি বলেন, শুধু সবজি নয়, পলাশী বাজারে নির্ধারিত রেটের পণ্য ছাড়া প্রতিটা দ্রব্যের দাম বেশি।
তিনি বলেন, আজ আমার মেয়েটা বলেছে কিছু ফল কিনতে কিন্তু বাজারে দরদাম করে দেখি ফল আমাদের রিজিক থেকে উঠে যাচ্ছে। কারণ আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষ ফল কিনতে পারছেন না। রমজানে প্রতিটা দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ গুণ। সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি দ্রব্যমূল্য। সাধারণ মানুষ এ সব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের মত গরিব মানুষের কথা কেউ চিন্তা করে না। উল্টাপাল্টা দাম বাড়ার কারণে আমরা সাংসারিক জীবনে টাকা-পয়সার অশান্তিতে পড়ছি।
আজম আরও বলেন, রোজার একসপ্তাহ আগে ফলের দাম অনেকটা স্বাভাবিক ছিল আর এখন প্রতিটা ফলের কেজিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে বেড়েছে। রোজার সময় একটু ফল এবং ভালো সবজি যে খাব— আস্তে আস্তে আমাদের সেই ভাগ্য উঠে যাচ্ছে।
ফল কিনতে আসা টিপু সুলতান বলেন, বাচ্চারা ড্রাগন ফল খেতে চেয়েছে। একটি ড্রাগন কিনেছি। যে ড্রাগন ফলের কেজি ছিল এর আগে ৩০০ টাকা এখনে সেই ফলের কেজি হয়েছে ৭০০ টাকা। রোজার সময়ে এই ফলটার দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পরিবারের জন্য ফল কিনেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে শাকসবজির যে হারে দাম বেড়েছে তাতে ভালো মতো সেটাই কিনতে হিমশিম খাচ্ছি, ফল কিনে খাব কীভাবে?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশী মার্কেটের হফ ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ড্রাগন ফলের দাম একটু বেড়েছে। তা ছাড়া অন্যান্য ফলের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। আমরা বাইরে থেকে বেশি দামে ফল কিনে আনি এজন্য একটু চড়া দামে বিক্রি করতে হয়। অন্যথায় আমরা চলব কীভাবে।
জানতে চাইলে পলাশী মার্কেটের ফল ব্যবসায়ী মো রুবেল মিয়া বলেন, আমরা অতিরিক্ত হারে কারো থেকে দাম বেশি নেই না। তবে এটা আবাসিক এলাকা হওয়ার কারণে হয়ত সামান্য কিছু টাকা অন্য বাজারে তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, আমরা তো ছোট ব্যবসায়ী, যারা বড় ব্যবসায়ী তারা মূলত দাম বাড়িয়ে দেয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।
কেএম/আরএ/