দুইদিন ধরে লাইনে দাঁড়ানো মানুষ, অভিযোগ করছেন টিকিট কালোবাজারির
দুই দিন ধরে কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য লাইন দিয়েছেন নীলফামারীর জাহাঙ্গীর আলম এবং দিনাজপুরের মো. রিপন। তারা দুজনই রবিবার (৩ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। একই অবস্থা লাইনের বেশিরভাগ টিকিটপ্রত্যাশীরই। তারা সবাই ২৮ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন আগামীকাল কাউন্টার খোলা পর্যন্ত। তবে এই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তারা অনেকেই টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ করেছেন।
সোমবার (৪ জুন) বিকেল ৩টায় জাহাঙ্গীর ও রিপনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ইতিমধ্যে ২৪ ঘণ্টা পর হয়ে গেছে। মূলত ৮ জুলাইয়ের টিকিট কেনার জন্য তারা এসেছিলেন। আজ সোমবার ৮ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা টিকিট পাননি। তাই ৯ জুলাইয়ের টিকিটের জন্য লাইনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টিকিট লাগবে ৩টা। নীলফামারীর টিকিট। এসি-নন এসি কোনো চয়েস নাই। পেলেই হলো। কিন্তু যে অবস্থা তাতে টিকিট পাবো কীনা সেই শঙ্কায় আছি। যদিও কাল আমরা সিরিয়াল ছিল ২৫০। কিন্তু আজ সিরিয়াল ২৮। কাজেই টিকিট পাবো আশা করা যায়।
মো. রিপনের সিরিয়াল অবশ্য ৫৪। তিনিও আশাবাদী ৮ জুলাইয়ের টিকিট না পেলেও ৯ জুলাইয়ের টিকিট পাবেন।
টিকিট কালোবাজারীর অভিযোগ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা টিকিটপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করলেন টিকিট কালোবাজারির। তারা এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারাই পত্রিকায় লিখেন যে কাউন্টারের প্রতিদিন টিকিট দেওয়া হয় ১৩ হাজার। আপনিই বলেন এখানে ১৩ হাজার মানুষ থাকে লাইনে? তাহলে এত টিকিট কোথায় যায়?
ভূক্তোভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি কাউন্টারে শ’খানেক করে টিকিট দিয়ে বলা হয়, শেষ হয়ে গেছে। ১৬টা কাউন্টার রয়েছে। এবার আপনিই বলেন যে বাকি টিকিট কোথায় যায়?
এই দীর্ঘ সময়ে কেউ আপনাকে বলেছেন যে লাইনে টিকিট পাবেন না আমাকে অতিরিক্ত টাকা দেন টিকিট দিচ্ছি এমন প্রশ্নের জবাবে মো. রিপন বলেন, আমাকে কয়েকজন বলেছেন তার কাছে দিনাজপুরের টিকিট আছে। লাগলে দিতে পারবে।
একই অভিযোগ করলেন বগুড়ার যাত্রী আশীষ। তিনি বলেন, আমাকেও একজন এসে বলেছে তার কাছে টিকিট আছে। আমি রাজি হইনি।
আশীষ বলেন, শুধু কাউন্টারেই নয় অনলাইনেরও একই অবস্থা। বরং আরও খারাপ অবস্থা অনলাইনের। অনলাইন থেকে টিকিট কাটতে পেরেছে এমন কাউকে আমি পাইনি। এখানে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন। তাহলেও বুঝবেন তারাও কেউ কাউকে দেখেনি যে অনলাইন থেকে টিকিট কাটতে পেরেছে।
তাহলে কি এত টিকিট কালোবাজারে চলে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কালোবাজারীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। তারা এখানে কাস্টমার খুঁজবে না। তাদের আলাদা চ্যানেল আছে।
জাহাঙ্গীর আলমের কথা সত্যতাও পাওয়া গেল। অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকতা বেলায়েত। তিনিও টিকিটের জন্য ঘুরছেন কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন, টিকিট আগেই কেটে ফেলেছি। ফোনে কেটেছি। এখন টাকা দিয়ে নিতে এসেছি।
কাকে টাকা দিয়ে টিকিট নিতে এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বেলায়েত বলেন, তার নাম বললে সে রিস্কে পড়ে যাবে। তাই নাম বলতে চাইছি না। রেলেরই একজন কর্মী। প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে টিকিট দুটি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলছেন, কাউন্টারের টিকিট কালোবাজারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন এজেন্সির লোক কাউন্টারের ভেতরে তদারকি করছে।
অনলাইনে টিকিট কালোবাজারি প্রসঙ্গে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ১৩ হাজার টিকিটের জন্য এক সঙ্গে হিট করে চার লাখ মানুষ। তাই সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। একটি টিকিটও অনলাইন থেকে কালোবাজারে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই বলে দাবি করেন তিনি।
আরইউ/