রাবিতে সভাপতি নিয়োগ নিয়ে দুই পক্ষের ধস্তাধস্তি

রাবিতে সভাপতি নিয়োগ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি নিয়োগের আদেশ প্রত্যাহার এবং নিজ বিভাগ থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি নিয়োগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। পরে দুপুর সোয়া তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা।
কর্মসূচিতে বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাইফ রহমান বলেন, ‘আমাদের বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রাতের আধারে ফাইন্যান্স বিভাগের একজন শিক্ষককে বদলি করে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে। এতে রীতিমত আমাদের বিভাগের শিক্ষদের যোগ্যতার দিকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমাদের নিজের বিভাগে যখন যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন তাহলে কেন আমরা বাইরের বিভাগ থেকে সভাপতি নিব। আমাদের বিভাগের আগের সভাপতি, সেও অন্য বিভাগের ছিলেন। আমাদের কিছু না জানিয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছেন। আমরা আর অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি চাই না।’
বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘অন্য বিভাগের শিক্ষককে আমরা সভাপতি হিসেবে চাই না। যারা আমাদের বিভাগকে ধারণ করে তাদের একজনকেই জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ চাই। আমরা দেখেছি বর্তমান উপাচার্য কীভাবে নিজের ইচ্ছামতো স্নাতক পাস ছাড়াই একজনকে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের বিভাগের সভাপতি কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে নোংরা রাজনীতি আছে, যার শিকার আমরা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।’
দুপুর সোয়া তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব স্বাক্ষরিত এক প্রস্তাবনা শিক্ষার্থীদের জানান প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করা হবে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নব নিযুক্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন সভাপতির পদে যোগদান করবেন না।
এর আগে, দুপুরের দিকে প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নামাজ আদায় করতে প্রশাসনিক ভবনে থেকে বের হতে চাইলে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের বাঁধা দেন। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন,‘ছাত্রদের বিভাগের বিষয়ে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনের সাথে আমরা কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না। আমরা রোজা রেখে, তাদের অনুরোধ করেছি, আমাদের নামাজ পড়ার জন্য আপনারা যেতে দেন। কিন্তু তারা আমাদের যেতে দেন নি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য তারা এধরনের কাজ করেছে। আমাদের নামাজ পড়তে দেয় নি তারা। এই কাজের সাথে যারা জড়িত, তাদের সুবিচার না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সকল কাজ বন্ধ থাকবে।’
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনকে স্বপদে-স্ববেতনে ও প্রেষণে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে বদলি করা হয়।
যোগদানের তারিখ থেকে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী আগামী তিন বছরের জন্য ওই বিভাগের সভাপতি নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদার-কে বিভাগের সভাপতির রুটিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয় আদেশটিতে। আজকের কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ওই আদেশটি প্রত্যাহার করে নিজ বিভাগ থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
