ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে মেরকেল সরকারের তিন বিতর্কিত চুক্তি
ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে তিনটি বিতর্কিত চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে জার্মানির সদ্যসাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল সরকার। এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে–মিসরের কাছে ফ্রিগেট ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস এবং সিঙ্গাপুরের কাছে সাবমেরিন বিক্রি। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
জার্মানির নিউজ ম্যাগাজিন ডেয়ার স্পিগেল জানায়, নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে ওলাফ শলৎসের শপথ নেওয়ার একদিন আগে ৭ ডিসেম্বর এসব চুক্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগের প্রেসিডেন্ট ব্যার্বেল বাসের কাছে পাঠান মেরকেল সরকারের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার।
জার্মানির ফেডারেল সিকিউরিটি কাউন্সিল এসব চুক্তির অনুমোদন দেয়। এই পরিষদে চ্যান্সেলর ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী থাকেন। ফলে নতুন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস মেরকেল সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকায় তিনি এসব চুক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।
বুন্ডেসটাগ প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো চিঠি থেকে জানা যায়, মিশরের কাছে তিনটি মেকো এ-২০০ ইএন ফ্রিগেট ও ১৬টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বিক্রির কথা বলা হয়েছে।
অন্য চুক্তিতে সিঙ্গাপুরের কাছে একটি ২১৮ জি সাবমেরিন বিক্রির উল্লেখ রয়েছে।
২০২০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ১১৬ কোটি ইউরো বা ১৪১ কোটি ডলারের অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে জার্মান সরকার। এই দেশগুলো ইয়েমেন আর লিবিয়ায় প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িত ছিল। জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় দেশটির গ্রিন পার্টির এক সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংসদের নিম্নকক্ষে এই তথ্য জানিয়েছে।
মিশরের মানবাধিকার রেকর্ড খারাপ হওয়ায় এবং ইয়েমেন যুদ্ধে দেশটি সংশ্লিষ্ট থাকায় তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রির সমালোচনা করেছেন জার্মানির কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতা।
জার্মানির বর্তমান জোট সরকারের অংশ গ্রিন পার্টির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা আগনিসৎস্কা ব্রুগার বিদায়ী মেরকেল সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক চাল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রিন পার্টি হয়তো এসব চুক্তির অনুমোদন দিত না, এই বিবেচনায় মেরকেল সরকার যাওয়ার আগে সেগুলোর অনুমোদন দিয়েছে।
জার্মানির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারাও এই চুক্তির কড়া সমালোচনা করেছেন।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ফ্রাঙ্কফুর্টের পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রজেক্ট লিডার সিমোন ভিসোৎস্কি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তৃতীয় দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি এখন আর ব্যতিক্রম বলে যুক্তি দেওয়ার কিছু নেই। বরং এটি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।’
তবে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, সবুজ দল ও ব্যবসাবান্ধব দল এফডিপির সমন্বয়ে গঠিত জার্মানির নতুন জোট সরকার ‘নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র বিক্রি নীতি’ অনুসরণ করতে একমত হয়েছে। বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই নীতি বিবেচনা করা হবে।
এদিকে, জার্মানির ‘জয়েন্ট কনফারেন্স চার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের’ ক্যাথলিক চেয়ারম্যান কার্ল ইয়ুসটেন বলেন, ‘বাইরের দেশের কাছে ইউরোপ বেশি অস্ত্র বিক্রি করছে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে।’
এসএ/