শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

জীবন সংগ্রামে সফলতার দেখা পেল দেবহাটার ৫ নারী

জীবন সংগ্রামে সমাজ, পরিবারের নানা বাধাঁ কাটিয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন দেবহাটার ৫ নারী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব নারীদের ৫টি ক্যাটাগরিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় খুঁজে বের করা হয়েছে। এসব নারীদের জীবনে রয়েছে আলাদা আলাদা জীবন কাহিনী। তাদের সেই সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরা হলো।

জীবন চলার পথ মসৃণ নয়, আসে নানান বাঁধা-বিপত্তি। সাহসী মানুষ এসব বাধা অতিক্রম করে আত্মপ্রত্যয়ের উপর ভর করে এগিয়ে যায় এবং সফলতা বয়ে আনে নিজের জীবনে। পাশাপাশি যুক্ত হয় সামাজিক কাজে। অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠে অন্যদের জন্য। এমনই একজন নারী জি. এম স্পর্শ। ১৯৯৩ সালে জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের শ্বেতপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। পরে স্বামীর সহযোগিতায় এইচ.এস.সি পাশ করেন তিনি। পরীক্ষার কয়েক মাস পরেই তিনি প্রথম সন্তানের (কন্যা সন্তান) মা হন। যে কারণে অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি।

২০১৯ সালে স্বামী ও পরিবারের সহযোগিতায় জি.এম স্পর্শ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে উপজেলা গভর্ন্যান্স ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের ( ইউজিডিপি) সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক নারী উন্নয়ন ফোরাম সংক্রান্ত গাইড লাইনের আলোকে তিনি উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম গঠন করেন। একই সাথে নারী উন্নয়ন ফোরামকে টেকসই করার লক্ষে উপপরিচালকের কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা থেকে ফোরামের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

এই নারী উন্নয়ন ফোরামের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী সদস্যদের নিয়ে সমাজে নারীর ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিষদে তাদের ভূমিকা আরও জোরালো করা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ করা এবং নারী নেতৃত্ব বিকাশের উপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ বিষয়ে নারীদের উজ্জীবিত করছেন/পরামর্শ দিচ্ছেন জি.এম স্পর্শ। এ ছাড়াও তার নারী উন্নয়ন ফোরামের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রতি বছর যে বরাদ্দ পেয়ে থাকেন সেটা দিয়ে তিনি দেবহাটা উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়/ মাদ্রাসার কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে উঠান বৈঠক, স্কুলে অবহিতকরণ সভা ও নারী জন প্রতিনিধিদের দক্ষতা বিকাশে ব্যয় করছেন। তা ছাড়াও উক্ত বরাদ্দকৃত টাকা থেকে দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের দুঃস্থ-অসহায় নারী ও শিশুদের চিকিৎসা ও শিক্ষায় ব্যয় করছেন তিনি।

এসবের বাইরেও করোনাকালে নিজস্ব অর্থায়নে দরিদ্র অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া, খাদ্য বিতরণসহ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা এবং উপজেলা পরিষদের সম্মানীর টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অবদান রেখে চলেছেন তিনি।

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ফুলজান বিবি। তিনি রত্নেশ্বপুর গ্রামের রায়হান হোসেনের স্ত্রী। প্রায় ২২ বছর পূর্বে তার বিয়ে হয়। জানা গেছে, সেই সময় তার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তিনবেলা পেট ভরে খাওয়া হতো না। পরপর তার দুটি সন্তান হয়। কিন্তু শিশুদের খরচ চালোনোর মতো সামর্থ্য ছিল না তাদের।

এক পর্যায়ে খরচ সামলাতে বাড়িতে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করা শুরু করেন ফুলজান বিবি। তাতে যে টাকা আয় হতো তাতেও সংসার চলত না। তখন তিনি সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। পরে এনজিও থেকে লোন নিয়ে স্বামীকে ডেকোরেটরের ব্যবসা ছোট থেকে বড় আকারে রূপ নিতে শুরু করে। এতে করে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। তাদের পূর্বের অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় এখন সমাজের মানুষের কাছে সম্মাননীয় ব্যক্তি হিসাবে সম্মান পায়। বর্তমানে ফুলজান বিবির পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে।

নির্যাতনে বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করেছেন আরিফা পারভিন। তিনি জগন্নাথপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের কন্যা।

জানা গেছে, গত ২ বছর আগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহা গ্রামে বিয়ে হয় আরিফার। বিয়ের পর থেকে কিছু দিন স্বামীর সংসারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো ছিল। কয়েক মাস যাওয়ার পর তার স্বামী বিভিন্ন নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকে সহ্য করতে পারত না। এক সময় কথায় কথায় শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে তার স্বামী। অনেক সহ্য করার পরেও যখন তার স্বামীর অভ্যাস পরিবর্তন হয়নি তখন শ্বশুর বাড়ির পরিবারের সকলকে নির্যাতনের বিষয়টি জানান তিনি। জানানোর পরেও তারা তার অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি।

স্বামীর অভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হন তখন ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির অফিসে অভিযোগ করেন আরিফা। ব্র্যাক অফিসে শালিসের মাধ্যমে মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা। এক পর্যায়ে দেনমোহর ও ভরনপোশন বাবদ মাত্র ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে তালাক দেন স্বামীকে। সেই টাকা দিয়ে পানির ফলের ব্যবসা শুরু করেন আরিফা। সেইসঙ্গে কিছু জমি বন্ধক রেখে ফসলের চাষ শুরু করেন। এসবের পাশিপাশি একটি কারখানার ব্যাগ তৈরির কাজে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে যে টাকা উপার্জন হতো তা দিয়ে নিজের ও পরিবারের আর্থিক খরচ চালাতে সক্ষম হন।

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের উপেক্ষা, স্বামীর নির্যাতন, অসহযোগিতা এত কিছু আরিফাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা, পরিশ্রম, সততা ও একাগ্রতা তাকে সাফল্যে পৌঁছাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। সত্যিকার অর্থে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার যে অভিপ্রায় সেটা অর্জন করেছেন তিনি।

সফল জননী নারী পারভিন আক্তার। তিনি মাঝ-পারুলিয়া গ্রামের আতিয়ার রহমানের স্ত্রী।

পারভিন আক্তার জানান, তার স্বামী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের পরে তিনি কিছুই করতেন না। স্বামীর তেমন জমি জায়গাও ছিল না। আমার বিয়ের পর আমাদের ৩টি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। স্বামী ও ৩টি সন্তান নিয়ে সংসার খুব ভালো চলছিল না। সব বাধা উপেক্ষা করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ কোনোভাবে নিজেই চালাতে লাগলাম।

তিনি আরও জানান, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানোর জন্য বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গাভি পালন শুরু করলাম। পালিত পশু-পাখি থেকে পাওয়া মাংস ও ডিম ছেলে-মেয়েদের চাহিদার পাশাপাশি বিক্রি করে তাদের বই, খাতা, কলম ও পড়া লেখার খরচ যোগাতাম। ছেলে মেয়েরা সবাই ছিল মেধাবী ও পরিশ্রমী । স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের সাথে পড়াশোনা করে। বর্তমানে ৩ ছেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সবাই সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়। আমার বড় ছেলে তাহাজাত হোসেন (হিরু) সাউথ ইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, মেঝ ছেলে শাহাদাত হোসেন (বিরু) মেহেরপুর জেলা আনসার কমান্ডার। ছোট ছেলে ইমদাদ হোসেন (মিথ) ঢাকা পলিটেকনিক কলেজের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার দেখা দেখি অন্য নারীরাও তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়মুখী করার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন ।

শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী তুতিয়া খাতুন। তিনি বটিয়াঘাটা থানার নারায়নখালী গ্রামে ১৯৬৪ সালে মৃত আবু বকর শেখ ও নুরজাহানা বেগমের কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে আসেন।

তুতিয়া খাতুন তার জীবন সংগ্রাম নিয়ে বলেন, আমার পিতা একজন বিশিষ্ট বস্ত্র ব্যবসায়ী। মাতা ছিলেন একজন গৃহিনী। আমার পিতা তৎকালীন সময়ে ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালো ফলাফল অর্জন করে চলছিলাম। উপযুক্ত বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। সেই থেকে আমার উপরে এবং শিক্ষা জীবনে চরম বাধা বিপত্তি আসে। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে স্বামীর একান্ত প্রচেষ্টায় মেমোরিয়াল সিটি কলেজ খুলনাতে বিজ্ঞান শাখায় ১ম বর্ষে ভর্তি হই। সেখানে থেকে ১৯৮৩ সালে বিজ্ঞান শাখা থেকে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হই। সেখানেও আমি বিভিন্ন রিসাইটেশনের সাথে জড়িত থাকি এবং পুরুস্কার পেয়েও থাকি। এমন মুহূর্তে আমার একটি পুত্র সন্তান হয়, তাকে নিয়ে আমি বেশ কষ্টেও লেখাপড়া করি। ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.কম সম্মান শ্রেণিতে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভর্তি হই এবং ১৯৮৬ সালে বি.কম সম্মান ব্যবস্থাপনা বিষয়ের উপর ডিগ্রি লাভ করি। সে সময় আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এত কষ্ট সত্ত্বেও আমি ১৯৮৭ সালে এম কম শেষ বর্ষে ভর্তি হই। সেখান থেকে এম কম ব্যবস্থাপনা বিষয়ের উপরে ডিগ্রি লাভ করি। এরপর ১৯৯৩ সালে কলারোয়ার শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগ হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর বাড়ি দেবহাটার সখিপুর হওয়ায় প্রতিদিন ৭২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমাকে আমার কর্মস্থলে যেতে হতো। সংসারের সব কাজ শেষ করে সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত হতাম। নির্দিষ্ট কয়েক বছর চাকরির পরে সহকারী অধ্যাপক পদে উপনীত হই। বর্তমানে ওই কলেজে যথেষ্ট সততা ও কর্মদক্ষতার সাথে (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ পদে নিয়োজিত আছি।

তুতিয়া খাতুন বলেন, বর্তমানে আমি স্বচ্ছল ও স্বাচ্ছন্দময়ী একজন নারী। আমি আমার কর্মস্থলে যথেষ্ট সুনামের সাথে নিয়োজিত আছি।

এসআইএইচ

Header Ad
Header Ad

শেখ হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই

শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। লন্ডনের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এফবিআই।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পান, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর এফবিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মানি লন্ডারিং অ্যান্ড লিগ্যাল ইউনিটের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের সদর দপ্তরে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে বিপুল পরিমাণ দলিল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, গত ১ অক্টোবর বাংলাদেশে ইইউ ডেলিগেশনের হেড অব কো-অপারেশন মাইকেল ক্রেজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাচার হওয়া তহবিল প্রত্যাবাসন এবং কমিশনের পরিচালন সক্ষমতা বাড়াতে কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন। শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে

যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগও তদন্ত শুরু করেছে দুদক। সংস্থার কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পকে বলেন, শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ অধিকতর তদন্তের জন্য দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর পাঠানো হয়েছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৯টি অগ্রাধিকার উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, জয়, হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ওঠা ৭০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

সূত্র জানায়, বেপজা ও বেজার আওতাধীন নয়টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশ্রয়ণসহ আরও কিছু প্রকল্প। ৭০০ কোটি ডলারের মধ্যে শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকেই ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকসহ তার পরিবারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

টিউলিপ ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অস্ত্র সরবরাহের একটি চুক্তির মধ্যস্থতা করছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছিল।

টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা ২০ বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের বিস্তৃত তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন। টানা ১৫ বছর শাসনের পর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৪ সালে ‘যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদের মামলায়’ সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম নজরে আসে। এফবিআইয়ের তদন্তে জয়ের গুরুতর আর্থিক অসদাচরণের বিষয়টি উঠে আসে। বিশেষত জয়ের নামে হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং লন্ডন ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরিত করার তথ্য সামনে এসেছে। এফবিআই তাদের লন্ডন প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে।

একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিচার বিভাগের একজন বিশেষ এজেন্ট নিশ্চিত করেছেন, কেম্যান আইল্যান্ড ও হংকংয়ের শেল কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে ৩০ কোটি ডলার জমা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনা অনেকাংশেই সত্য। আমরা ভবিষ্যতে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে পারি। এ বিষয়ে আমরা পরে সরাসরি কথা বলব।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত শ্বেতপত্র অনুযায়ী, কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবৈধ তহবিল প্রবাহের কারণে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।

Header Ad
Header Ad

দুর্নীতিবাজদের ফাইলগুলো পুড়ে গেছে : রুহুল কবির রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরই সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রহস্যজনক। শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ৮৮ এসএসসি ব্যাচ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী অভিযোগ করেন, সচিবালয়ের মতো নিরাপদ সরকারি দপ্তরে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত সাবেক কেবিনেট সচিবের ফাইল, যার ওপর তদন্ত চলছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, “শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের ফাইল তলব করার পরপরই কেন এমন ঘটনা ঘটল? এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত।”

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের দোসরদের চিহ্নিত করে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শেখ হাসিনার সহযোগীদের প্রশাসনে বসিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার বিপ্লবকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে। যারা অতীতে গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে।

রিজভী বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকে উপেক্ষা করে সংস্কারের কথা বলছে। তিনি অভিযোগ করেন, “এটি মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন আমলের ষড়যন্ত্রের মতো। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আনুপাতিক হারে নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি জটিল এবং সরাসরি ভোটাধিকারের বিরোধী।”

রিজভী আরও বলেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং কোনো ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে।

Header Ad
Header Ad

শনিবার যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট নগরীর ২৫ এলাকায় শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, জরুরি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এবং কিছু এলাকায় সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে।

এ বিষয়ে সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর প্রকৌশলী শামস-ই-আরেফিন বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১১ কেভি মুক্তিরচক ও ধোপাদিঘীরপাড় ফিডারের আওতাধীন এলাকাগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এই এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে মেন্দিবাগ, নোয়াগাঁও সাদিপুর, বোরহানউদ্দীন রোড, কুশিঘাট, মীরেরচক, মুক্তিরচক, মুরাদপুর, পীরেরচক, উপশহর রোড, সোবহানীঘাট বিশ্বরোড, ডুবড়ী হাওর, সবজিবাজার, ফুলতলী মাদরাসা, হাফিজ কম্প্লেক্স, নাইওরপুল পয়েন্ট, ওসমানী শিশু পার্ক, ধোপাদিঘীরপাড় ও আশপাশের এলাকা।

অন্যদিকে, ১১ কেভি সোবহানিঘাট ও কালিঘাট ফিডারের আওতাধীন এলাকাগুলোতে সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এই এলাকাগুলো হলো কাস্টঘর, চালিবন্দর, আমজাদ আলী রোড, মহাজনপট্টি, লালদিঘীরপাড়, হকার্স মার্কেট, বন্দরবাজার রোড, জেল রোড এবং আশপাশের অঞ্চল।

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাজ শেষ হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হবে। সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিভাগটি এবং গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করেছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

শেখ হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
দুর্নীতিবাজদের ফাইলগুলো পুড়ে গেছে : রুহুল কবির রিজভী
শনিবার যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না
গুম অবস্থায় ভারতের কারাগারে যাওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা সুখরঞ্জন বালির
শেখ হাসিনাকে ‘নারী’ বলতে রাজি নন মৎস্য উপদেষ্টা
সূর্যের সবচেয়ে কাছে মানুষের তৈরি যান
বর্তমান সরকার রিজার্ভ বাড়িয়েছে, ব্যাংক সেক্টর সচল করছে: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে : মির্জা ফখরুল
সংবিধান সংস্কারে রাজনৈতিক দলের সংকল্প জরুরি: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
চলতি বছরের বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক হচ্ছে না
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত সবাই একই পরিবারের
ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরায়েলি সেনারা
ইন্টারপোলের রেড নোটিশে ৬৩ বাংলাদেশি: অপরাধীদের ধরতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমীর বরখাস্তের আদেশ বাতিল
মাহফিলে আজহারী উঠবেন রাতে, দুপুরেই ভরে গেছে ময়দান
ইসরায়েলি হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ডব্লিউএইচও প্রধান
থাইল্যান্ডে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল থাই নারীর সঙ্গে হোটেলে  
হাসিনার দোসররা সচিবালয়ে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড করেছে: শাকিল উজ্জামান
ভারতে ইসকন মন্দিরে চিন্ময়ের আইনজীবীর বৈঠক
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত: ড. মুহাম্মদ ইউনূস