শেয়ালের চরিত্রে সিংহের অভিনয়: রাজনীতিতে বিপর্যয়ের গল্প
গোলাম মাওলা রনি। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে শেয়াল এক আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় প্রাণী। দিনের আলোয় আড়ালে থাকা শেয়াল রাতের বেলায় ‘হুক্কা হুয়া’ ধ্বনিতে চিৎকার করে। মুরগি চুরির দক্ষতায় শেয়াল সুনাম অর্জন করেছে; একসঙ্গে তারা আখের ক্ষেতে ঢুকে কৃষকদের বিপাকে ফেলে।
যদিও শেয়াল সহজে দ্বন্দ্বে জড়ায় না, একা মানুষ পেলে ভয় দেখায় এবং আক্রান্ত হলে হিংস্র হয়ে ওঠে। গ্রামের মানুষের কাছে শেয়ালের কামড় একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা, কারণ শেয়ালের কামড়ে সামাজিক মর্যাদা হানি ঘটে। গ্রামীণ জীবন আর রাজনীতিতে শেয়ালের চতুরতা প্রভাব ফেলেছে; শেয়ালকে কেন্দ্র করে বহু গল্প ও উপকথা গড়ে উঠেছে।
শেয়ালের মত কিছু মানুষ, বিশেষত রাজনীতির কিছু চরিত্রও শেয়ালের মতো চালাক এবং লুকোচুরি ও ছলনার আশ্রয় নেয়। যখন এ ধরনের চরিত্র রাষ্ট্রক্ষমতায় পৌঁছে, তখন দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। প্রকৃত সাহসী বীরের জায়গা যখন শেয়াল প্রকৃতির মানুষ দখল করে, তখন রাজনীতি ভ্রষ্ট হয়। এমনই এক ঘটনা মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধত্বে অন্ধ হয়ে থাকা এবং তার ভাই শকুনির প্রতারণার দ্বারা ঘটে; এতে কুরুক্ষেত্রের ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
গ্রিক সাহিত্য, আরবি সাহিত্য, এমনকি শেকসপিয়ারের নাটকগুলোতেও শেয়াল প্রকৃতির মানুষের এই অযোগ্যতাকে বারবার দেখানো হয়েছে। ইতিহাস বলে, রাষ্ট্রের নেতৃত্বে যখন গর্দভ এবং শেয়ালের মত দুর্বল চরিত্রের মানুষের আগমন ঘটে, তখন রাজনীতি নির্বুদ্ধিতায় পূর্ণ হয় এবং জনগণের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তখন দেশজুড়ে নীতিহীনতার প্রাদুর্ভাব ঘটে, যা ধ্বংস ডেকে আনে।
অন্যদিকে, প্রকৃত নেতার চরিত্রে রয়েছে সিংহের গুণাবলী। সিংহের জীবনধারা অন্য প্রাণীদের থেকে ভিন্ন। সিংহ কখনোই লুকিয়ে শিকার করে না, দলাদলি কিংবা ছলচাতুরীতে জড়ায় না, যা একজন প্রকৃত নেতার গুণ। সিংহের মতো নেতৃত্বে, যেমন দেখা যায় ইতিহাসে আলেকজান্ডার, অশোক, থমাস জেফারসন এবং জন এফ কেনেডির ক্ষেত্রে, সবসময় জনগণের কল্যাণ হয়। কিন্তু শেয়াল প্রকৃতির মানুষ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন সেখানে হিটলার বা মুসোলিনির মতো ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসে।
শেষ পর্যন্ত রাজনীতির মঞ্চে যখন সিংহের বদলে শেয়ালের প্রবেশ ঘটে, তখন দেশের নৈতিকতা ও রাজনীতি ধ্বংসের পথে যায়। তাই সিংহের গুণাবলীকে অনুকরণ করে নেতৃত্ব স্থাপনই সঠিক পথ, নয়তো একদিন গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
গোলাম মাওলা রনি
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক