পাঠ্যক্রমে সুদক্ষ শিক্ষক ও নিয়মিত মনিটরিং জরুরি
আমি একজন আশাবাদী মানুষ। কিছু হতাশাও আছে। তবে আশার কথা— আমি জানি এবং আমি দেখছি, সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন পরিমার্জন হচ্ছে। যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন, নীতি-নির্ধারক যারা আছেন তারা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছেন। এখনো পুরোপুরি না হলেও ইতোমধ্যে ১ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন এসেছে। ধীরে ধীরে সবশ্রেণিতেই সেটি সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এটিতো এত সহজ কাজ নয় যে চাওয়া মাত্রই সেটি একবারেই চট করে বাস্তবায়িত করে ফেলা সম্ভব। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া— মনে রাখতে হবে। সেজন্য আমাদের সময় দিতে হবে।
সম্প্রতি পাঠ্যক্রমে কিছু ভুলত্রুটি যেমন এসেছে, ভুলত্রুটিগুলো সংশোধনও হচ্ছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে দুটি কমিটিও গঠিত হয়েছে, যারা কাজ করছেন। আমার কথা হচ্ছে, তাদের তো কাজটি করার জন্য সময় দিতে হবে। আরও একটি বিষয় আমি দেখেছি— কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্জলা মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে, সেসব নিয়ে আমরা এত কথা কেন বলব? কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়া অব্দি আমরা অপেক্ষা করতে পারি নিশ্চয়। আমি মিডিয়াকেও বলব, তারা যেন এক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দেয়। ইতোমধ্যে যেহেতু কাজ শুরু হয়ে গেছে, তাদের সেটি সুসম্পন্ন করতে আমাদের সময় দিতে হবে— সেটিই মূলকথা।
পাঠ্যক্রমে সাম্প্রদায়িকতার একটি বিষয় এসেছিল ২০১৪ সালে। যেগুলো এখন আর নেই। আমরা বর্তমানকে প্রাধান্য না দিয়ে কেন অতীত নিয়ে টানা হেঁচড়া করব? পাঠ্যক্রমে গরু পূজা, কালি পূজার দিকে আকৃষ্ট করার কথা বলা হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে, যারা শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করেন, তারা কি অজ্ঞ? আমার প্রশ্ন তাদের কাছে, যারা এই মিথ্যাচারগুলো করছে। আমাদের কিন্তু মানুষকে ভুল তথ্য দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য হচ্ছিল। যেটির লাগাম টানার জন্যই মূলত পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন হচ্ছে। সৃজনশীল পাঠ্যক্রম আসছে। সৃজনশীলতার বিপরীতে যারা শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিং বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেন, আমি মনে করি সেটি অপরাধ এবং তা কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।
আমি মনে করি, শিক্ষার মূল ভিত্তিটুকু গড়ে উঠে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি অবধি সময়ে অর্থাৎ সেই সময়টুকু শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সেই ভিত্তিটুকু শক্ত করতে হলে আমাদের প্রধানত তিনটি বিষয়ে খুব মনোযোগ দিতে হবে। প্রথমত: দক্ষ শিক্ষক, দ্বিতীয়ত: সক্ষম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তৃতীয়ত: নিয়মিত মনিটরিং।
মনিটরিং না করলে বুঝবো কীভাবে- শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে, তারা শ্রেণিকক্ষে সেটি চর্চা করছেন কি না এবং এই তিনটির জন্য প্রয়োজন যথার্থ বিনিয়োগ।
শিক্ষাখাতে আমাদের বাজেট বরাদ্দ খুবই কম। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নিম্নতম। এখন পর্যন্ত শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশের সামান্য উপরে। যেটি হওয়া উচিত ছিল কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ শতাংশের মতো। আমাদের বড় বড় মেগা প্রকল্প দরকার। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, আমরা যদি মানবসম্পদ বিনির্মাণে বিনিয়োগ না করি, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ না বাড়াই, তাহলে বড় বড় গার্মেন্টসের মত স্ট্রাকচারগুলো চালু করার জন্য বিদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করতে হবে।
কাজেই আমার কথা হচ্ছে, শিক্ষায় আরও মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি যারা মিথ্যাচার করে, জনমনে হতাশা ছড়ায় তাদের বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং আমি বিশ্বাস করি পরিবর্তন আসবেই।
রাশেদা কে চৌধুরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
আরএ/