আয়ারল্যান্ডকে খেলা শেখাল বাংলাদেশ
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। সেইসঙ্গে জয়ও ছিল প্রত্যাশার মাঝে। পরে জয়ও এসেছে। সেই জয় এসেছে আবার ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে।
শনিবার (১৮ মার্চ) টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে করা ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের দলগত সর্বোচ্চ সংগ্রহের জবাব দিতে পারেনি সফরকারিরা। মাত্র ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।
আগের সর্বোচ্চ রানে জয় ছিল ২০২০ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯ রানে। আজ সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে করা ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের দলগত সর্বোচ্চ ৩৩৮ রানের সংগ্রহের জবাবই দিতে পারেনি সফরকারিরা। মাত্র ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। ৩ ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে একই স্টেডিয়ামে সোমবার (২০ মার্চ)।
জয়-পরাজয়ের মাঝেই বোঝ যায় একমাত্র টস জয় ছাড়া আর সব কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের। ব্যাট হাতে যেমন ব্যাটসম্যানরা শাসন করেছেন আইরিশ বোলারদের,তেমনি বাংলাদেশের বোলারা মাথা তুলে দাাঁড়াতে দেননি আইরিশদের। এই দুইয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন ফিল্ডিং। যে ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশের বদনাম ছিল, সেখানে আজ দেখা গেছ অভূতপূর্ব উন্নতি।
মুশফিক উইকেটর পেছনে দাঁড়িয়ে একাই নেন পাঁচটি ক্যাচ। ইনিংসে ৫ ক্যাচ নেওয়া মুশফিকের এটি ছিল দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে তিনি ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ধরেছিলেন ৫টি ক্যাচ। সবার আগে বাংলাদেশের হয়ে এই কীর্তি স্থাপন করেছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। তিনি ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ধরেছিলেন ৫ ক্যাচ। মুশফিকের ৫ ক্যাচের একটি ছিল হৃদয়ের মনি কোঠায় ধরে রাখার মতো। তেমনি ছিল ইয়াসির আলীরও একটি।
আয়ারল্যান্ডের শুরু আর বাংলাদেশের শুরুর সঙ্গে ছিল আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ১৬.৩ ওভারে ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সেই রান তিনশ অতিক্রম করার কথা ছিল না। কিন্তু পরে তা অতিক্রম করে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে দলগত সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়ে।
আয়ারল্যান্ডের শুরুতে রান ছিল বিনা উইকেটে ৬০। সেখান থেকে তারা মাত্র ১৫৫ রানে আউট হওয়ার আলামত ছিল না। কিন্তু পরে তারা অলআউট হয়েছে। দুইটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারার জ্বলে উঠলে। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সাকিব ৯৩,তৌহিদ ৯২ ও মুশফিক ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেললে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে ৩৩৮ রানের নতুন দলগত রেকর্ড হয়। আর আয়ারল্যান্ডের ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সাকিব ভাঙন ধরিয়ে যে পতনের ডাক দিয়েছিলেন, সেখানে এবাদত, নাসুম, তাসকিনরা সূর সৃষ্টি করলে আয়ারল্যান্ডের পতন তরান্বিত হয়। অভিষেক ম্যাচ খেলতেই নেমেই ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তৌহিদ হৃদয়।
আায়ারল্যান্ডের শুরুটা বেশ ভালোই ছিল। দুই ওপেনার স্টিফেন ডোহেনি ও পল স্টার্লিং ৬০ রান এনে দেন। কিন্তু ১১.২ ওভারে এই জুটি ভাঙার পর সেই ভালোটা আর থাকেনি। মাত্র ৫.৫ ওভারে ১৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তার দিকহারা হয়ে পড়ে। বিনা উইকেটে ৬০ রান থেকে দলের রান পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৭৬।
আঘাতটা শুরু করেন ব্যাট হাতে ৯৩ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলান সাকিব। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরান ডোহেনিকে। ৩৮ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৪ রান করেন তিনি। এর পরের দুইটি আঘাত হানেন এবাদত। মুশফিকের অসাধরণ ক্যাচে ফিরে যান পল স্টার্লিং। এবাদতের বাউন্সারেন পুল করতে গিয়ে মিস টাইমিং হয়ে যায় পলের। বল লেগ সাইট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় মুশফিক বাম দিক ঝাঁপিয়ে পড়ে অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় গ্লাভসে জমা করেন। পল ৩১ বলে ১টি করে চার ও ছয় মেরে ২২ রান করেন।
এবাদতের পরের শিকারেও ছিল মুশফিকের অবদান। এবার তাদের শিকার হন ৩ রান করে হ্যারি টেক্টর। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ব্যাটের কানায় লেগে মুশফিকের হাতে জমা পড়ে। এবাদত পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট নেন।
পরের নায়ক তাসকিন৷ ৩ ওভারে প্রথমে স্পেলে কোনও উইকেট না পাওয়া তাসকিন দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়েই পরপর দুই ওভারে কোনও রান না দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন। প্রথমে অ্যন্ড্রু বালবার্নিকে ৫ রানে বোল্ড করার পর ৬ রানে টাকারকে স্লিপে ইয়াসির আলীর লাফিয়ে দৃষ্টিনন্দন ক্যাচে পরিণত করেন।
১৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর যাতনা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন টাকার ও ক্যাম্পার। কিন্তু তাদের জুটিতে ৩৩ রানের সে চেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবেসিত করেন নাসুম আহমেদ। শুধু তাদের জুটিই ভাঙেননি, দ্বিতীয় দফা আক্রমণ শুরু করে নাসুম তার ৮ ও দলের ১৪ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে দলের বড় জয়ের রেখা চিহ্ন একে দেন। ক্যাম্পার ১৮ ও ডিলেনি ১ রান করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। এন্ড্রু ম্যাকবার্নিকে উইকেটের পেছনে কাচে পরিণত করেন মুশফিক। মুশফিকের ম্যাচে এটি ছিল চতুর্থ ক্যাচ।
নাসুমের শেষ দুই উইকেট ছিল তার ওভারের শেষ দুই বলে। পরের ওভারের প্রথম বলে উইকেট পেলে তার হ্যাটট্রিক হতো। কিন্তু মার্ক আ্যডায়ার তা ঠেকিয়ে দেন। ডকর্যাল ও অ্যাডার নবম উইকেট জুটিতে ২৬ রান যোগ করে দলের হারকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই দুই জনকেই আউট করেন এবাদত। প্রথমে তিনি অ্যডারকে ১৩ রানে আউট করেন। উইকেটর পেছনে তার ক্যাচ ধরেন মুশফিকুর রহিম। এবাদত পরেডকর্যালকে বোল্ড ৪৫ রানে বোল্ড করে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেন। ৪২ রানে নেন ৪ উইকেট। তার আগের সেরা বোলিং ছিল ৪৭ রানে ৪ উইকেট।
এমপি/এমএমএ/