মেট্রোরেল লাইন-৬
১৬ স্টেশন, ট্রেন চলবে ১০০ কিলোমিটার বেগে
স্বপ্নের মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলেই ঢাকাবাসী যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবযুগে প্রবেশ করবে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী বছরের ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের একাংশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে চায় সরকার। এ জন্য উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞের একটা বড় অংশ হচ্ছে মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণ।
মেট্রোরেল লাইন-৬ এর আওতায় থাকবে ১৬টি স্টেশন। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত এই স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে জনবহুল এলাকা এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায়। ইতিমধ্যে চারটি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। যেগুলোতে বর্তমানে নিয়মিত মেট্রোরেলের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা চলছে।
২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন থাকবে যথাক্রমে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মতিঝিল।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চলাচল করবে আগামী ১২ ডিসেম্বর। এর জন্য রেললাইন, বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ও স্টেশনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ অংশে বাণিজ্যিক চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ (ডিএমটিসিএল)।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে শুরু করার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে মানুষের ঘনত্বের বিষয়টি। মিরপুর এলাকা জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এবং ওই এলাকায় বাসবাসকারি জনগোষ্ঠির একটা বড় অংশ কর্মসূত্রে প্রতিদিন সকালবেলা নগরীর ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, সচিবালয়, পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় যাতায়াত করেন। যাদেরকে কর্মস্থলে পৌঁছতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। যুদ্ধ করতে হয় গন্তব্যের যানবাহন ধরতে। মেট্রোরেল লাইন-৬ চালু হলে তাদের এই কষ্ট লাঘব হবে।
বাড়ছে মতিঝিল পর্যন্ত
মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রথমে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরবর্তিতে এটির দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে কমলাপুর পর্যন্ত নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে সায়ও দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করার জন্য কাজও শুরু করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ওই অংশের পূর্ণাঙ্গ নকশা ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এর আগে সামাজিক সমীক্ষা, ঘরবাড়ির জরিপ, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা, পুনর্বাসন পরিকল্পনা. পরিবেশের উপর কি প্রভাব ফেলবে তার মূল্যায়ন এবং মৌলিক নকশা তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে।
ডিপোতে এখন সাত সেট ট্রেন
জাপান থেকে মেট্রোরেলের রেল কোচ আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। প্রথম রেল কোচ বা ট্রেন সেট দেশে আসে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল। এরপর পর্যায়ক্রমে গত ৩ জুন, ১৯ ও ২০ আগস্ট এবং ৭, ২৪ ও ২৫ অক্টোবর ছয় সেট রেল কোচ (ট্রেন) উত্তরার দিয়াবাড়ি ডিপোতে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সেটের কার্যকরী পরীক্ষা ও অন্যান্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন তৃতীয় থেকে সপ্তম সেট ট্রেনের কার্যকরী পরীক্ষার কাজ চলছে।
অন্যদিকে, ভায়াডাক্টের উপর দুই দফা ট্রেন চলাচলের পরীক্ষা শেষে গত ২৩ অক্টোবর থেকে প্রথম সেটের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা চলছে। এই পরীক্ষা চলবে ছয় মাস। এরপর তিন মাস চলবে সমন্বিত পরীক্ষা। এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরুর আগে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে পাঁচ মাস। এরপরই আগামী বছরের ডিসেম্বরে সরাসরি যাত্রী পরিবহনে আসবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল।
১০০ কিলোমিটার বেগে চলবে
দেশের প্রথম মেট্রোরেল ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে। যা দেশে কোনো ট্রেনের সবচেয়ে বেশি গতিতে চলার রেকর্ড। মেট্রোরেলের ট্রেনগুলোর সবকিছু জাপানে তৈরি হলেও ট্রেনের ব্রেক সিস্টেম ও এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিট আনা হয়েছে যথাক্রমে জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে।
মেট্রোরেল সূত্রে জানা গেছে,আগামী বছর ডিসেম্বরে মেট্রোরেল যখন চালু হবে তখন গড়ে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর পর একটি ট্রেন চলবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। তবে গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টায় এবং কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টায় ট্রেনের সময় বাড়বে ও কমবে। মেট্রোরেলের যে সাত সেট কোচ বা ট্রেন দেশে আনা হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটিতে ছয়টি করে কোচ রয়েছে। এতে একসঙ্গে যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব দুই হাজার ৩০৮ জন।
ভাড়া নির্ধারণ হচ্ছে শিগগির
ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলে এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে যেতে প্রত্যেক যাত্রীকে কত টাকা গুনতে হবে, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ভাড়া নির্ধারণ করবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। তারা যাত্রী ভাড়ার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে এ সংক্রান্ত কমিটির কাছে পাঠাবে। কমিটি সেটি পরীক্ষা করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রারেল চালানোর ক্ষেত্রে খরচসহ সবিকিছু বিবেচনায় নিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। বিশেষ করে মানুষের সামর্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। বাস বাড়ার চেয়ে যদি মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি হয়ে যায়, তাহলে যাত্রীরা মেট্রোরেল ব্যবহারে অনাগ্রহ দেখাতে পারেন। আবার ভাড়া এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন মেট্রোরেলের খরচ উঠানো যায়।
ভাড়া নির্ধারণের সর্বশেষ অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। খুব শিগগির ভাড়া বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে। তারপর এ সংক্রান্ত একটা কমিটি আছে, তারা এটা পরীক্ষা করবে। এরপর তারা সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।’ কবে নাগাদ ভাড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘মাস খানেক লাগবে।’
এসএ/