ডিসেম্বরেই পদত্যাগ করবেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা!
সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ চান দলের বিভিন্ন ফোরামের নেতারা। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দলীয় নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপনও করা হয়েছে।
অন্যদিকে দলীয় সংসদ সদস্যরাও জানিয়েছেন, তারা পদত্যাগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। দেশের বাইরে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্মতি পেলেই তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
গত ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে বিএনপি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। এবার বিএনপি সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানো এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি বিএনপি দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বড় গণজমায়েত করছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর) রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনকে একটা পর্যায়ে নিতে দলের নেতা-কর্মীদের চাঙা করার কর্মসূচি হিসেবে এসব সমাবেশ করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় বড় গণজমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ওই সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসার আগেই সংসদ থেকে দলীয় সদস্যদের পদত্যাগ চান দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূল থেকে জোরালোভাবে এই দাবি উত্থাপন হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও পদত্যাগের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নীতিনির্ধারণী ফোরামের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রশ্ন উঠেছে, কয়েকজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে রাজনীতিতে কতটুকু ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারবে? তারপরও বিএনপি মনে করছে যে, সংসদ থেকে পদত্যাগ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টিতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচ্যসূচির বাইরে বিএনপি দলীয় এমপিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থায়ী কমিটির দু'জন নেতা। এর আগে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে জেলা নেতাদের বৈঠকেও একই প্রশ্ন উঠেছিল। তাই দলটির নীতিনির্ধারকদের কয়েকজনও মনে করছেন, সংসদ সদস্যদের সংসদ থেকে পদত্যাগের সময় এসেছে। এরই প্রেক্ষিতে স্থায়ী কমিটির সভায় প্রস্তাব দেওয়া হয় ডিসেম্বরের আগে সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের। তাতে নীতিগত সম্মতিও দেন নেতারা। দলের পক্ষ থেকে সংসদ-সদস্যদেরকে পদত্যাগের ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করলে সরকার এসব আসনে উপনির্বাচন করতে পারে। তাই এমন সময় পদত্যাগ করবে যখন উপনির্বাচন করার সুযোগ থাকবে না।
জানতে চাইলে বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি। পদত্যাগের ইস্যুতে সংসদ সদস্যরা ও নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির নেতারা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন পদত্যাগ করতে বলবেন তখনই আমরা জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করব। এখন বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির গণসমাবেশ চলছে। ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তাই কবে, কখন পদত্যাগ করব এই ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা এখনো পাইনি। তবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে কিংবা পরে যেকোনো সময় হতে পারে।’
এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে অংশ নিলেও ভরাডুবি হয়। যদিও সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা-হামলায় বিএনপি অনেকটা দিশেহারা। দলটির নেতৃত্বেও বড় রকমের সংকট রয়েছে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে সরকারের শর্ত সাপেক্ষে বাসায় অবস্থান করছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ড নিয়ে লন্ডনে আছেন।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সংবিধানের কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় আছে যেগুলো সংশোধন-সংযোজন-বিয়োজন করতে হলে পূর্বের ন্যায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।’
আওয়ামী লীগও তো সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিল। বিএনপি কি সেই পথে হাঁটছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল হয় এমন কাজ করতে গিয়ে যদি কাউকে অনুসরণ-অনুকরণ করার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাতে দোষের তো কিছু দেখছি না।’
এনএইচবি/এসজি