ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু, নির্মূল করা যাচ্ছে না মশা
ডেঙ্গু পরিস্থিতি পাল্লা দিয়ে খারাপ হচ্ছে। চোখে পড়ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। পরিস্থিতি সামাল দিতে নগরবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নির্মূলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু তাতে মশা নির্মূল করা যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করাতেই যেন বেশি মনোযোগী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপের চেয়ে অভিযানের নামে ঢাকঢোল পেটাতেই বেশি ব্যস্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি)। নগরবাসীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে বলা, ভ্রাম্যামান আদালত পরিচালনার ভয় দেখানো ও মশা মারতে ড্রোন বা হাস-গাপ্পি মাছের গল্প যত শোনানো হয়েছে তার কানাকড়ি মনযোগও যদি মশা নিধনে থাকত তাহলে আজ ডেঙ্গু পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ রূপ নিত না।
মশার মারার ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এডিস মশা মারতে না পারলে ডেঙ্গু তো বাড়বেই। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরও অভিযোগ করে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে কোথাও একটা ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮৭ জন। সে বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল ২৬ জন। পরের বছর ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারন করে। সেই বছর মোট আক্রান্ত রোগী ছিল ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। মারা গিয়েছিল ১৭৯ জন। ২০২০ সালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সেই বছর মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৫৪৬ জন। মারা গিয়েছিল ৭ জন। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল মোট ৭ হাজার ৮৪১ জন। সে বছর মারা গিয়েছিল ১০৫ জন। কিন্তু চলতি ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৫৩ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১০৬ জন।
চলতি বছরের এখনো আড়াই মাস বাকি। কিন্তু এই সময়েই আগের বছরের পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। নিয়ন্ত্রণে আসার কোন লক্ষণ তো দেখাই যাচ্ছে না উপরন্তু আক্রান্ত ও মৃত্যুতে প্রায় প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ভাঙ্গছে।
মশক নিধনে দুই সিটির ব্যয়
মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশন মোটা অংকের টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। ডিএনসিসির ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিএসসিসির এখাতে ব্যায়ও প্রায় একই রকম। অর্থাৎ দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। তারপরও মশার উপদ্রব কমছে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, মশা নিধনে বরাদ্দ বাজেট অনুযায়ী কাজ করলে মশার উপদ্রব কমত। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনই ব্যস্ত লোক দেখানো কার্যক্রমে। ক্রাশ প্রোগ্রাম, চিরুনি অভিযান-এমন বাহারী নাম দিয়ে শুধু ঢাকঢোল পেটানো হয়।
এর বাইরে দুই সিটি করপোরেশনই ‘তাক লাগানো’ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেগুলোর ফলে প্রচার পাওয়া গেছে, কিন্তু মশা মরেনি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে জলাশয়গুলোতে হাস-গাপ্পি মাছ ছেড়ে মশার লার্ভা ধংস করা এবং মশা নিধনে ড্রোনের ব্যবহার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই মেয়র শুধু ভ্রাম্যামাণ আদালত পরিচালনা ও নগরবাসীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেই বেশি ব্যস্ত। সচেনতার অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু দুই মেয়রকে নিজেদের কাজটা ঠিকমত করে তারপর নগরবাসীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে সেটি হতো বেশি যুক্তিযুক্ত।
অবশেষে তৎপর মশক নিয়ন্ত্রণ দল
ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার কারণে মশক নিধন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আবার তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনকে। দুই সিটি করপোরেশন আবার সেই ‘চিরুনি অভিযান’ ও ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করেছে।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে বুধবার (১৯ অক্টোবর) থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করবে ডিএনসিসি।
অন্যদিকে, ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মশক নিধনে চিরুনি অভিযান ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। এটি চলমান।
এনএইচবি/এএস