তিন দফায়ও শেষ হয়নি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংস্কার কাজ
তিন বছরেও শেষ করা যায়নি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন সভাকক্ষকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নত করার কাজ। গত জুন পর্যন্ত আর্থিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩২ শতাংশ, আর বাস্তব অগ্রগতি ৪২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া ও বিভিন্ন হলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন কাজ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে।
কিন্তু নির্ধারিত সময় তো দূরের কথা— তিন দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ শেষ করা যায়নি। এবার চতুর্থবারের মতো সময় বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। যা বাস্তবায়ন করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদপ্তর।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রুচিশীল ও আধুনিক স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী সংস্কার কাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রুচিশীল ও সুন্দর কাজের পরিবেশ তৈরি করার জন্য ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কাজও শুরু হয় ছোট এ প্রকল্পটির। কিন্তু তিন বার সংশোধন করেও শেষ করা যায়নি।
এবার চতুর্থবার সংশোধনের প্রস্তাব করা হলে মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে ৩টি শর্তে সুপারিশ করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সুপারিশে বলা হয়েছে—বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ব্যাংকুয়েট হল নির্মাণ, পলাশ হলের পরিবর্তন, ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়া হলের পরিবর্তন ও পরিবর্ধনসহ বিভিন্ন সভাকক্ষের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বাস্তবায়িত প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এডিপিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও ছাড় করতে হবে। কোনো অঙ্গের ব্যয় প্রকল্প দলিলে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে যেন বেশি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২০২২ সালের জুন থেকে কার্যকর হওয়া সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকার ১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বিনিয়োগ প্রকল্প সংশোধনের ব্যাপারে (৪.১.২ এ) উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো প্রকল্প দুইবারের বেশি সংশোধন করা যাবে না। বিশেষ কারণে তৃতীয়বার বা তৎপরবর্তী সংশোধনের ক্ষেত্রে অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করতে হবে। তারই অংশ বিশেষ অবহিত করার জন্য প্রকল্পটি গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়।
যে কোনো প্রকল্প সংশোধন করতে হলে আইএমইডির সুপারিশ লাগে। বারবার সংশোধনের ব্যাপারে জানতে আইএমইডির সচিব আবু হেনা মো. মোর্শেদ জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আইএমইডি ও পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সচিব প্রদীব রঞ্জন চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, যেহেতু আমি বর্তমানে দায়িত্বে নেই। তাই কিছু বলা যাবে না। ছোট এ প্রকল্প আপনার সময়েও সংশোধন হয়েছে। এমন প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলেই না দেখে কিছু বলা যাবে না। এটাই স্বাভাবিক।
ছোট প্রকল্প হলেও চতুর্থবার সংশোধনের ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এ ব্যাপারে বলার কিছু নেই।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজে কোনো উত্তর না দিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারি প্রকৌশলী (প্রজেক্ট) সার্কেল-১ এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে কোনো উত্তর পাওয়া না গেলেও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ কর্তৃক প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। এ অনুমতি পেতে দেরি হয়। বিধায় যথাসময়ে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপত্তা অনুমতি ছাড়া কাজ শুরু করা সম্ভব হয় না। বিধায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চতুর্থবার অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে এই মেয়াদে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে পরিপত্র অনুসারে পিআইসি ও পিইসি সভা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে এক হাজার ২৭৫ বর্গমিটার শাপলা হলের সংস্কার কাজ, ৩৭০ বর্গমিটার পলাশ হলের, ৫১৪ বর্গমিটার মাশরুম হলের, ৫৭ বর্গমিটার শিমুল কল-অন রুমের, ২৩২ বর্গমিটার জেনারেল ক্যাফেটেরিয়ার, ২৪২ বর্গমিটার ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ার, ১০০ বর্গমিটার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্রের, ১৭০ বর্গমিটার আইসিসি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ব্লকের অফিস কক্ষগুলোর, ১২১ বর্গমিটার আইসিটি ব্লকের, ১২২ বর্গমিটার সচিব সভা কক্ষের, ১২৫ বর্গমিটার কেবিনেট হল লাউঞ্জের, এক হাজার ৯৫১ বর্গমিটার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন ব্লকের ছাদের সংস্কার করা হবে। এ ছাড়া ২ হাজার ৫৯৬টি আসবাবপত্র কেনা হবে। ২ হাজার ৯০৩ বর্গমিটার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রতিস্থাপন কাজ, ২০০ বর্গমিটার টেরাকোটা সরবরাহ ও সংস্থাপন কাজ, ১০০ বর্গমিটার পেইন্টিংস সরবরাহকরণ, ১২০ বর্গমিটার ২টি স্টোর এবং ২৬০ বর্গমিটার ব্যাংককুয়েট হল নির্মাণ কাজ করা হবে।
সূত্র জানায়, অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই বার সংশোধন করে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতেও শেষ হয়নি কাজ। ফলে তৃতীয়বার সংশোধন করে মেয়াদ আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তারপরও মাত্র ৪২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। তাই বাকি কাজ শেষ করতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চতুর্থবার অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এনএইচবি/আরএ/