বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১০ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সুতাং নদীর পাড়ে

কিছুদিন ধরেই একটা ব্যাপার মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছিল। তা হলো নদী। এই জীবনে কত নদী যে দেখেছি। কত নদীর জল ছুঁয়ে দেখেছি। নৌকায়, লঞ্চে, ইস্টিমারে কত রাত্রিদিন নদীতে ভেসেছি। আবার অনেক নদী আছে আজও দেখা হয় নাই। নামও জানি না। আজ কয়েকদিন ধরে মন বলছিল কোথাও গিয়ে একটু নদী দেখে আসি।
কিন্তু কোথায় যাব? কোন্ নদীর কূলে গিয়ে দেখব জল? কোনোই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
কাউকে কিছু না বলে একদিন ভোরবেলা বিমানবন্দর স্টেশনে চলে যাই। একটি ট্রেন তখন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পাই। কাউন্টারে টিকিট মাস্টারকে বলি - এই ট্টেনটি কোথায় যাবে?
- এটি পারাবত এক্সপ্রেস। সিলেট যাবে।
- আমাকে এই ট্রেনের একটি টিকেট দেন।
- কোন্ ক্লাসের টিকেট দিব?
- শোভন ক্লাসের।
সিলেট পর্যন্তই টিকেট কাটলাম। ভাবলাম, ট্রেনে যেতে যেতে নদী খুঁজব। যে নদীটা দেখতে ভালো লাগবে সেই নদীর কাছাকাছি কোনও একটি স্টেশনে নেমে পড়ব।
ট্রেন চলছে। আন্তঃনগর ট্রেন। খুব দ্রুত চলছে। জানালার কাছে সিট। খুব ভালো লাগছে। মাঠ ঘাট খালি প্রান্তর পেরিয়ে ট্রেনটি ছুটে চলেছে। মনে পড়ছিল সেই কবে ইন্টার ক্লাসে রবার্ট লুইস স্টীভেনশনের একটি কবিতা পড়েছিলাম -
'Faster than fairies, faster than witches, Bridges and houses, hedges and ditches; And charging along like troops in a battle, All through the meadows the horses and cattle...'
কিছুক্ষণ পরেই দেখি - ট্রেনটি বিকট শব্দ করে একটি ব্রিজ ক্রস করছে। নীচে চেয়ে দেখি নদী। নদীটির নাম শীতলক্ষ্যা। এই নদী এর আগে অনেক দেখেছি নারায়নগঞ্জের নিতাইগঞ্জে। নদীটা ভালো লাগলো। কিন্তু মন টানলো না তেমন। আর ট্রেনটা ছিল দ্রুতগামী। ঘোড়াশাল ফ্লাগ স্টেশনে ট্রেনটি থামল না।
হঠাৎ মনে পড়ল আমার এক ফেসবুক বান্ধবীর কথা। কাকতালীয় ভাবে ওর নাম ছিল 'নদী'। পুরো নাম নদী ইসলাম। এখানে পলাশে ওদের বাড়ি। সে এখন আয়ারল্যান্ডে ডাবলিন শহরে থাকে। ও ইনবক্সে আমাকে বলেছিল- ওদের বাড়ির কাছে নাকি 'হাঁড়িধোয়া' নামে একটি নদী আছে। নদীটা নাকি দেখতে খুব সুন্দর! আঁকাবাঁকা সর্পীল। ও এও বলেছিল যদি পারো কোনও একদিন গিয়ে এই নদীটা দেখে এসো। ট্টেনটা এখানে যদি থামতো তাহলে নাহয় নেমে এই হাঁড়িধোয়া নদীটাই দেখে যেতাম।
ট্রেনটি একসময় ভৈরব জংশন পার হয়ে আরও একটি সেতু অতিক্রম করছিল। ট্রেন থেকে নীচে চেয়ে দেখি, এ যে মেঘনা। এই নদীও দেখেছি এর আগে অনেক বার। ট্রেনটি ছুটছে দ্রুত গতিতে আখাউড়ার দিকে। এখানে কাছাকাছি কোনও স্টেশনে থামবে না। তাই এখানে আর নামা হলো না। তাছাড়া নামতামও না এখানে। কারণ আমি খুঁজছি স্বচ্ছতোয়া ছোট কোনও নদী।
ট্রেনটি একসময় আখাউড়া গিয়ে পৌঁছে। ট্রেন থেকে প্লাটফরমে নামি। একটি চা'র দোকানে বসে চা খাই। একবার ভাবছিলাম, এই ট্রেনটি ছেড়ে দিয়ে অন্য আর একটি ট্রেনে নাহয় চট্টগ্রামের দিকে যাব। কিন্তু তা আর হলো না। ট্রেন ছাড়ার সাইরেন বেজে উঠে। আমি দৌড়ে গিয়ে ট্টেনে উঠে পড়ি।
ট্রেনটি শায়েস্তাগঞ্জ জংশন পৌঁছার আগে কোথাও কোনও স্টেশনে আর থামল না। এরই মাঝে ছোট বড় দু-তিনটে নদী দেখলাম। ভালোও লেগেছিল। কিন্তু নেমে আর দেখা হয়নি।
শায়েস্তাগঞ্জ জংশনেও ট্রেন থেকে একটু নামলাম। ইতস্ততভাবে ঘোরাঘুরি করছিলাম প্লাটফর্মের উপর দিয়ে। একটা টং দোকানে বসে চা খেলাম। সিগারেটও খাই। মনে পড়ছিল অনেক বছর আগের কথা।

আশির দশকের হেমন্তকাল। সেবার আমরা কয়েকজন তরুণ কর্মকর্তা একটাি অফিসের কাজে এসেছিলাম হবিগঞ্জ ও চুনারুঘাট। আমাদের সাথে দুটো মেয়েও ছিল। মনে পড়ছিল এই স্টেশনের কাছে কোথাও একটি হোটেলে আমরা লাঞ্চ করেছিলাম। আরও মনে পড়ছিল অনেক কথা। একটি নদীর কথা। অনেক স্মৃতি ধেয়ে আসছিল অস্পষ্ট করে অনেক পিছনের পুরনো জীবন থেকে।

আরও একটি সিগারেট ধরাই। ইতোমধ্যে ট্রেন ছাড়ার সাইরেন বাজতে থাকে। আমি নির্বিকার চেয়ে থাকি ট্রেনটার দিকে। ট্রেনটি ছেড়ে চলে গেল। আমি বসেই রইলাম চা' র দোকানের সামনে বেঞ্চের উপরে।
তখন দ্বিপ্রহর হয়ে গেছে। চা'র দোকান থেকে উঠে আস্তে আস্তে হেঁটে স্টেশনের বাইরে আসি। সেই খাবার হোটেলটি খুঁজতে থাকি। কত বছর আগের কথা। নামও মনে নেই হোটেলটির।

শেষ পর্যন্ত হোটেলটি খুঁজে পেলাম। তখন ছিল টিনের চালার হোটেল। এখন সেটি পাকা। দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম হোটেলটিতে।
হোটেল থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একজন লোককে জিজ্ঞাসা করি, আচ্ছা, সুতাং যাব কীভাবে? আমি নিজেই বললাম, আগে তো ট্রেনে যাওয়া যেত।
লোকটি বলল - ঐ সেকশনে এখন আর ট্রেন চলে না। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। আপনি লোকাল বাসে অথবা অটোতে করে সুতাং বাজার যেতে পারবেন।

আমি বাসে না উঠে একটি খোলা অটোতে করে চলে যাই সুতাং রেল স্টেশনে। কেমন অপরিচিত লাগছিল স্টেশনটি। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। কোনও কর্ম চাঞ্চল্য নেই। টিকিট ঘরটি আছে। স্টেশন মাস্টারের ঘরটিও আছে । কিন্তু কোনও কর্মচারী নেই। ছোট্ট একটি স্টেশন। শুধুমাত্র লোকাল ট্রেন এখানে থামত।

সেবার অফিস ট্যুরের সময় আমার আর নমিতার উপর দায়িত্ব পড়েছিল সুতাং নদীর পাড়ে খাসিয়া পুঞ্জিতে গিয়ে কয়েকটি পরিবারের সাথে আর্থ সামাজিকের উপর কিছু তথ্য জেনে নেওয়া। আমি আর নমিতা চুনারুঘাট থেকে একটি লোকাল ট্রেনে করে এসে নেমেছিলাম এই সুতাং স্টেশনে।

এই সুতাং স্টেশনের অদূরেই সুতাং নদী। কেমন যেন প্রকৃতিকালও মিলে গেল আজকেও। সেবার ছিল হেমন্ত সময়। আজকেও হেমন্ত। ঝকমকে রোদ চারদিকে ঝিকমিক করছে । কিন্তু মনটা প্রফুল্ল লাগছে না। সেবার আমার সাথে ছিল নমিতা ৷ এবার কেউ নেই। কী উচ্ছ্বল ছলছল ছিল মেয়েটা। জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য ভূগোলে স্নাতকোত্তর করে এসেছিল । লম্বা লম্বা চুল ছিল ওর। চুলের গোছা ছড়িয়ে পড়ত কটিদেশের উপরে। আমি ওকে বলতাম - এই যে কাজল কালোকেশী মেয়ে! কখনই চুল বাঁধবে না তুমি! নদী যেমন বুক উজার করে জল কলকলিয়ে চলে তেমনি তোমার চুল ছড়িয়ে দেবে আদিগন্ত তোমার পিঠের উপরে।

আমরা সেদিন হাঁটছিলাম সুতাং নদীর পাড় ধরে।
কোথাও পাহাড়ি পথ, কোথাও আঁকাবাঁকা সমতল। আবার কোথাও উঁচু-নিচু পথ। সব পথের ধুলোয় লুটিয়ে থাকে পাহাড়ি লাল মাটি ও ঝকঝকে বালি। যেতে যেতে সবুজ প্রকৃতির মাঝে দেখা মেলে দূরের পাহাড়। নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ের থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

পথে চলতে চলতে পড়ছিল টিলা। পথের দুপাশে কত নাম না জানা জংলী ফুল ফুটে আছে। বিচিত্র সব সুবাসে বাতাস ভরে আছে। সুতাং এর স্বচ্ছ জল ছোঁয়ার জন্য নমিতা আকুল হয়। পাড়ে থেকে জলের কাছে যেতে ও ভয় পাচ্ছিল। নমিতা আমাকে কুসুমে কোমলে ডাকে - রঞ্জন, তুমি আমার হাতটি ধরো।

কি পাগল মেয়ে যে নমিতা! আমার একটি হাত ওর পাঁজরে জড়িয়ে নিয়ে জলের কাছে চলে যায়। ও বলছিল - এত টলটলে জল, এত স্বচ্ছ রূপ ! এত পবিত্র! আমার সাথে তুমিও এই জল স্পর্শ করো। আমাকে তুমি অশেষ করো। দাও জগৎ দাও। দাও তোমার মঙ্গল ছোঁয়া। তুমি নিয়ে নাও আমার ধনদৌলত, সকল ঐশ্বর্য। সেই কত যুগের আগে তোমাকে দেখেছিলাম। সেই কতকাল ধরে এমনই ক্ষণ আমি চেয়েছিলাম। এমনই একটি নদীর কাছে তোমার মতো কাউকে আমার সমস্ত কিছু দান করতে ইচ্ছে জাগত। আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসেছে আমার জীবনে। তুমি ফিরিয়ে দিও না
কী বিমুগ্ধ জীবন পায় মানুষ! হিরণ্য আখরে দাগ কেটে রয় তা জীবনের পরতে পরতে।
নদী থেকে চলে আসি ঝর্ণার ঝিরিপথের বাঁকে। এযে রবি ঠাকুরের নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গের গান এখানেও। কেমন ভয়ংকর নির্জনতা চারদিকে! নমিতার বুক ধকধক করছিল। ও বলছিল - এ তুমি কোথায় নিয়ে এলে! এ যে স্বর্গ এখানে নেমে এসেছে! সবকিছু স্বপ্ন নয় তো!
তখন ছিল অপরাহ্ন সময়। সুতাং নদীর জল ছিল স্থির। ডাহুক উড়ছিল। পানকৌড়িরা বসেছিল শিয়ালপোতা গাছের ঝাড়ে। তখনও রৌদ্র করছিল ঝিলমিল। নমিতা ওর বুকের পাঁজর থেকে আমার হাত সরে এনে আমার বুকের ভিতর ওর বুক সমর্পণ করে। আবারও বিহ্ববলতা! দীর্ঘ আলিঙ্গন যেন শেষ হতে চায়নি সেদিনের সুতাং নদীর পাড়ে মনুষ্যহীন নির্জন সেই অপরাহ্ন বেলায়।
আজ এত বছর পরে সুতাং নদীর কূল ধরে যখন হাঁটছিলাম তখন চারদিক থেকে কী এক নস্টালজিক বেদনা এসে মনকে আচ্ছন্ন করছিল। সুতাং নদীতে জল বয়ে চলেছে আগের মতোই কিন্তু কেমন যেন বিষাদ হয়ে আছে সে জল। পায়ে পায়ে চলছিলাম ধীরে। কিন্তু পা চলছিল না। পথ চলতে ব্যথা করছিল দু'পায়ে।
আরও কিছু দূর চলে যাই সেই টিলাটার কাছে। টিলার গায়ে লতাগুল্মে ভরে আছে। শুধু পাশের ঝর্ণার জল আজ আর ঝরে পড়ছে না ৷ সব আজ শব্দহীন। ভাবছিলাম আর এগুবো না সামনের দিকে। মনও চাইছিল না এগুতে । ফিরে চলে আসতে থাকি পরিত্যক্ত সুতাং স্টেশনের দিকে।
পথ দিয়ে ফিরছিলাম আর ভাবছিলাম সেই তরঙ্গায়িত যৌবন সময়ের কথা। কতজনকেই তো ভালো লেগেছিল। নমিতা ছিল তাদেরই একজন। মনে হতো মেয়ে তুমি আমার কিছু একটা হও। স্বপ্নও দেখতাম ওকে নিয়ে। এ রকম কত স্বপ্ন যে ভেঙ্গে গেছে সেই সময়ে। সেই ভাঙ্গা গড়ার সময়কাল কখন যে শেষ হয়ে গেছে তাও বুঝতে পারিনি। আমার গত জীবনকাল ধরে নমিতার মুখচ্ছবি যে মনে ভেসে উঠেনি তা নয়। এই সুতাং নদীর পাড়ে ওর বুকের সেই উষ্ণতা আজও আমাকে বিচলিত করে। কখনও কখনও নিজেকে খুব খালি খালি লাগে। ওর মায়াময় মুখখানি সুতাং নদীর জলের মতো হৃদয়ের ক্যানভাসে এখনও অস্পষ্ট জলছবি হয়ে আছে। সৌম্য বাতাসে কান পাতলে তার পায়ের ধ্বনি বাজে। সেই কবে নমিতা আমার হতে চেয়েছিল এক হৈমন্তিকা দিনে। ঝরা পাতাচিহ্ন ফেলে সে আর পুনরায় ফিরে আসবে না কোনোদিন। অথচ বনফুলের বিজরিত গন্ধ বাতাসে আকুল হবে এই সুতাং নদীর পাড়ে শতসহস্র বছর কাল।
কত যে ভ্রম আজও হয়!
সুতাং স্টেশনে গিয়ে টিকেট ঘরের দিকে এগিয়ে যাই। মাস্টার মশাইকে বলি - আমাদের ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশনের দুটো টিকেট দেন। কেউ কোনও উত্তর দিচ্ছে না। টিকেট ঘরটি যে তালাবন্ধ! ভিতরে কেউ নেই। পাশে চেয়ে দেখি - নমিতাও নেই।

 

ডিএসএস/ 
 

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানিদের বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানিদের জন্য ‘সার্ক ভিসা ছাড়’ সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। সেই সঙ্গে ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দেশটির মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারত:

সিদ্ধান্তগুলো হলো:

১. সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত ঘোষণা। ভারত বলছে, পাকিস্তান যতদিন সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধ না করবে এবং সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ত্যাগ না করবে ততদিন এটি স্থগিত থাকবে। ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খান সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় বহুল আলোচিত এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

২. অবিলম্বে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাদের বৈধ নথি রয়েছে তারা ১ মে এর আগে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবেন।

৩. সার্ক ভিসা এক্সেম্পশন স্কিম (এসভিইএস) এর আওতায় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। পাকিস্তানি নাগরিকদের অতীতে জারি করা যেকোনো এসভিইএস ভিসা বাতিল বলে গণ্য হবে। এসভিইএস ভিসায় বর্তমানে ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদেরও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে।

৪. নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের সামরিক, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত ছাড়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় পাবেন তারা। ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের এই পদগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। উভয় হাইকমিশন থেকে সার্ভিস অ্যাডভাইজারের পাঁচজন সাপোর্ট স্টাফকেও প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

৫. হাইকমিশনের সামগ্রিক জনশক্তি ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা ১ মে এর মধ্যে কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার বিকালে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হয়। অস্ত্রধারীরা জঙ্গল থেকে বের হয়ে পর্যটকদের ওপর গুলি চালাতে থাকেন। হামলায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তত ২৬।

পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়েবার সহযোগী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) মঙ্গলবার বিকালের হামলার দায় স্বীকার করেছে।

এদিকে এ ঘটনায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীর’র পেহেলগামে হামলার ঘটনায় পাকিস্তান উদ্বিগ্ন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় পাকিস্তান নিন্দা প্রকাশ করছে। নিহতের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা প্রকাশ করছে পাকিস্তান।

এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বার্তায় তিনি বলেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমরা এ জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা আবারও নিশ্চিত করছি যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সবসময় দৃঢ়।

Header Ad
Header Ad

বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য চালু হবে ভাতা: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দেশে সরকার পরিবর্তন হলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি জানিয়েছেন, সরকার গঠনের পর যারা চাকরি খুঁজেও পাচ্ছেন না, তাদের জন্য এক বছরের ‘শিক্ষিত বেকার ভাতা’ চালু করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই তাদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে সরকার।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর জেলা বিএনপির নেতাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত পরিকল্পনা নিয়ে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, “আমরা একটি পরিকল্পনা করছি—যাতে যারা এখনো চাকরি পাননি, তারা যেন সরকারের সহযোগিতায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সহায়তা পান। এই সময়টিতে সরকার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উভয়ের উদ্যোগেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক তরুণ নেতাকর্মী, যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তারা বয়স পার করে ফেললেও কোনো চাকরি পাননি। “শুধু ছাত্রদল নয়, আরও অনেক সাধারণ মানুষ আছেন যারা সরকারের অনুগত না হওয়ায় চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন। এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে,” বলেন তারেক।

বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা চালু করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, “২০ কোটির বেশি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বিশাল বাজেট ও কাঠামোগত পরিকল্পনা দাবি করে। এটা অব্যবস্থাপনার জায়গা নয়, এটা করতে হলে বাস্তবতা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে এগোতে হবে।”

তিস্তা নদী ঘিরে রংপুর অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে বিএনপির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “তিস্তা শুধু নদী নয়, রংপুর বিভাগের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতীতে তিস্তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি হয়েছে, কিন্তু মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিএনপি সরকারে গেলে তিস্তা সমস্যা সমাধানে বাস্তব ভিত্তিক ও জনগণকেন্দ্রিক প্রকল্প গ্রহণ করবে।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু এবং উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। সঞ্চালনায় ছিলেন নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

Header Ad
Header Ad

এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জমিগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ৪০৭ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব জমি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে আবেদন করেন উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে চলমান তদন্তে দেখা যায়, তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ জমি ও স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ তারা অন্যত্র বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায়। ফলে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষায় এসব জমি ক্রোকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

জমিগুলো যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ট্রেড লিংক, ইভেন্ট টাইটান ইন্টারন্যাশনাল, পাইথন ট্রেডিং কর্নার, ইসলাম ট্রেডার্স, ডায়মন্ড বিজনেস হাউস, এএইচ সেন্টারসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সরাসরি আর্থিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।

এর আগেও এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক দফায় আদালত সম্পদ ও শেয়ার অবরুদ্ধ এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে তার ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা শেয়ার, জমি ও ব্যাংক হিসাব পর্যায়ক্রমে অবরুদ্ধ ও ক্রোক করে আদালত।

এস আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে এখন পর্যন্ত ১৩০০-এর বেশি ব্যাংক হিসাব, হাজার একরের বেশি জমি এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার শেয়ার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। দুদক জানিয়েছে, তদন্তে আরও নতুন সম্পদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

দুদক বলছে, মানি লন্ডারিং ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই তদন্ত চলমান রয়েছে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানিদের বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ
বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য চালু হবে ভাতা: তারেক রহমান
এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ
সীমান্তের সব ভিডিও সত্য নয়, আবার সবটা যে মিথ্যা তাও নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আন্দোলনের নামে রাস্তা অবরোধ না করার অনুরোধ ডিএমপির
টাঙ্গাইলে বেড়েছে গরমের তীব্রতা, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
সরকার সরিয়ে না দিলে পদত্যাগ করব না: কুয়েট ভিসি
বিরামপুরে ছিনতাইকালে পুলিশের হাতে 'ভুয়া সেনাসদস্য' আটক
হাসিনাকে যারা খুনি হতে সাহায্য করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে: সারজিস আলম
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, খুললো আবাসিক হল
কাশ্মীরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, মসজিদে ঘোষণার পর বিক্ষোভ শুরু
ইতিহাস গড়ল জিম্বাবুয়ে, ঘরের মাঠে লজ্জার হার বাংলাদেশের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ' ইউনিটে প্রথম আব্দুল্লাহ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পারভেজ হত্যা: প্রধান আসামি মেহরাজ গ্রেপ্তার
তুরস্কের ইস্তানবুলে একের পর এক ভূমিকম্প
এবার সেই গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন পরীমণি
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে: প্রধান উপদেষ্টা
আমরা সংস্কারও চাই, নির্বাচনও চাই: মির্জা আব্বাস
কাশ্মীরের হামলা ‘সাজানো’ দাবি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের
ভাইরাল ভিডিও সমন্বয়ক রুবাইয়ার নয়, দাবি এনসিপি নেতার