"ট্রেনের অপরিচিতা"
সবেমাত্র ভর্তি হলাম।ভেবেছিলাম ছোট্ট ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে দেখব।।কিন্তু সময়ই বা কই?ট্রেন যে ৩.৩০ মিনিট। কালবিলম্ব না করে রিক্সা ডেকে সোজা রওনা দিলাম কমলাপুর রেলস্টেশনে।
যাক....হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। স্টেশনে যথাসময়েই পৌঁছলাম। জানালার পাশের সিটটায় বসে বসে সেই কিছুক্ষণ আগের মধুময় স্মৃতি মনের আয়নায় অবলোকন করতে লাগলাম। কী সুন্দর তার চাহনি! তার সৌন্দর্যে স্বয়ং লজ্জাবতীও যেন লজ্জায় মাথা নুইয়ে দেয়।সেই জায়গায় আমার দিকে ক্ষণিকের আঁড়চোখে চাহনি যেন হৃদয়ে তীর লাগার মতোন।ভাগ্যিস... বেশিক্ষণ তাকায়নি। নাহলে যে জবির ক্যাম্পাসেই আমার সমাধি হয়ে যেত! সেখানে ভালোবাসার দৃষ্টান্তস্বরূপ আমার সমাধি— খ্যাতি পেতো "জবির মজনু" নামে।
অকস্মাৎ এক জনাব আমার রোমান্টিক দিবাস্বপ্নে এসে বলল, "বাবা! ট্রেন কখন ছাড়বে?" আমি তো রেগে অগ্নিশর্মা।ইদানীং রাতেই স্বপ্ন দেখি না,যা-ও একটা দিনে দেখছিলাম,ব্যাটা বুড়ো স্বপ্নটা ভেঙ্গে দিলো । প্রশ্নটা অন্য কাউকেও তো করতে পারতো না কি?
তারপর পাশের জন থেকে জানতে পারলাম ট্রেন যথাসময়ে ছাড়বে না। আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি এসেছেন বলে নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু রাস্তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষার প্রহর যেন মুহূর্তেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো।
ঠিক তখনি ক্যাম্পাসে দেখা সেই মেয়েটি। ঠিক আমার সামনের সারির কোনাকোনি সিটে এসে বসলো। তৎক্ষণাৎ হাত চিমটি কেটে দেখলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না একদম। তার সৌন্দর্যের শুচিতা যেন গোধূলির কোমল আলোকেও হার মানায়।একপানে চেয়ে থাকলাম। আর ভাবতে লাগলাম আমাকে দীর্ঘক্ষণ সেই সৌন্দর্য অবলোকন করাতে স্বয়ং ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে এসে রোড ব্লক করে রাখলেন। অপেক্ষা স্বভাবতই বিরক্তির। কিন্তু সেদিন ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা ছিলো যে কতো মধুর! এই ক্ষুদ্র যাএা যেন মহাযাএায় রূপ নিলো।
বাল্যকালে বন্ধুরা আমাকে কিউট বলিয়া উপহাস করতো। পাত্তা দিতাম না। ভাবতাম মজা নিচ্ছে। কিন্তু সেদিন মনে হলো আমি মনে হয় আসলেই কিউট। কতক্ষণ পর পর কোণার সিটটা থেকে তার আঁড়চোখের চাহনি যে তাই প্রমাণ করে। যতবার তাকাচ্ছিলো ততবার মনে হচ্ছিলো হৃদয়ে যেন একেকটা তীর ধেয়ে আসছে। যে তীরের রং গোলাপি।ইচ্ছে হচ্ছিলো গিয়ে কথা বলতে। তার মুক্তঝরা হাসি আরো কাছ থেকে দেখতে। কিন্তু তার বাপ তার পাশ একেবারেই ছাড়ছিলো না। বিন্দুমাএ সুযোগ পাই না। চোখ যে সত্যিই কথা বলে। তাইতো আড়চোখে একে-অপরকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে কাটিয়ে দিলাম। এই দীর্ঘসময় যে এতো দ্রুত শেষ হয়ে গেল টেরই পেলাম না। পলকেই আমার গন্তব্য শেষ। ।ইচ্ছে করছিলো না নামতে,ভাবছিলাম এই গন্তব্য যদি অনন্ত হতো। যার কোনো শেষ নাই। জানিনা তার গন্তব্য কোথায় শেষ হবে........কিছুই জানিনা।
তবে এতটুকু জানি আমার মনের হৃদয়ে সে ভালোবাসার তীর এখনো গেঁথে আছে।তার অপেক্ষায় আছি।হয়তো খুব শীঘ্রই কাকতালীয়ভাবে তার দেখা পাবো।
ডিএসএস/