"ঝড়া পাতার প্রেম "
শীতের মধ্য ভাগ পেরিয়ে গেছে। প্রকৃতি এখন মাতাল, চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা মাদকতা। দুপুরের নিরবতা উদাস বাউলের করুন সূরের আর্তনাদ যেন। এই সময়টা আবির'কে মাতাল করে তোলে। জানালার কার্নিশ বেয়ে ক্ষানিকটা রোদ বিছানায় এসে পড়ে। প্রকৃতি তার মাতাল আবরণে আবিষ্ট করে তোলে পৌরুষেয় কানায় কানায় দোলা দিয়ে যায়। ফাগুনের আগমনী বার্তায় চারিদিক আমোদিত। জানালার ফাক গলে বহুদুর বিস্তৃত মাঠ সবুজের সমারোহ। কাপা কাপা রোদ আবির মাখায়।
মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি প্রমান সাইজের বরই গাছ। বেশ কাঁচা -পাকা বরই'য়ের থোকায় ডাল গুলো হাতের নাগালে। সূর্য টা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। বরই গাছের পাশে এক, দুই, তিনটা পরী জ্বলছে। হ্যাঁ এসে গেছে হৃদয়ে আগুন জ্বালাতে। টুকটুকে লাল পরীটা ওটাই "দোলেনা" আবিরের সদ্য কৈশোর পেরোনো হৃদয়টা যে পুরোপুরি দখল নিয়ে আছ। সাথে ওর বড় বোন হিম আর চাচাতো বোন রুবিনা। দুরন্ত তিন বালিকার দস্যিপনা বরই গাছ সহ পুরো মাঠ। আলোড়িত। বরই পাড়তে ওরা লাঠি, হাত, কখনো ডিল ছুড়ে মারছে। দোলেনা'র নজর বরই ছাড়িয়ে 'এই জানালার দিকে।
দোলেনা'কে দেখেই বুকের গহিনে একটা আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে। ঘর থেকে বের হয়ে আবির মাঠের কাছে কাঠাল তলায় এসে দাড়ায়। এ-সময় রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসে আবিরের চাচা সম্পর্কের হাবিব মিয়া। চাচা চাকুরী করেন চিটাগং। ছুটিতে বাড়ি এসেছে। আবির কে এখানে দাড়ানো দেখে ফোড়ন কাটে। কি বাজান এইহানে খারাইয়া কি দেখতাছো। আম্মজান রে গিয়া কয়ডা বরই পাইড়া দেও। আবির একটু লজ্জিত হলেও চাচার কথাটা খুব পছন্দ হয়। দোলেনা হাত ঈশারায় ডাকে আবির কে। বুকের মাঝে ধক করে শব্দ হয়। এদিক ওদিক তাকিয়ে এগিয়ে যায় আবির। কাছাকাছি গিয়ে হিমকে ব'লে আবির তোমরা কেমন আছ হিম' আপু? মুচকি হেসে হিম ব'লে আমরা সবাই ভালো আছি, কিন্তু একজন ভাল নেই! আমার আদরের মিষ্টি বোনটি ভালো নেই। তোমাকে না দেখে সে অস্থির, আমাদেরকে বরই খাবার অজুহাতে এখানে এনেছে। এবার ঝাঁকি দিয়ে কয়টা পাকা বরই পেরে দাও।আমরা বরই নিয়ে চলে যাই, তারপর তুমি তোমার বরই নিয়ে সরে পরো। সন্ধার আগেই আবার ওকে বাড়ির কাছাকাছি ছেড়ে দিয়ে এসো। ওদের পার করে দিয়ে দোলেনা -আবির সামনের দিকে হাটতে থাকে। নিভৃত পল্লীর ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা পথ বেয়ে দু'জন হাটতে থাকে। কখন আনমনে আবির দোলেনা'র হাতটা টেনে নেয় বলতেই পারে না। শুধু মিষ্টি একটা সময় উপলব্ধি করে। ভাললাগার মাদকতায় ভরপুর চারিদিক। ঝোপঝাড় পেরিয়ে নিরিবিলি জায়গায়টায় গিয়ে বসে ওঁরা। গল্প -আড্ডায় কখন সন্ধা ঘনিয়ে আসে। দোলেনা আবিরের মাথাটা নিজের কোলের দিকে টেনে নেয়। এবার চুলের ভিতর হাত ঢুকিয়ে বিলি কাটতে থাকে। এবার সুখের অনন্ত ছোঁয়ায় চোখ বন্ধ করে আবির। এ হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ হয় উদাস প্রকৃতি, নির্মল বসন্ত আর প্রেয়সী নারী সোহাগী ছোঁয়ায়। দোলেনা আবিরের কপালে চুমু খায়,তারপর বলে এভাবে কতদিন? তুমি সারাক্ষণ দেশ উদ্ধারে ব্যাস্ত, ছাত্র রাজনীতি, সভা, সেমিনার, আবার কোথায় হারিয়ে যাও! আমাকে নিয়ে তোমার কোন দায়িত্ব, চিন্তা আছে। আবির চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দেয়; কেন তোমাকে আমি ভালবাসায় পুর্ণ কর দেইনি? আমার অস্তিত্বের সবটুকু দিয়েই তোমাকে ভালোবাসি। নি:শ্বাস ছেড়ে দোলেনা বলে শুধু ভালবাসলেই সব হবে মশাই। সংসার করতে হবে না? এবার আবির সোজা হয়ে বসে। দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। বলেঃ চলো চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে, চলো তোমাকে দিয়ে আসি। আবার তোমাদের বাড়িতে খুঁজাখুঁজি শুরু হবে। দোলেনা নির্বিকার বসে উত্তর দেয় খুঁজুক, যা খুশি করুক আমি আজ সারারাত ধরে তোমার মাথা বুকে ধরে এখানে বসে থাকবো। তোমায় ভালবাসবো, আদর করবো। আবির বলে দুর পাগলী তাই কি হয়? চলো তোমার বাড়ির লোকজন চিন্তা করবে। আবির এক প্রকার জোর করেই দোলেনা কে টেনে তোলে। ওরা কিছু দূর আসার পর-ই সামনে থেকে এগিয়ে আসে 'হিম'। কিরে তোদের আক্কেল কবে হবে? আবির তুমি ও, কথা টেনে নিয়ে আবির বলে : আমি আগেই বলেছি আপু। ওই তো পাগলামি করছিল, আমি জোর না নিয়ে এলে ---। হিম ঠিক আছে তুমি যাও, আমি ওঁকে নিয়ে বাড়ি গেলাম।
আবির এখন উলটো পথে হাটতে শুরু করে।
একাকী নিরালায় পথ চলা ওর সারাজীবনের নেশা। রাত হলে সেই নেশা প্রকট হয়ে আসে। আনমনে হেটে অনেক দূর চলে আসে আবির। চিন্তার জগতের সবটা জুড়েই এখন দোলেনা। মেয়েটা পাগলের মতো ভালবাসে আবির কে। কিন্তু আবির যেই জগতের মানুষ, সেখানে সংসার, প্রেম, ভালবাসা মানিয়ে নেয়া কঠিন। আবির এখনোপড়ালেখা শেষ করতে পারেনি। এরি মাঝে ছাত্র রাজনীতি,লেখালেখি, সাংস্কৃতিক আন্দোলন এমনি নানা আঙ্গিনায় পা রেখেছে। সবচাইতে বড় বিষয় ও ঘুরতে ভালবাসে। বন,পাহাড়, সাগর,নদী ওকে আকর্ষণ করে প্রচন্ডভাবে। নেশার টানে প্রায়ই হারিয়ে যায় আবির। পাঁচ, দশ, পনেরো দিন,নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ানো। এ-ই হারিয়ে যাওয়া নিয়ে আবিরের বন্ধু, আত্মীয়, শিক্ষক, মা-বাবা সবাই শঙ্কিত। কখন যে প্রকৃতির নেশার টানে সে লাপাত্তা হয়ে যায়। এমনি ক্ষেপা বাউল আবিরকে সংসারের বাঁধনে জড়াতে চায় দোলেনা। প্রেমে মোহাবিষ্ট করে আঁচলে ঢাকতে চায়। তাই কি করে সম্ভব! তাই ভাবছিল আবির। দোলেনা কে সে ভালবাসে ঠিকই তাই বলে বাঁধনে জড়ানো? কোনভাবেই সম্ভব নয়। ভাবনার অতল রাজ্য পেরিয়ে সে নিজেকে আবিষ্কার করে রেল লাইনের পাশে।
এই জায়গাটা বেশ আকর্ষণ করে আবির কে। রেললাইনের দু'পাশে বিল-ঝিল মাঝ বরাবর চলে গেছে সমান্তরাল রেলপথ। কতদূর? সোজা হয়ে দুটি লাইন সমান্তরাল শত শত মাইল চলে যায়। এখানে কেমন যেন একটা খুব পরিচিত আবহ। বাবলা বনে এক ধরনের পাখির কিচির মিচির। লাইনের পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া টেলিফোনের স্টিলের তার গুলো সব সময় একটা শব্দ তৈরি করে চলছে। এখন রাত তাই তিতির পাখি গুলোর আনাগোনা নেই। আবির ব্রীজের পাকা ডালের উপর বসে। জায়গা টা বেশ পরিচ্ছন্ন। নীচ দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ কাচের মতো পানির স্রোত, মাছেদের চলাফেরা বেশ নজরে পড়ে। পাশের ঝোপঝাড়ে বিপুল বুনো ফুলের সমাহার। নানা রকম আয়েশি সুভাস ছড়ায়। ঐ যে লতানো গাছটা গোল গোল লাভের মতো ফল ধরে আছে। গ্রামের ভাষায় এটাকে গিলা ব'লে। বিয়ের সময় এটা বেশ কাজে আসে। "হলুদ -গিলার" গিলা এটা। আকাশ ভরা মিটিমিটি তারার মেলা। কি যেন আনন্দ আয়োজনে বিমোহিত। ছায়ায় ঝোপের আঁধারে শত-শত জোনাকি ঝাঁক বেঁধে আলো বিলিয়ে যায়।
ভাবনার রাজ্যে ছন্দ পতন ঘটায় একটি রেলগাড়ী। দূরে থেকে মনে হয় লম্বা একটা আলোর মিছিল এঁকেবেঁকে এগিয়ে আসছে। খুব কাছ ঘেঁষে রেলগাড়ী টা চলে যায় হুইসেল বাজিয়ে। আবিরের ওঁকে সচেতন করতেই এ-তো জোরে বাঁশি বাজে। আরিফের মনে পড়ে ছোট বেলায় বাবা -মায়ের হাত ধরে যখন নানা বাড়ীতে যেতো। রাতের বেলা রেলগাড়ী থেকে নেমে বাবা-র হাত ধরে হাঁটার সময় কিংবা মায়ের কোল ঘেষে, এগিয়ে যেতে যেতে মনে হতো রেলগাড়ী টা আলোর মশাল জ্বেলে আবারও ফিরে আসছে। তাই দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে যেত আবির। গাড়ি টা না আবার হুড়মুড় করে তার উপ-র এসে পড়ে! যদিও শীত এখনো বেশ আছে কিন্তু এখানকার ঝিরিঝিরি বাতাস এত মিষ্টি মনে হয়। এই বাতাস টা বেশ আয়েশ করে গায়ে মাখে।
বাতাসের নামটা কিন্তু বেশ লিলুয়া বাতাস, লিলহারি লিলহারি। মায়ের কাছে শুনা গল্পের লিলুয়া বাতাস এটা! এটা আবিরের নিজের মতামত। এ বাতাস কেউ তাক চিনিয়ে দেয়নি। সে নিজেই মিলিয়ে নিয়েছে। শেষ রাতের দিকে এই বাতাসে র আবির্ভাব হয় বেশি। আবিরের ধারণা এত মিষ্টি বাতাস টা স্বর্গ থেকেই আসে। আহ! যদি স্বর্গে যাওয়া যেত। তাহলে সর্বক্ষণ এমনি বাতাস টা গায়ে মাখা যেত। যাক আপাতত যতটুকু সম্ভব। এবার উঠে পড়ে আবির হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পথ ধরে। পথে মানুষ জন নাই বললেই চলে। যারা যায় কেউ একা নয়, লাইট,লন্ঠন, নিয়ে অনেকজন একসাথে। আবির কে একা হাটতে দেখে অবাক হয়। রাস্তায় হাটতে কুকুর, বিড়াল, সাপ অনেকের দেখা মিলে যায়। শিয়াল, খাটাশ, খেক শিয়াল ও স্বাগত জানায়।
এবার মাঠের মাঝ বরাবর হাটতে গিয়ে শিশির সিক্ত হয় পা। বেশ লাগে বিষয় টি দুর্বা ঘাসের শিশির ভেজা আলিঙ্গন।
রাত পাখিদের ওড়াউড়ি বেশ চোখে পড়ে। সামনের বাতাবি লেবুর বাগানে সাদা ফুলের সমাহার। কি মধুর সৌরভে চারদিক আমোদিত। দুরে কোথাও কুকুরের পাল দল বেঁধে হল্লা করে এরি মাঝে শিয়ালের হুক্কাহুয়া ভেসে আসে। নিজ আঙ্গিনায় যখন পা রাখে আবির তখন মধ্য রাত। চুপিচুপি ঘরের দরজা খুলে। বাতি জ্বালিয়ে কাপড় বদলায়। এবার কলপাড়ে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, টেবিলে ঢাকা দিয়ে রাখা খাবার খেয়ে, বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের ঘুম দু'চোখের পাতায় স্বপ্ন মাখায়।
সারাটা বিকেল বেশ আনন্দে কেটে যায়। ভলিবল টুর্নামেন্টের আজ চুড়ান্ত আয়োজন ছিল। পড়ন্ত বিকেল গুলো এসময় বসন্তের নিবিড় আলিঙ্গনে ঢাকা। তাই ধুসর খেলার মাঠগুলো গোধূলির আবির মেখে রাঙা হয়ে উঠে। আজকের টুর্নামেন্ট জিতে আসায় আবিরে'র ভূমিকা ছিল অনেকখানি। এই একটি জায়গায় ওর স্বাতন্ত্র্য, অসাধারণত্ব নিজেকে সবখানে তুলে ধরা, দৃষ্টির মধ্য- মনি থাকা। স্কুল, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে - ছাত্র রাজনীতি,সৃংস্কৃতি, খেলাধূলা সবখানেই নিজেকে আবিষ্কার করা। কিন্তু স্থির নয় কোন খানে। কোন এক অজানার টানে ভেসে বেড়ানো। যে কারণে তার রাজনীতির আদর্শিক বড় ভাই মুন্না ভাই, সবাই কে ডেকে বলে এ-ই আমাদের আবিরএকবিংশ শতাব্দীর আদিম বাউল।
বাইরে থেকে ফিরে এসে সোফায় গা'এলিয়ে ভাবনায় তলিয়ে যায়। হঠাৎ নজরে আসে সামনের টি টেবিলে রাখা একটি কাগজ চার ভাজ করা। পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দেয়া। কাগজটা হাতে নিয়েই লেখাটা চিনতে পারে। গোটা গোটা সুন্দর লেখা শব্দের পাশে সাজানো শব্দ।দোলেনা'র হাতে লেখা চিঠি। প্রেমের আবেগময় তারনায় বসন্তের ছায়া ভাসমান। দোলেনা লিখেছে '', তার মা-বাবা দু'জনেই নানু বাড়ি গেছে বড় আপুর বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে। আজ তারা ফিরবে না। তাই সে যেন তাদের বাড়িতে চলে যায়। রাতে সেখানেই থাকতে হবে। চিঠি হাতে নিয়ে বেশ কিছু সময় চিন্তা করে আবির! তারপর চিঠির শেষ লাইনটা চোখের সামনে আবার মেলে ধরে **। তুমি না এলে তোমাদের বাড়িতে রাত দুপুরে আমি চলে আসবো তখনকার পরিস্থিতি তোমাকেই সামাল দিতে হবে। হুমকি কে যে শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে : এমনটা গ্যারান্টি দিবে কে? যে দস্যু মেয়ে রে বাবা! যাক সময়কে নিজের আঙ্গিনায় আগলে রাখা। মনের মাঝে বাসন্তী রং প্রসান্তি আর ভয়ের আলিঙ্গন। কাপড়-চোপড় পরে মাকে বলতে আসে। মা আবিরে'র দিকে না তাকিয়েই বলে : - হিমে'র মা এসেছিল বিকেলে , ওঁরা হিমে'র নানুর বাড়িতে গেছে জরুরি কাজে। তাই তোমাকে পাঠিয়ে দিতে বলে গেছে আমাকে। যা-তু বাবা রাতটা ওদের বাড়িতে থেকে আয়,মেয়ে দুই টা একা আছে। ঠোঁটের কোনায় রহস্যময় একটা হাসি ঝুলিয়ে -ঠিক আছে ব'লে বের হয়ে যায় আবির। সন্ধা তারার আলোয় গায়ের মেঠো পথ হাল্কা চাঁদের আলোয় চারিদিক আমোদিত। দুর থেকে ভেসে আসা অজানা ফুলের সুবাস। মাঝখানের বাইদ পার হয়ে চলে আসে দোলেনা'দের বাড়ি। ওরা দুই বোন বাড়ির বাইরে বাগানের সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসা। দোলেনা বেশ সাজুগুজু করে আছে। ওকে দেখলেই বুকের গহিনে একটা পাখি ডানা ঝাপটায়। সেই কাঁপুনি টা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আবিরকে দেখে হিম' বলঃ- তুমি এসেছো? এবার জিনিস টা বুঝে নিয়ে আমাকে মুক্তি দাও! তোমরা ঘরে যাও, আমার আবার রান্না বাকি আছে। আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে ঃ- তোমার জন্য বাজার করে রেখে গেছে তোমার খালা মনি, এখন রান্না করতে হবে আমাকে। তোমরা গল্প করো আমি রান্না ঘরে গেলাম।
এবার আবিরে 'র চোখে চোখ রাখে দোলেনা এতক্ষণে সাহেবের আসার সময় হলো? সেই বিকেল থেকে তোমার অপেক্ষায়। এ-সব তোমাকে বলে লাভ কি? আমার অপেক্ষায় তু তোমার কিছু যায় আসে না! দোলেনা'র দুচোখের তারায় অভিমান ঝড়ে পড়ে। আবির হেসে বলেঃ আমার কিছু না এসে -গেলে সন্ধা রাতে মাঠ পেরিয়ে মহারানীকে পাহারা দিতে এলাম কেন? চোখে-মুখে রহস্যের দ্যুতি ছড়িয়ে বলে দোলে না : ঠিক আছে দেখা যাবে ক্ষণ।
এবার আবিরের একটি হাত চেপে ধরে দোলেনা। কিশোরী নারীর চপলতা, আবেগ জড়ানো কন্ঠে আবিরের চোখে চোখ রেখে বলে :- তোমায় না পেলে আমি মরে যাবো। ঠোঁটের কোনায় রহস্যময় একটা মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে আবির ব'লে :- আমি কি ফুরিয়ে যাচ্ছি নাকি ! না হারিয়ে গেছি সাহারা মরুর বুকে?তোমার উদাসীনতা আমাকে কষ্ট দেয়। পরিবারও সংসারের প্রতি তোমার কোন মায়া নেই। তুমি কখন কোথায় হারিয়ে যাও তার ঠিকানা নেই। তোমার মা,মানে আমার শাশুড়ি মা, সবসময় বলেন তোমার কথা। এমন পাগল ছেলে নিয়ে আমি করবো? এই ছেলের ভবিষ্যতে কি যে হবে তা সৃষ্টি কর্তাই ভালো জানেন। কোন মেয়ে যদি ওকে আঁচলে শক্ত বাঁধনে জড়াতে পারতো! পাতা ঝরানোর সময়টা তাঁর আয়েশি আবেদনে দু'জনকে আরো কাছে ঠেলে দেয়। রাতের তারারা ওদের দুজনকে আলিঙ্গনে জড়ায়। মাতাল সমীরণে যৌবনের দোলায় উন্মত্ত চারিদিক।স্বপ্নীল আবেশে প্রেমের বৃন্দাবনে নাও ভাসায় ওরা।এমনই এক রাত অতিথি হয়ে এসেছিল আবির দোলেনা'র জীবনে। সেই বাসন্তী রাঙা মধু যামিনীর পর আর কখনো দেখা হয়নি তাদের। সত্যিই আবির হারিয়ে যায়, শুধু দোলেনার জীবন থেকে নয় সমাজ, সংসার, পরিবার থেকে। পাতা ঝরানোর উদাসী হাওয়ায় ভেসে হারিয়ে যায় আবির।
ডিএসএস/