শিক্ষকদের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ
ঢাকার উত্তরায় নিজ বাসায় অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর উপর নগ্ন হামলা ও নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার সঙ্গে জড়িত মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
শনিবার (২ জুলাই) সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার। আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন মজুমদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতারা।
মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন,‘অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর উত্তরার বাসায় সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তিরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে প্রশাসনের সামনে জুতার মালা পড়িয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মৌলবাদী অপশক্তির আস্ফালন দেখার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেয়নি। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদেরকে প্রয়োজনে আবার বীর মুক্তিযোদ্ধারা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে। এর আগে কুমিল্লায় মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল বিএনপি-জামায়াত। ধর্মকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এদের মূল উদ্দেশে।
অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী ও নড়াইলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রত্যেকটা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘দেশে আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে। নড়াইলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ও উদীচীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর ওপর মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রমাণ করে জামাত-বিএনপি-হেফাজত আবার সক্রিয় হয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। প্রত্যেকটা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার বলেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। বাহাত্তরের সংবিধানের ১ম অনুচ্ছেদে এই রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া ও এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত সংবিধান কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। জিয়া ও এরশাদের অবৈধ শাসনামলে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদের বিনা বিচারে ফাঁসি দিয়ে লাশ গুম করা হয়েছিল। জিয়া ও এরশাদের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে জাতির সামনে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয়েছে। এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো যথাক্রমে- উত্তরায় নিজ বাসায় অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর ওপর নগ্ন হামলা ও নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার সঙ্গে জড়িত মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে আইন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং দেশের সকল মসজিদ-মাদ্রাসায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে, বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, সকল ধরনের মাদ্রাসায় নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ, শহীদ মিনার নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এসএম/এমএমএ/