পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিল ইউনূস সেন্টার
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেছেন—এমন অভিযোগ ছিল অনেক আগেই। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি আবারও তুলে ধরেন। এর কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বুধবার (২৯ জুন) রাতে ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি প্রতিবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব বাংকের অর্থায়ন বন্ধে প্রফেসর ইউনূস ‘চাপ প্রয়োগ করেছেন’ বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই বক্তব্যের জবাবে ইউনসূ সেন্টার বলছে, ‘প্রফেসর ইউনূস পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে কখনও কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ জানাননি। সুতরাং বিষয়টি নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত।’
পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূস যোগাযোগ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন।
বিষয়টি নিয়ে ইউনূস সেন্টার বলছে, ‘প্রফেসর ইউনূস যত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই হোন না কেন, তার যত প্রভাবশালী বন্ধুই থাকুক না কেন, একটি ৩০০ কোটি ডলারের প্রকল্প শুধু এ কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে না যে, তিনি চাইছিলেন এটা বাতিল হয়ে যাক।’
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিতর্কের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ৬০ বছর বয়সে পদার্পণ করলে তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পরিচালনা পরিষদকে জানান, যেহেতু তার বয়স ৬০ বছর হয়েছে, তারা একজন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। পরিচালনা পরিষদ অন্য কোনোরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকেই দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেন। পরিচালনা পরিষদ তার বর্তমান নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেয়। সে সময় তার বয়স ছিল ৬১ বছর ৬ মাস।
ইউনূস সেন্টার বলছে, ড. ইউনূস নিজেই একজন যোগ্য উত্তরসূরির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ছেড়ে দিতে চাইছিলেন। যখন ২০১১ সালে ড. ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হলো তখন ব্যাংকটির মৌলিক আইনি মর্যাদা হুমকির মুখে পড়ে গেলে ড. ইউনূস আদালতের দ্বারস্থ হন। অধ্যাপক ইউনূসের রিট পিটিশনের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চাকরি ধরে রাখার কোনো সম্পর্ক নেই।
গ্রামীণ ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ সুদের অভিযোগ বিষয়ে ইউনূস সেন্টার ব্যাখ্যা দিয়েছে— গ্রামীণ ব্যাংকে ৪৭ শতাংশ সুদ কখনো ছিল না এখনো নেই। ব্যবসা ঋণের উপর গ্রামীণ ব্যাংকের সুদ বরাবরই ২০ শতাংশ।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুদ আয়ের উপর যে লাভ হয়, তাতে অধ্যাপক ইউনূসের শেয়ার নেই বলে উল্লেখ করেছে ইউনূস সেন্টার। বলছে, ৪৭ শতাংশ সুদ নিয়ে কাউকে ঠকানোর কোনো সুযোগই তার নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি বেতনের বাইরে আর কোনো অর্থ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেননি।
অধ্যাপক ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে ইউনূস সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্রামীণফোন থেকে লভ্যাংশ নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা করতে চেয়েছেন বলে যে অভিযোগে ছিল তার জবাবে ইউনূস সেন্টার বলেছে, ‘অধ্যাপক ইউনূস কোনোকালেই গ্রামীণফোনের কোনো শেয়ারের মালিক ছিলেন না, এখনো তার কোনো শেয়ার নেই।
আরএ/