পবিত্র রমজানে কুবিতে মিলছে ১০ টাকায় ইফতার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মানেই বাহারি খাবারের আয়োজন। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ১০ টাকায় পূর্ণাঙ্গ ইফতার পাওয়া সম্ভব? হয়তো এক মুঠো ছোলা বা দুটি পেঁয়াজু মিলতে পারে। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী কাজী মিরাজ দেখিয়ে দিলেন, ইচ্ছাশক্তি আর মানবিক উদ্যোগে কীভাবে বদলে দেওয়া যায় বাস্তবতা।
মাত্র ১০ টাকায় তিনি দিচ্ছেন সম্পূর্ণ এক প্লেট ইফতার। যেখানে থাকছে দুটি খেজুর, একটি কলা, অল্প কিছু ছোলা, মুড়ি, একটি জিলাপি, দুটি পেঁয়াজু, একটি বেগুনি, একটি আলুর চপ, কয়েক টুকরো শসা এবং এক প্যাকেট স্যালাইন। বাজারমূল্যে এই ইফতারের দাম কমপক্ষে ৫০-৬০ টাকা। কিন্তু মিরাজের উদ্যোগে এটি মিলছে মাত্র ১০ টাকায়। কখনো কখনো তিনি সাধ্যমতো বিতরণ করছেন বিরিয়ানিও।
কাজী মিরাজ কুবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন ও কোচিংয়ের আয় থেকে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর সংলগ্ন স্থানে তিনি এই ইফতার বিক্রি করছেন। আপাতত রমজানের প্রথম ১৫ দিন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তবে সহযোগিতা পেলে পুরো রমজান চালিয়ে যেতে চান।
কাজী মিরাজ বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ভালোভাবে ইফতার করতে পারেন না। ১০/২০ টাকার ইফতার কিনতেও অনেকে লজ্জাবোধ করেন। তাই সবাই যাতে মাত্র ১০ টাকায় পূর্ণাঙ্গ ইফতার পান, সে জন্যই এই উদ্যোগ।"
তিনি আরও বলেন, "আমার কাছে যা টাকা আছে, তা দিয়ে ৬-৭ দিন চালাতে পারব। এরপর যদি কেউ অনুদান দেন, তাহলে রমজানজুড়ে চালিয়ে যাব। গত বছর অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহযোগিতা করায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থীর হাতে ইফতার পৌঁছাতে পেরেছিলাম। এবারও সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছি।"
এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমাদের মতো মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এখানে মাত্র ১০ টাকায় ইফতার পাচ্ছি, যা কিছু টাকা সঞ্চয় করতে সাহায্য করছে। সেই টাকা দিয়ে সাহরি ও রাতের খাবার কিনতে পারছি। অনেকেই উপকৃত হচ্ছে।"
কুবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, "নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবারও দারুণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ১০ টাকায় ইফতার বিতরণ করছে, যা বাইরে কিনতে গেলে ৫০-৬০ টাকা লাগবে। অনেকের জন্য ইফতার আয়োজন করা কষ্টসাধ্য হয়। কিন্তু এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষার্থীরা ইফতার গ্রহণ করছে, এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।"
তিনি আরও বলেন, "যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল, তারা যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে এটি আরও বড় পরিসরে করা সম্ভব হবে। মহান আল্লাহ যেন তাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করেন।"
