কথায় কথায় বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে বলেছেন, ‘প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব কিচ্ছতা সাধন করতে হবে। ব্যক্তিগত সঞ্চয় করতে হবে। প্রত্যেকের নিজস্ব সঞ্চয় বাড়ানো এবং প্রত্যেককে মিতব্যয়ী হতে হবে। দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কথায় কথায় দৌঁড়ায়ে বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। দেশেও ভালো চিকিৎসা হয়।’
বুধবার (২৯ জুন) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার প্রধান একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত বাধা ও চাপের মুখে পড়লেও আমরা দৃঢ়ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেক প্রতিকুল অবস্থায় এগোতে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এব্যাপারে সকলের সহযোগিতা চাই। আমাদের দেশে বিদেশে বাইরে সব জায়গায়তো একটা বাধা পেতে হয়। সেটা অতিক্রম করে আমরা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করছি। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, স্থানীয় শিল্পের বিকাশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। আমাদের সরকার সব সময় ব্যবসা বান্ধব সরকার। এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে করপোরেট কর হার আরও কমিয়ে কর হার ২ দশমিক ২৫ ভাগ হারে হ্রাস করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব কিচ্ছতা সাধন করতে হবে, সঞ্চয় করতে হবে। প্রত্যেকের নিজস্ব সঞ্চয় বাড়ানো এবং প্রত্যেককে মিতব্যয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ঢালাও ব্যবহার করবেন না, অপচয় যেন না হয় সকলেই কিছু কিচ্ছতা সাধন করে কিছুটা সঞ্চয় করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। এটা করতে গেলে তিনটা জিনিস নজর দিকে নজর দিতে হবে। তারমধ্যে রয়েছে-ব্যক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয় বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমানো, আমদানিকৃত বিলাস পণ্য পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনযোগ দিতে হবে। আমদানিজনিত মূল্যস্ফিতি রোধে সার বিদ্যুৎ তেল গ্যাসে ভর্তুকি প্রদান করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেল প্রাকৃতি গ্যাসে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা আমরা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্ত পর্যায়ে চাপিয়ে দেবো না। যার কারণে ভর্তুকি ব্যয় বাড়বে। ভর্তুকি ব্যয় সহনশীল রাখা। আমদানির উপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, সবাইকে দেশীয় পণ্যে ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। কথায় কথায় দৌড়ায়ে বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। দেশেও ভালো চিকিৎসা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক প্রতিকুল অবস্থায় এগোতে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যেখনে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এব্যাপারে সকলের সহযোগিতা চাই। আমাদের দেশে বিদেশে বাইরে সব জায়গায়তো একটা বাধা পেতে হয়। সেটা অতিক্রম করে আমরা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করছি। তার কারণ আমাদের দেশের মানুষ তাদের আলাদা শক্তি আছে। তারা বুঝতে পারে অনুধাবন করতে পারে। তখনই তাদের শক্তি বোঝা যায়। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য হয়েছে। জাতির পিতার ডাকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এদেশের মানুষ। তারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল সেই মানুষের দেশ আমাদের। আমাদের মানুষকে নিয়েই এগোতে হবে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনাভাইরাস এটা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য জনগণের সর্বাত্নক সহযোগিতায় চাই। জনগণের সর্বাত্নক সহযোগিতা পেলে এই বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,মানুষের জীবন-জীবিকার সুরক্ষা দেয়ার জন্য যতটুকু করার আমরা সবটুকু করেছি। আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশ কোন সংকটে পড়ে, আমি এটুকু কথা দিতে পারি আওয়ামী লীগ সরকার একইভাবে সবসময় মানুষের পাশে আছে, থাকবে।
তিনি বলেন, যখনই করোনা কমেছে তখনই আমাদের আমদানি বেড়েছে। অনেকে মেশিনারি কেনা নিয়ে সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বেশিরভাগই ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি করেছি, যখনই এগুলো চালু হবে তার থেকে আমাদের দেশ লাভবান হবে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, এটা করতে গিয়ে আমাদের ডলারের কিছুটা টান পড়েছে, কিন্তু সেটা এখনো আশঙ্কাজনক কোনো বিষয় নয়। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার জন্য আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ২২ জুন পর্যন্ত ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারে সরবরাহ করেছে।
তিনি বলেন, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমরা ফ্যামিলি কার্ড চালু করেছি, এই ফ্যামিলি কার্ড এক ধরনের রেশন কার্ড। এই কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই কার্ডের মাধ্যমে ৬টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমরা সরবরাহ করেছিলাম।
সংসদ নেতা বলেন, বিগত বছর অক্টোবর মাসে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। যেটা এখন ৪১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমাদের আমদানি বেড়েছে সে কারণে এটি হয়েছে। তাছাড়া কৃষকের সার কিনতে হচ্ছে। যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে রাখার বিপরীতে টাকার মূল্য পুন:নির্ধারণ করা হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।
তিনি আরও বলেন, বিলাসবহুল পণ্য আমদানি যত কম হয়, সেদিকে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেগুলো খুব একটা প্রয়োজন নাই, সেগুলো যেন আমরা কম আমদানি করি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সেগুলো আনতে হবে। বিলাসবহুল পণ্যগুলো যেমন ব্যক্তিগত গাড়ি, ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানিতে কর মার্জিন রেখা ৭৫ শতাংশ, নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফর স্থগিত করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে মূল্য নিয়ন্ত্রণের সরকারের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদা প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানো। পদ্মা সেতুর যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে, এর মাধ্যমে আমদানি ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সহায়ক হবে। তাছাড়া এই বন্যা মোকাবিলা করতে এই সেতু সহায়তা দিবে।
সংসদ নেতা বলেন, কিচ্ছুতা সাধনের জন্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমানো যায়। একইভাবে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নির্ভরতা কমানো হচ্ছে।
এসএম/