ট্রেনের অনলাইন টিকিট নিয়ে তেলেসমাতি চলছেই
ঘরে ফেরার টিকিটের মতো অনলাইনে ঈদের ফিরতি টিকিট নিয়েও তেলেসমাতি চলছে। টিকিট প্রত্যাশীরা অনলাইনে ঢুকতেই পারেননি। যখন ঢুকতে পেরেছেন তখন ‘টিকিট নাই’ দেখাচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশের পক্ষ থেকে ঈদের ফিরতি টিকিট কেনার ভোগান্তি বুঝতে ট্রেনের ই-টিকিটের ওয়েবসাইটে লগইন করা হয়েছিল। পর পর দুই দিন ফিরতি টিকিট কেনার জন্য বিভিন্ন গন্তব্যে চেষ্টা করা হয়।
গতকাল সোমবার (২ এপ্রিল) ওয়েবসাইটে নোটিশ দেওয়া ছিল সকাল ৮টা থেকে টিকিট দেওয়া হবে। যথারীতি সকাল ৮টায় লগইন করতে গেলে সম্ভব হয় না।
এর পরিবর্তে ওয়েবসাইটে বারবার একটা নোটিশ দেখানো হয়– ‘আপনি আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান। আপনার জন্য মানসম্পন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করতে আমরা আপনাকে একটি কাতারে রাখছি। আপনার ধৈর্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ’।
এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে বলা হলো যতক্ষণ পর্যন্ত না টিকিটগুলো হাওয়া হয়ে গেল। প্রায় ২০ মিনিট পর যখন সাইটে ঢোকা গেল তখন দেখা গেল কোনো টিকিট নেই।
একটা ট্রেনের ক্ষেত্রে ড্যাশবোর্ডে দেখা গেল ৮টা টিকিট আছে। কেনার জন্য নির্ধারিত বাটনে চাপ দিলে দেখানো হয় টিকিট নেই।
এরপর ঈদের দিন মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) সকাল ৮টায় টিকিট কেনার জন্য ওয়েবসাইটে ঢোকা হয়। দেখা গেল সেখানে নোটিশ দেওয়া আছে এমন– ‘অনুগ্রহ করে সঙ্গে থাকুন। আপনি বিকাল ৫টায় লগইন করতে সক্ষম হবেন যখন ঈদের টিকিট বিক্রি শুরু হবে’।
তারপর বিকাল ৫টায় লগইন করতে গেলে দেখায় সেই পুরনো নোটিশ– ‘আপনি আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান। আপনার জন্য মানসম্পন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করতে আমরা আপনাকে একটি কাতারে রাখছি। আপনার ধৈর্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ’।
বারবার রিফ্রেশ দিলে বারবারই এমন নোটিশ দেখাতে থাকে। তারপর একসময় সাইটে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু আজকের অভিজ্ঞতা আগের দিনের চেয়ে ভিন্ন।
সোমবার যেমন প্রবেশাধিকার দেওয়ার পর বলা হলো টিকিট নেই আজ আর তেমনটি বলা হলো না। আজ বলা হলো ট্রেনই নেই!
একাধিক গন্তব্য সিলেক্ট করলেও বারবার একই কথা বলা হলো– ‘নো ট্রেন ফাউন্ড ফর সিলেক্টেড ডেট অর সিটিজ’। এভাবে যশোর টু ঢাকা, খুলনা টু ঢাকা, রাজশাহী টু ঢাকা এবং দিনাজপুর টু ঢাকা চেষ্টা করে গেলেও প্রতিবারই বলা হচ্ছিল ‘নো ট্রেন ফাউন্ড ফর সিলেক্টেড ডেট অর সিটিজ’।
সব গন্তব্যের ক্ষেত্রেই যেহেতু এমন দেখাচ্ছিল তার মানে বিষযটি এমন যে ওইদিন কোনো ট্রেনই চলবে না। যদিও বিষয়টি তেমন নয়। টিকিট গায়েব করতে করতে ট্রেনই গায়ের করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ঈদযাত্রার ৩০ এপ্রিলের ১৩ হাজার টিকিট নাকি এক মিনিটেই বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। তিনি ওই সময় বলেন, এক মিনিটে ১৮ লাখ হিট পড়েছে। এই এক মিনিটেই ১৩ হাজার যাত্রী টিকিট কিনে ফেলেছেন।
কিন্তু মাসুদ সারওয়ারের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন অনেকে। ভুক্তোভোগী টিকিট প্রত্যাশীরা বলছেন, এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। অনলাইনে টিকিট কারসাজি করে রাখা হয়। যেটা কালোবাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
ট্রেনের ই-টিকিট দেখভাল করা প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারকে টিকিট কারসাজির অভিযোগে গ্রেপ্তারও করেছে র্যাব। তারপরও তারা এই ‘কাঁচা টাকার’ লোভ সামলাতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে জড়িত রেলের অনেক কর্তাব্যক্তিও।
যদিও টিকিট কালোবাজারিতে রেলের কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রীর দাবি, রেলের কর্মীদের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ যার টিকিট তাকেই এনআইডি নম্বর দিয়ে কাটতে হচ্ছে। কাজেই এখানে কালোবাজারির সুযোগ কই?
কিন্তু ঢাকাপ্রকাশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টিকিট কিনতে এনআইডি কার্ডের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি কর্তৃপক্ষই মানেনি। একজন চারটি করে টিকিট কেটেছেন এবং সেগুলো বাইরে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে।
আরইউ/আরএ/