বিভিন্ন ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত কামনা
জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত
দুই বছর পর পুরোনোরূপে ফিরেছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। করোনা অতিমারির কারণে গত দুই বছর কোনো জামাত হয়নি জাতীয় ঈদগাহে। এবার সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ঈদ ফিরেছে দুই বছর আগের উৎসবের মেজাজে। এতদিন করোনা স্বাস্থ্যবিধির কারণে নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলিও করতে পারতেন না। তবে এবার নামাজ শেষে দেখা গেছে সেই পুরোনো দৃশ্য।
মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে দেশের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি দেশ জাতির মঙ্গলের জন্য দুই হাত তুলে প্রার্থনা করেন। নামাজে ইমামতি ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধান বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সরকারের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ছাড়াও হাজার হাজার মুসল্লি জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন।
জাতীয় ঈদগাহে নামাজের আগে দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এ দেশ শান্তি সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করে। শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট হয়, আমরা এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিহার করব। এধরনের বক্তব্য দেব না। সব মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করব। ’
ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে বাংলাদেশের কল্যাণ কামনা করেন মাওলানা রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে এদেশ পেয়েছি আমরা, আল্লাহ। এদেশকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন। পৃথিবী থেকে যুদ্ধ যাতে চলে যায়। সকল বালা-মুসিবত থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’
মোনাজাতে মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদ, জাতির পিতা ও ১৫ই আগস্টের শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
দুই বছর পর অনুষ্ঠিত এই ঈদ জামাতে বিপুল সংখ্যক মুসলমান অংশ নেন। ৩৫ হাজার মানুষ ধারণ ক্ষমতার মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর কদম ফোয়ারার চারিদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম পাশের সড়ক, শিক্ষা ভবনের পশ্চিম পাশের সড়কে দাঁড়িয়েও অনেকে নামাজ পড়েন।
ঈদের সকালে আকাশে মেঘের সাজ থাকলেও সকাল সোয়া ৯টায় নামাজ শেষে বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে মানুষকে সরাসরি দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। তবে নামাজ ফেরত মানুষদের কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে উদযাপন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় ছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করে ঢুকানো হয়।
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আগেই মাঠ প্রস্তুত করা হয়। মুসল্লিদের ওজুর জায়গা, মাথার উপরে ত্রিপল দিয়ে ছামিয়ানা করা হয় রোদ বৃষ্টি ঠেকানোর জন্য। প্রতিটি কাতারে রয়েছে পর্যপ্ত ফ্যান লাইট। জাতীয় ঈদগাহের সবগুলো গেট দিয়ে মুসল্লিরা প্রবেশ করতে পারেন। এ ছাড়া নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক নামাজের জায়গা।
এর আগে সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।
জাতীয় ঈদগাহ ও বায়তুল মোকাররম ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ দুই বছর পর মুক্তভাবে জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে মুসল্লিদের চোখে মুখে ছিল উৎসবের আমেজ। করোনা মহামারি ভুলে সবাই আপন মহিমায় জেগে ওঠে। সারাবিশ্বের শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া হয় প্রতিটি জামাতে।
এসএম/এসএন/এপি