যাত্রী নেই গাড়ি ছাড়ার তাড়াও নেই
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাদেই সারাদেশে উদযাপন করা হবে ঈদুল ফিতর। তাই শেষ মুহূর্তেও কিছু মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ছুটছেন। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীও নেই গাড়ি ছাড়ার তাড়াও নেই পরিবহনকর্মীদের। অলস সময় পার করছেন টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা। কোনো একজন যাত্রী আসা মাত্রই ঘিরে ধরছেন বিভিন্ন পরিবহনের কলারম্যানরা। যাত্রীদের এমন যত্ন সাধারণ সময়ও লক্ষ করা যায় না যেটা এবার ঈদের আগের দিনে দেখা যাচ্ছে।
সোমবার (২ মে) দুপুর ১২ টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় সবগুলো কাউন্টারই ফাঁকা। কোনো কোনো কাউন্টারে এক দুইজন যাত্রী এসেই কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন গাড়ির দিকে। এমনই একজন যাত্রী মনির হোসেন। ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে দেখা হয় তার সঙ্গে। মনির হোসেন মিনাবাজার ধানমন্ডি শাখায় চাকরি করেন। সোমবার সকালে ডিউটি শেষ করে ছুটি হওয়া মাত্র সোজা চলে এসেছেন গাবতলী বাস টার্মিনালে। তার প্রথম টার্গেট ছিল লোকাল বাসে যাবেন।
এর আগে যতবারই ঈদের আগে বাড়ি গেছেন সিটিং বাসে সিট না পেয়ে লোকাল বাসেই চেপেছেন তাই এবারও সেভাবেই পরিকল্পনা করে এসেছেন। কিন্তু গাবতলী এসে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। কারণ এবার গাবতলী পুরোপুরি ফাঁকা কাউন্টারের পেছনে টার্মিনালে সারি সারি বাস দাঁড়ানো। প্রতিটি পরিবহনের অসংখ্য গাড়ি লাইনে দাঁড়ানো, যাত্রী নেই বলে ছাড়ছেও না। নির্ধারিত শিডিউল কাটছাঁট করে টিকিট বিক্রি করছেন কাউন্টার মাস্টাররা।
মনির হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ঈদের আগে কখনো বাসে সিট পেতাম না। তাই লোকাল গাড়িতে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। দ্রুতি পরিবহনে যাওয়ার জন্য টিকিটও কাটতে গেছি পরে একজন বললেন কাউন্টারে গেলে ভালো গাড়ির টিকিট পাবেন ভালো সিটও পাবেন। তাই এখানে চলে এলাম। এসে কাউন্টারে বলা মাত্র এ-২ একটি সিট দিয়েছে। ভাড়া সাড়ে ৬০০ টাকা। খুলনার দৌলতপুর পর্যন্ত ভাড়া রাখা হয়েছে সাড়ে ৬০০ টাকা।
ঈগল পরিবহনের এ গাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার কথা দুপুর সাড়ে ১২ টায়। যখন মনির হোসেনের সঙ্গে কাউন্টারের সামনে কথা হচ্ছিল। তখন কাউন্টার মাস্টার সাব্বির ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এখন দুপুর ১২টা ২১ মিনিট অথচ ৩২ সিটির গাড়িতে এখনো ২৫ সিট খালি। গাড়ি ছেড়ে যেতে হলে যে খরচ সেই খরচও উঠবে না। সকালে দুইটা ট্রিপ ছেড়ে গেছে একটি বাসে ১৮ সিট ফাঁকা রেখেই ছাড়তে হয়েছে। আর একটাতে ৮ সিট ফাঁকা ছিল। আজ কোনো যাত্রীই নেই।
একই অবস্থা সুবর্ণ পরিবহনের। সেখানে দায়িত্বরত কাউন্টার মাস্টার নাজির হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, যাত্রী নেই তার গাড়ি ছাড়ব কীভাবে। সকাল থেকে বসে আছি একটি গাড়িও যাত্রী পূর্ণ হয়নি। শুধু আজ না ঈদের আগে যেভাবে যাত্রী হওয়ার কথা সেই তুলনায় এবার যাত্রী পাইনি। পরিবহন সেক্টরে চাকরির ২০ বছরের এমন চিত্র কখনই দেখিনি।
সার্বিক পরিবহনের কলারম্যান শওকত হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমাদের গাড়ি আছে কিন্তু যাত্রী নেই। যাত্রী না থাকায় সময় মতো গাড়ি ছাড়তে পারছি না। এক দুইজন যাত্রী নিয়ে তো গাড়ি ছাড়া যায় না। যে কারণে সকাল ৮টার বাস ৮টা ৪৫ মিনিটে ছাড়তে হয়েছে তাও ১০ সিট ফাঁকা ছিল। যাত্রী না থাকায় নিয়মিত শিডিউল বাসও কমিয়ে দিতে হয়েছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে শত শত বাস পার্ক করে থাকতে দেখা গেছে। লোকাল পরিবহনগুলোতেও যাত্রীদের চাপ নেই। এ ছাড়া গাবতলী থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার সময় আমিনবাজার ব্রিজের মুখে যে জট তৈরি হয় এবারও সেটিও নেই। পুরো এলাকা একদম ফাঁকা। এবার ঈদ যাত্রা নিয়ে অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। যারা গত দুই দিনে গ্রামে গেছেন তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ঈদ যাত্রার বর্ণনা।
তাদেরই একজন পান্থ রহমান। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লেখেছেন শেষ কবে ৩ ঘণ্টা ২ মিনিটে গাবতলী থেকে রাজবাড়ী এসেছিলাম মনে করতে পারছি না। ফিলিং স্বস্তির ঈদ যাত্রা। শুধু পান্থ রহমান না যারাই ঈদে বাড়িতে গেছেন সবার মুখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস।
এসএম/এসএন