শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান

শিকারিরা দুপুরের খাবারের জন্য পূর্ব-নির্ধারিত জায়গায় আসার সময় এদিক ওদিক ফিরে ফিরে তাকায়– যদি কোনো শিকার চোখে পড়ে। তবে মন আর শিকারে নেই; তারা খুব ক্ষুধার্ত। পা টলতে টলতে, চোখ মুখের ঘাম মুছতে মুছতে তারা ফিরে আসে। দুজন দুজন করে ফিরে আসার সময় দূর থেকে নিজেদের শিকার দেখাতে দেখাতে আসে। কেউ কেউ শিকার রাখার শূন্য ব্যাগ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ছুড়ে ফেলে দেয় আর বর্ণনা করে কীভাবে ওই ব্যাগ সারাক্ষণ শূন্যই ছিল। একই সময় সবাই সমবেত শিকারগুলো গুণে দেখে। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বলার থাকেই।

তবে সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ বর্ণনা আসে আর্নেস্টের কাছ থেকে। হাত মুখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যে বর্ণনা সে দেয় সে বর্ণনাকে মুকাভিনয় বলাই উত্তম। অন্যদের তরফে সামান্যতম অবিশ্বাস যেন না থাকে সেজন্য তার সব বর্ণনার জ্যান্ত সাক্ষী রাখে ডানিয়েল এবং জ্যাককে। আর্নেস্ট বর্ণনা করতে থাকে কীভাবে তিতির পাখিটা উড়ে যাচ্ছিল, কীভাবে খরগোশটা বার দুয়েক মাটি ছুঁয়ে ছুটে চলার পর হঠাৎ উল্টে পড়ে গেল রাগবি খোলোয়ারের মতো। ততক্ষণে সৃশৃঙ্খল পিয়েরে সবার কাছ থেকে নেওয়া ধাতব পাত্রে এনিসেট ঢেলে দিয়ে পাত্রগুলো বিশুদ্ধ পানিতে পূর্ণ করার জন্য পাইন ঝোপের শেষ প্রান্তে ক্ষীণ ধারায় বয়ে যাওয়া ঝরনার কাছে চলে যায়। সবাই মিলে একটা ভ্রাম্যমাণ টেবিল পেতে তার ওপরে টেবিলক্লথ বিছিয়ে দেয় এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যাগ থেকে যা যা এনেছে ঢেলে দেয়। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী বাবুর্চি হিসেবে খ্যাতি আর্নেস্টের। গ্রীষ্মকালে তাদের মাছ ধরা অভিযানে খাবারের শুরুতে থাকত দক্ষিণ ফ্রান্সের মসলাযুক্ত স্যুপ। তাৎক্ষণিকভাবে ধরা মাছ এবং হাতের কাছে পাওয়া মসলা দিয়ে আর্নেস্ট সেই স্যুপ তৈরি করত। কোনো কোনো মসলা সে এত বেশি উদারভাবে মেশাত যে, মনে হতো কোনো কচ্ছপের জিহ্বাও পুড়ে যাবে।

যা-ই হোক, সেদিন আর্নেস্ট কয়েকটা কাঠি ভালো করে, একেবারে সুচালো করে চেছে সেগুলোর সঙ্গে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা সোব্রাসাডাগুলো গেঁথে দিল। তারপর কাঠের অল্প আগুনে ঝলসে নিল। আগুনের তাপে ফোঁটায় ফোঁটায় তরল গলে পড়তে লাগল নিচের আগুনে এবং সেখানে হিস হিস আওয়াজ তোলার সঙ্গে আগুনের ফুলকি উঠতে লাগল। দুটুকরো রুটির মধ্যে ফুটন্ত এবং সুগন্ধযুক্ত সস ভরে আর্নেস্ট অন্যদের হাতে দিয়ে দিল। সুগন্ধি মদের মধ্যে চুবিয়ে আনন্দে আত্মহারা হওয়ার মতো শব্দ করতে করতে সবাই গোগ্রাসে গিলতে লাগল সেগুলো। তারপর কিছুক্ষণ চলল হাসি তামাসা, কাজকর্ম সম্পর্কিত গল্পগুজব আর কৌতুক। তবে অপরিষ্কার ক্লান্ত শরীরে জ্যাক তাদের গল্পে খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারল না। কারণ তার খুব ঘুম পাচ্ছিল। অবশ্য অন্যদেরও কারো কারো ঘুম পাচ্ছিল। কেউ কেউ আবার নিচে সমতলভূমির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবুজের দিকে শূন্য চোখে তাকিয়ে রইল। কিংবা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে কেউ কেউ আর্নেস্টের মতো একটা লম্বা ঘুমই দিয়ে দিল। যা হোক, সাড়ে পাঁচটায় যে ট্রেনটা স্টেশনে আসবে সেটা ধরার জন্য তাদের চারটার সময় রওনা দিতে হবে।

ট্রেনে ওঠার পর কম্পার্টমেন্টের মধ্যে ক্লান্তির সঙ্গে সবাই গাদাগাদি করে বসে পড়ল। কুকুরগুলোর কোনোটা সিটের নিচে, কোনোটা মালিকের পায়ের নিচে ঘুমিয়ে। রক্তপিপাসার স্বপ্ন তাদের ঘুমের মধ্যে আসা যাওয়া করছে। দিনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে সমতলভূমির প্রান্তে। এরপর আসে আফ্রিকার আতি সংক্ষিপ্ত গোধূলিবেলা। খোলা প্রান্তরের ওপর উপদ্রবের মতো কোনো রকম ক্রান্তির রেখা না টেনেই নেমে পড়বে রাত। শেষ স্টেশনে গিয়ে বাড়ি পৌঁছনোর তাগিদে তাড়িত হয়ে পড়ে সবাই: বাড়ি গিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়তে হবে, ভোরে উঠেই আবার বের হতে হবে কাজে। সুতরাং তাদের বিদায়পর্ব অন্ধকারেই সাঙ্গ হয়। শুধু বন্ধুত্বের পিঠ চাপড়ানি ছাড়া মুখে কেউ কিছু বলে না।

জ্যাক তাদের চলে যাওয়ার শব্দ এবং উষ্ণ, উত্তাল কণ্ঠ শোনে–তার খুব ভালো লাগে এইসব। তারপর সে আর্নেস্টের চলার গতির সঙ্গে তাল মেলায়। অর্নেস্ট এখনও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। কিন্তু জ্যাকের পা যেন আর নড়তে চায় না। বাড়ির কাছাকাছি অন্ধকার রাস্তায় পৌঁছে আর্নেস্ট জ্যাকের দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুই খুশি হয়েছিস তো? জ্যাক সাড়া দেয় না। আর্নেস্ট উচ্চ শব্দে হেসে কুকুরের উদ্দেশে শিস বাজায়। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে মামার খসখসে হাতের মধ্যে নিজের হাত আস্তে করে ঢুকিয়ে দেয় জ্যাক। মামা জ্যাকের হাতে খুশি আর আদর মেশানো চাপ দেয়। দুজনই নীরবে বাড়ি পৌঁছে।

আনন্দ যেমন তাড়তাড়ি পেত রাগের সময়ও খুব দ্রুত এবং পুরো মাত্রায় আবেগের শিকারে পরিণত হতো আর্নেস্ট। রাগের সময় তাকে যুক্তি দিয়ে কিছু বোঝানো যেত না। তার সঙ্গে কথাও বলা যেতো না। তার রাগকে একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার বলেই ধরে নিত সবাই। আকাশে ঝড়ের মেঘ জড়ো হতে দেখলে ঝড় নেমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। অন্যসব বধির মানুষের মতোই আর্নেস্টের গন্ধের ইন্দ্রিয় খুব প্রবল ছিল। অবশ্য তার কুকুরের গন্ধের প্রসঙ্গ উঠলে এই কথা প্রযোজ্য নয়।

গন্ধের প্রখর ইন্দ্রিয় আর্নেস্টের জন্য আনন্দ বয়ে নিয়ে আসত: দুভাগ করা মটরের স্যুপ কিংবা সস ওমলেট, নানির হাতের বিশেষ রান্নার পদ গরুর কলিজা আর ফোঁপরার সঙ্গে মিশিয়ে নাড়িভুঁড়ি রান্না– সস্তা হওয়ার কারণে তাদের খাবার টেবিলে প্রায়ই দেখা যেত এই পদ; এটা সহ অন্য যেসব খাবার তার প্রিয় ছিল সেগুলোর সুগন্ধ তার আনন্দের উৎস ছিল। কিংবা রবিবারে মামা যে সস্তা ওডিকলোন মাখত সেটার গন্ধ, কিংবা পম্পেরো নামের লোশন, এটা অবশ্য জ্যাকের মা ও ব্যবহার করতেন, এটার লেবু এবং কমলালেবুর তেলসদৃস সুগন্ধ খাবার ঘরের সবখানে এবং মামার চুলে লেগে থাকত। বোতলের কাছে মুখ নিয়ে মামা শুঁকে দেখত। তবে শুধু আনন্দ নয়, তার প্রখর ইন্দিয়ের কারণে অনেক সময় সমস্যাও হতো।

সাধারণ নাকে ধরা যায় না এমন কিছু গন্ধ তার সহ্যই হতো না। যেমন খাবার শুরু করার আগে সে নিজের প্লেটটা শুঁকে দেখত; প্লেট থেকে যদি তার নাকে ডিমের গন্ধ আসত তাহলে রেগে আগুন হয়ে যেত আর্নেস্ট। সন্দেহযুক্ত প্লেটটা নানি হাতে নিয়ে নিজে শুঁকে দেখতেন এবং বলতেন কোনো গন্ধ পাচ্ছেন না। তারপর তার মেয়ের হাতে দিতেন শুঁকে দেখার জন্য। ক্যাথরিন করমারি প্লেটটা হাতে নিয়ে সেটার ওপর দিয়ে নাক ঘুরিয়ে এমনকি না শুঁকেই বলে দিতেন, না কোনো গন্ধ নেই। তারা অন্য প্লেটগুলো নিয়েও শুঁকে দেখতেন যাতে তাদের পরীক্ষা যথাযথ হয়েছে বলে মতামত প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। অবশ্য বাচ্চাদের প্লেট তারা শুঁকতেন না; তাদেরকে খেতে দেওয়া হতো লোহার গামলায়। এর কারণ অবশ্য জ্যাকের কাছে তখন রহস্যময় ছিল। হতে পারে চীনা মাটির প্লেটের অভাব ছিল বাড়িতে, কিংবা নানি যেমন একদিন বললেন– প্লেট যাতে না ভাঙে। তবে জ্যাক এবং তার ভাই চালচলনে বেখেয়াল ছিল না কখনওই। যে কারণই হোক না কেন, পরিবারের কোনো নিয়মের আসলে কোনো ভিত্তি নেই বলেই মনে হয়েছে জ্যাকের।

তবে এতসব আচার আনুষ্ঠানের পেছনেও নৃতাত্ত্বিকগণ কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন; তাদের অনুসন্ধান প্রয়াস দেখলে হাসি পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল রহস্য হলো, আসলে কোনো কারণই নেই। যা হোক, নানি এরপর সোজা সাপটা রায় দিয়ে দিতেন: কোনো গন্ধ নেই প্লেটে। আসলে এরকম রায় ছাড়া নানির আর কোনো উপায় থাকত না। কারণ আগের রাতে থালাবাসন হয়তো তিনি নিজেই ধুয়েছেন। গৃহিনী হিসেবে তিনি কাউকে একচুলও ছাড় দিতে রাজী ছিলেন না। আর তাতেই আর্নেস্টের রাগ আরো বেড়ে যেত এবং রাগ বাড়ার অরেকটা কারণ হলো, রাগের সময় তার দৃঢ় বিশ্বাসটাকে সে প্রকাশ করতে পারত না। তখন তার রাগকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হতো। খাওয়া বাদ দিয়ে গোমড়া মুখে বসে থাকত; নানি তার প্লেট বদলে দিলেও নিজের প্লেটের দিকে ঘৃণাভরা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত, কিংবা টেবিল থেকে উঠে যেতে যেতে রাগ করে বলত সে রেস্তোরাঁয় চলে যাচ্ছে। বলা পর্যন্তই তার ক্ষমতা, জীবনে একবারও ওদিকে পা বাড়ায়নি।

অবশ্য তাদের বাড়ির আর কেউই তেমন কাণ্ড করেনি। খাওয়া নিয়ে কেউ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলে নানি অবশ্য বলতে ছাড়তেন না, রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেয়ে আয়। যখন থেকে নানি ওই কথা বলা শুরু করেছেন তখন থেকেই সবার কাছে রেস্তোরাঁ জায়গাটা পাপের এবং প্রলোভনের একটা জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে পয়সা দিতে পারলে সবকিছু সহজেই পাওয়া যায়। তবে সেখানে গেলে একদিন না একদিন তার পরিণাম ভোগ করতেই হবে: নির্ঘাত পেটের পীড়া শুরু হয়ে যাবে। যে ঘটনাতেই রাগ করুক না কেন নানি তার ছোট ছেলের রাগের প্রতি বিন্দুমাত্র পাত্তা দেননি। তার একটা কারণ হলো, তিনি মনে করতেন, ছেলের রাগের প্রতি বেশি নজর দেওয়ার কোনো মানে নেই।

আরেকটা কারণ হলো, ছেলের প্রতি তার একটা দুর্বলতা ছিল: জ্যাকের অনুমানে সেই কারণটা হলো, মামার আংশিক প্রতিবন্দ্বীত্ব। আমরা যতই আমাদের গৎবাঁধা ধারণা আঁকড়ে থাকি না কেন, আমাদের চোখের সামনে এমন অনেক উদাহরণ আছে; বাবা-মা তাদের প্রতিবন্দ্বী সন্তানের দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। অনেক দিন পরে জ্যাক একদিন মামার প্রতি নানির সদা-কড়া চোখে মায়া মমতার একটা চাহনি দেখেছিল, সাধারণত এমনটা কখনও সে আগে দেখেনি। সেদিন ছিল রবিবার। মামা একটা জ্যাকেট পরেছে। কালো জ্যাকেটে মামাকে আরো একটু হালকা পাতলা লাগছে। এমনিতে মামার শরীরিক গঠন ছিল নরম কোমল এবং বালসুলভ। সেদিন মামা মাত্র শেভ করেছে এবং চুলগুলো চমৎকার করে চিরুনি করেছে। তার ওপরে নতুন কলার আর টাইয়ের কারণে মামাকে দেখাচ্ছে ছুটির দিনের পোশাকে গ্রিক রাখাল বালকের মতো। জ্যাকও সেদিন বুঝতে পারে, তার মামার আসল চেহারাই খুব সুন্দর। সেই চেহারাটাই ফুটে উঠেছে তার সুন্দর পোশাকের সঙ্গে।

সেদিনই জ্যাক বুঝতে পারে, নানির ছেলের প্রতি ভালোবাসা ছিল বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি ভালোবাসা; নানির ভালোলাগার কারণ আর্নেস্ট মামার সৌন্দর্য এবং শক্তি। সেদিন জ্যাক বুঝতে পেরেছে, আগে যে তার মনে হয়েছিল মামার প্রতি নানির আলাদা একটা টান বা দুর্বলতা আছে সেটা আসলে ঠিক নয়। তার প্রতি নানির দুর্বলতা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। সৌন্দর্য আমাদের সবাইকেই কমবেশি দুর্বল করে থাকে। তার ফলেই জগৎ সংসার আমাদের কাছে সহনীয় হয়ে থাকে। সৌন্দর্যের প্রতি আমাদের সবার দুর্বলতা আছে।

চলবে...

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা

ছবি: সংগৃহীত

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াই মানেই ফুটবল দুনিয়ায় বাড়তি উত্তেজনা। স্প্যানিশ ফুটবলের এই দুই মহারথীর লড়াই কেবল মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে মিশে আছে স্পেন ও কাতালুনিয়ার জাতিসত্ত্বার লড়াই এবং রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের ইতিহাসও।

এবারের কোপা দেল রে ফাইনালে (শনিবার দিবাগত রাত ২টা, বাংলাদেশ সময়) আবার মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল ও বার্সা। তবে এবারের লড়াইয়ে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। রেফারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সেভিয়ায় ফাইনালের আগে নির্ধারিত অনুশীলন করেনি রিয়াল, সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি কোচ ও খেলোয়াড়রা। এমনকি দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজেও থাকছেন না রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। গুঞ্জন উঠেছিল, রিয়াল হয়তো ফাইনাল বয়কটও করতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা খেলবে।

এদিকে, বার্সেলোনার সামনে রয়েছে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। লা লিগায় শীর্ষে থাকা বার্সা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে। কোপা দেল রে শিরোপা তাদের ট্রেবল যাত্রার প্রথম ধাপ হতে পারে।

 

ছবি: সংগৃহীত

বার্সার জন্য দুঃসংবাদ, ইনজুরির কারণে দলের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি এই ফাইনালে খেলতে পারবেন না। তার জায়গায় শুরুতে দেখা যেতে পারে ফেরান তোরেসকে। তবে দলের বাকিরা সুস্থ ও প্রস্তুত রয়েছেন। লিগের শেষ ম্যাচে অধিকাংশ মূল খেলোয়াড় বিশ্রামে থাকায় বার্সেলোনা কিছুটা সতেজ ভাবেই নামবে মাঠে।

রিয়াল মাদ্রিদেও রয়েছে ইনজুরি সমস্যা। দলের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে চোটে পড়েছিলেন আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে। শেষ মুহূর্তে তার ফিটনেস দেখে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ডিফেন্ডার ফার্লান্দ মেন্ডি ফাইনালে থাকছেন না, এটা নিশ্চিত।

এখন পর্যন্ত সামগ্রিক এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে—১০৫ জয়। বার্সেলোনা জয় পেয়েছে ১০২ ম্যাচে। তবে কোপা দেল রে’র ইতিহাসে এগিয়ে আছে বার্সা। ৩৭ দেখায় বার্সা জিতেছে ১৬ ম্যাচ, রিয়াল ১৩টি। ৮ ম্যাচ ছিল ড্র।

তবে কোপা দেল রে’র ফাইনালে ৭ বার এল ক্লাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে রিয়াল জিতেছে ৪ বার এবং বার্সা ৩ বার।

চলতি মৌসুমে দুই দলের দুই দেখায় দুটিতেই বার্সেলোনা জয়ী হয়েছে—লা লিগায় ৪-০ এবং সুপারকোপা দে এস্পানার ফাইনালে ৫-২ ব্যবধানে।

 

স্টেডিয়াম: দে লা কার্তুহা, সেভিল
সময়: বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ২টা

 

Header Ad
Header Ad

মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার মুরাদনগরে নাঈম সরকার (১৯) নামের এক যুবককে মাদকাসক্তির কারণে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন তার বাবা মফিজুল ইসলাম। ছেলের মাদকাসক্তি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

মফিজুল ইসলাম উপজেলার কোম্পানীগঞ্জের নগরপাড় এলাকার বাসিন্দা। তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কুমিল্লা নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এক হলফনামার মাধ্যমে ছেলে নাঈমের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

হলফনামায় মফিজুল উল্লেখ করেন, নাঈম একাদশ শ্রেণির ছাত্র হলেও দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। সে মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে পরিবারে প্রতিনিয়ত অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছিল। গভীর রাতে বাড়ি ফেরা, মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিল নাঈম। পরিবারের মান-মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মফিজুল ইসলাম বলেন, "সন্তানের এমন বিপথগামী আচরণে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। বহু চেষ্টা করেও তাকে সঠিক পথে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে পরিবার ও সমাজের সম্মান রক্ষার্থে তার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।"

Header Ad
Header Ad

গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে ক্রমাগত গরম বাড়ছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং ও ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। তবে এ নিয়ে আশার খবর দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, "এবারের গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। আমরা সীমিত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের প্রজেকশনে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আশা করছি, অনেকটাই ম্যানেজ করতে পারবো।"

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টারস বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত 'জ্বালানি সংকট উত্তরণের পথ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উপদেষ্টা আরও জানান, লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা হবে। জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে হবে। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারের মেয়াদ স্বল্প হওয়ায় কাজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, "জ্বালানির ক্ষেত্রে যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগে। আমরা এমন কিছু হাতে নিচ্ছি না, যা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বকেয়া পরিশোধে। বিল পরিশোধ না করলে কোনো দেশ ব্যবসা করবে না।"

তিনি আরও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে সিস্টেম লস ৫০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাইন লিকেজ ও গ্যাস চুরির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আগামী বছর আর কোনো বকেয়া থাকবে না, শুধুমাত্র কারেন্ট পেমেন্ট দিতে হবে। ভর্তুকি বাড়বে না, বরং কমবে। আমরা যে সংকটের গহ্বরে পড়েছিলাম, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।"

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, বিট নিলামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে পুনরায় রি-টেন্ডার করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
অন্য নারীতে মজেছেন সৃজিত! মিথিলা কোথায়?
৪ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন ১০ বছরের অটিস্টিক শিশু আহমাদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়: আলী রীয়াজ
১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর, যা বললেন বিসিবি সভাপতি
কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান সেনা
বাইরে থেকে ফিরেই ঠান্ডা গোসল? সাবধান! এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারত পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি
আইন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
নিজ দেশেই বিমান হামলা চালালো ভারত, ‘অসাবধানতা’ বলছে বিমান বাহিনী
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি
আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে যা বললেন ডা. তাসনিম জারা