ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ২১
দ্য ফার্স্ট ম্যান
আর্নেস্ট এবং তার কুকুরের আনন্দ-ফুর্তির একটা বিশেষ উৎস ছিল শিকার। আর্নেস্ট শিকারে যাওয়ার ব্যাগটা বের করলেই কুকুরটা তার পাছার সঙ্গে গুতো দিয়ে চেয়ারগুলো নাচাতে নাচাতে এবং লেজ দিয়ে দেরাজে বারি মারতে মারতে ছোট খাবারের ঘরময় ঘুরতে থাকত। আর্নেস্ট হাসতে হাসতে বলত, ও বুঝতে পারছে, ও বুঝতে পারছে। আর্নেস্ট কুকুরটাকে শান্ত করলে কুকুরটা টেবিলের ওপর মুখ রেখে তাদের প্রস্তুতির প্রত্যকটা খুটিনাটি পর্যবেক্ষণ করত আর সতর্কতার সঙ্গে বার বার হাই তুলত; তবে তাদের প্রস্তুতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওখান থেকে নড়ত না।
বন্দুকের বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগানো হয়ে গেলে মামা জ্যাকের হাতে দিয়ে দিত বন্দুকটা। জ্যাক শ্রদ্ধার সঙ্গে বন্দুকটা হাতে নিয়ে পুরনো ন্যাকড়া দিয়ে ঘষে বন্দুকের নল চকচকে বানিয়ে ফেলত। ততক্ষণে মামা কারতুজগুলো ঠিক করতে থাকত। তার সামনে একটা বস্তায় রাখা থাকত উজ্জ্বল রঙের বেশ কিছু নলাকৃতির কাডবোর্ড। ওই বস্তা থেকে মামা লাউ আকৃতির ফ্লাস্ক বের করত। ফ্লাস্কের ভেতর থাকত পাউডার, গুলি আর বাদামী রঙের কাঁচা তুলা। সে যত্মের সঙ্গে পাউডার আর কাঁচা তুলা দিয়ে ভরে ফেলত নলগুলো। বস্তা থেকে বের করে নেওয়া একটা যন্ত্রের মধ্যে নলটা ঢুকিয়ে দিত। একটা ছোট ক্রাংক নলগুলোর মাথাকে বাঁকা করে তুলা পর্যন্ত নিয়ে যেত। কারতুজগুলো প্রস্তুত হয়ে গেলে মামা জ্যাকের কাছে একটা একটা করে ধরিয়ে দিত। জ্যাক খুব ভক্তিসহকারে সেগুলো হাতে নিয়ে তার সামনে রাখা কারতুজ বেল্টের মধ্যে রেখে দিত। আর্নেস্ট ভারি কারতুজ বোঝাই বেল্টটা তার পেটের চারপাশ বেষ্টন করে এমনভাবে বাঁধত যে কেউ দেখেই বুঝতে পারত, বিশেষ কোনো অভিযানে তারা যাচ্ছে। তার আগেই দুপ্রস্থ সোয়েটারে ঢাকা পড়ে গেছে তার শরীর। মামার পিঠের পাশে বকল লাগিয়ে দিতো জ্যাক। ব্রিলিয়ান্ট ততক্ষণে এদিক ওদিক করেছে বহুবার তবে নিশব্দে। তাকে ভালো করে শেখানো হয়েছে আগেই যাতে শব্দ করে আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে ঘুমন্তদের যেন জাগিয়ে না তোলে। তবে ব্রিলিযান্টও চারপাশের প্রতিটা লক্ষণীয় বস্তু দেখে ফোঁস ফোঁস নিশ্বাস ছেড়েছে। এবার মনিবের বুকের ওপরে থাবা মেলে তার প্রিয় মুখটাতে আদরের একটা চাটন দিয়ে দেয়।
আঘা স্টেশনের উদ্দেশে তাড়াহুড়া করে তারা যখন বাড়ি থেকে বের হয় ততক্ষণে মাথার ওপরের আকাশ অনেকটা হালকা হয়ে এসেছে। চারপাশের বাতাসে ডুমুরের গাছের সতেজ গন্ধ ছড়িয়ে আছে। কুকুরটা আঁকাবাকা পথে পূর্ণ গতিতে ছুটতে থাকে; কখনও কখনও রাতের আর্দ্রতায় তখনও ভেজা ফুটপাতের পাশে তার পথ ফুরিয়ে গেলে আবার ফিরে আসে আগের গতিতেই যেন সে ওদেরকে হারিয়ে ফেলেছে। এতিয়েনের কাছে বন্দুকের মোটা কাপড়ের ব্যাগের মধ্যে মাথা নিচের দিক করে রাখা বন্দুক, একটা বস্তা এবং শিকার ধরে রাখার আরেকটা ব্যাগ। হাত হাফ প্যান্টের পকেটের ভেতর দিয়ে হাঁটতে থাকা জ্যাকের পিঠের ওপরে একটা ব্যাগ। আর্নেস্টের বন্ধুরা তার জন্য অপেক্ষা করছে স্টেশনে। তারাও কুকুর নিয়ে এসেছে; পাশের আর দুএকটা কুকুরের লেজের নিচে শুকে দেখা ছাড়া অন্য কোনো কাজে তাদের কুকুরগুলোও মনিবের পিছ ছাড়া হয় না। বন্ধুদের মধ্যে ছিল ডানিয়েল এবং পিয়েরে ভ্রাতৃদ্বয়; ডানিয়েল আর্নেস্টের সঙ্গেই কাজ করত। ডানিয়েল সব সময় হাসি তামাসায় মজে থাকত, সব সময় ইতিবাচক মনোভাব তার। আর পিয়েরে অনেক বেশি চাপা, বাস্তববাদী। মানুষজন এবং আশপাশের বিষয়-আশয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ কথা আর মতামত ব্যক্ত করতে ওস্তাদ সে। আরেক বন্ধুর নাম জর্জ; তার কাজ ছিল গ্যাস কারখানায়। তবে মাঝে মধ্যে মুষ্টিযুদ্ধের প্রতিদ্ব›দ্বীতায় অংশগ্রহণ করেও অতিরিক্ত উপার্জন করত সে। আরো দুচারজন বন্ধু যারা শিকারে অংশগ্রহণ করতে যেত তারাও সবাই বন্ধু হিসেবে খুবই চমৎকার, বিশেষ করে শিকার অভিযানের সময়। কারখানা থেকে, লোকজনের গিজ গিজ ছোট ছোট বাসাবাড়ি থেকে, এবং কখনও কখনও তাদের স্ত্রীদের কাছ থেকে বের হয়ে আসতে পেরে সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচত। প্রচণ্ড হৈহল্লার উল্লাসের সংক্ষিপ্ত আসরে যোগ দেওয়া মানুষদের মধ্যে সচরাচর দেখা না গেলেও এদের সবার মধ্যে মনখোলা ভাব এবং আনন্দের মধ্যেই সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার মনোভাব থাকত।
সেদিন ট্রেনের যে গাড়িগুলোর দরজা প্ল্যাটফর্মের দিকে খোলা সেরকম একটা কম্পার্টমেন্টে হৈহুল্লোর করে সবাই উঠে পড়ল। সবাই একে অন্যের ব্যাগপত্র তুলতে এবং কুকুরগুলোকে গাড়িতে ওঠাতে সহায়তা করল। সবার মধ্যে পারস্পরিক ঊষ্ণ সান্নিধ্য লাভের সুখ ছড়িয়ে পড়ল। জ্যাক বুঝতে পারল, তাদের পারস্পরিক সঙ্গ নির্ভেজাল আনন্দদায়ক এবং নিজেদের আত্মার পুষ্টির জন্য সহায়ক। ট্রেনটা স্টেশন থেকে বের হয়ে দমে দমে গতি বাড়াতে থাকে এবং থেকে থেকে ঘুমন্ত আবেশে যেন বাঁশি বাজিয়ে যেতে থাকে। তারা বাইরে তাকিয়ে দেখতে থাকে, ট্রেনটা সেহেলের শেষভাগ অতিক্রম করছে। তারপর সামনে প্রথমে একটা মাঠের মধ্যে ট্রেন প্রবেশ করলে হৈচৈ হল্লায় মত্ত দৃঢ়াঙ্গ মানুষগুলো সহসাই নীরব হয়ে গেল। চোখের সামনে সযত্মে চাষ করা জমির ওপরে প্রত্যুষ জেগে উঠছে। মাঠের ভেতরের জমিগুলো আলাদা করে রাখা লম্বা শুকনো নলখাগড়ার মাথার ওপর দিয়ে সকালের কুয়াশা ওড়নার মতো উড়ে যাচ্ছে। জানালার পাশ দিয়ে মাঝে মাঝে পার হয়ে যাচ্ছে খামারবাড়িগুলো আগলে রাখা গাছপালার ঝোপ; খামারবাড়িগুলোতে সবাই এখনও ঘুমে অচেতন। বাধের পাশের ডোবা থেকে উঠে আসা একটা পাখি হঠাৎ তাদের সমান্তরালে ট্রেনের গতির দিকে উড়তে লাগল যেন ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। তারপর খুব দ্রুত ডানদিকে বাঁক নিয়ে পেছনের দিকে এমন গতিতে চলে গেল যেন ট্রেনের গতি-সৃষ্ট বাতাস জানালা থেকে পাখিটাকে পেছনের দিকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে। সবুজ দিগন্ত আস্তে আস্তে গোলাপী হয়ে শেষে লাল বর্ণ ধারণ করছে। সূর্যটা পুরোপুরিই দৃষ্টির সামনের আকাশে চলে এসেছে। মাঠের সবখান থেকে কুয়াশা শুষে পান করে ওপরের দিকে উঠে চলেছে সূর্যটা। কম্পার্টমেন্টের মধ্যে তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। শিকারিরা সবাই একটা একটা করে সোয়েটার খুলে ফেলে, উসখুস করা কুকুরগুলোকে চুপ করে শুইয়ে দেয়। শুরু হয়ে যায় পালাক্রমে কৌতুক বলা এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই একমাত্র বক্তার আসন দখল করে নেয় আর্নেস্ট। সে বলতে থাকে খাবারের গল্প, অসুখের গল্প এবং মারামারির গল্প। এসব গল্পে আর্নেস্ট শুধু জিতে যায়। তাদের মধ্যে কেউ হয়তো জ্যাকের সঙ্গে দুএকটা কথা বলে, তার স্কুল সম্পর্কে, কিংবা তার মামার গল্পবলার ভণিতা দেখতে বলে মন্তব্য করে, তোমার মামা একটা মজার মানুষ।
ট্রেনের বাইরে গ্রামাঞ্চলের দৃশ্য বদলে যেতে থাকে। ট্রেন ক্রমেই পাথুরে এলাকায় প্রবেশ করছে। কমলাগাছগুলোর সংখ্যা কমতে থাকে, বাড়তে থাকে আবলুস গাছের সারি। ছোট ট্রেনটা ঘন ঘন ভটভট করতে থাকে আর বেশি করে বাষ্প ছাড়ে। হঠাৎ মনে হয় বেশ ঠাণ্ডা। কারণ ট্রেনের যাত্রী আর সূর্যের মাঝে এসে গেছে পর্বত। যাত্রীরা খেয়াল করে, মাত্র সাতটা বাজে। শেষ বারের মতো বাঁশি বাজিয়ে গতি কমিয়ে দিয়ে এবং একটা বাঁক ঘুরে ট্রেনটা একটা ছোট স্টেশনে থেমে যায়। উপত্যকার মাঝে স্টেশনটা একলা পড়ে আছে, জনশূন্য, নীরব। এখানে ওঠা নামাা করে শুধু দূরের কোনো খনির লোকেরা। সকালের মৃদু বাতাসে ইউক্যালিপটাস গাছের কাস্তেসদৃশ পাতাগুলো ঝিরঝির কাঁপতে থাকে। সবাই ট্রেন থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে নেমে পড়ে। কুকুরগুলো নামার সময় পাদানির দুএকটা ধাপ বাদ দিয়ে লাফিয়ে নামে। সবাই একে অন্যের ব্যাগ এবং বন্দুক হাতে হাতে নামিয়ে আনে। স্টেশনের শেষ মাথাতেই একটা ঢালের শুরু। বুনো প্রকৃতির নীরবতা একটু একটু করে তাদের চিৎকার আর আনন্দ প্রকাশের উচ্চ শব্দকে ডুবিয়ে দিতে থাকে। তাদের ছোট দলটি পাহাড়ে ওঠা শেষ করে নীরবে। কুকুরগুলো অশেষ চক্রে চক্কর দিতেই থাকে। তার সঙ্গীরা সবাই শক্ত এবং বয়স্ক হলেও জ্যাক চেষ্টা করতে থাকে তারা যেন তাকে পিছে ফেলে যেতে না পারে। জ্যাকের অনুযোগের ফলে দলের মধ্যে তার সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তি ডানিয়েল জ্যাকের ব্যাগটা নিয়ে নেয়। তবু অন্যদের এক পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে তাকে দুই পা ফেলতে হয়। সকালের সূর্যের তাপ যেন তার ফুসফুস পর্যন্ত ছিদ্র করে দিতে থাকে। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর তারা একটা মৃদু ঢেউ খেলানো উপরিতলের মালভূমির শেষ প্রান্তে এসে পৌছে। চারপাশটা ছোট ছোট আবলুস গাছ আর চিরসবুজ লতাগুল্মে ছাওয়া। মাথার ওপরে নরম রোদের আলোয় আলোকিত বিশাল নীলাকাশ বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এটাই তাদের শিকারের এলাকা।
কুকুরগুলো দূর থেকে দৌড়ে ফিরে এসে মনিবদের ঘিরে দাঁড়ায় যেন ইতোমধ্যে সবকিছু তাদের চেনা হয়ে গেছে। সবাই সম্মত হয়, বেলা দুটোর সময় দুপুরের খাবারের জন্য অনেকগুলো পাইন গাছের ঘন ঝোপের ওখানে এসে মিলিত হবে। মালভূমির শেষ প্রান্তে কাছেই সুবিধাজনক জায়গায় একটা ঝরনা আছে। আর ওখান থেকে নিচে উপত্যকার পুরোটা অঞ্চল এবং বহুদূর পর্যন্ত সমতলভূমি চোখে পড়ে। শিকারিরা দুজন দুজন করে ভাগ হয়ে বাঁশি বাজিয়ে যার যার কুকুর নিয়ে রওনা হয়ে যায়। আর্নেস্ট এবং ডানিয়েল এক দলে থাকল এবং শিকার রাখার ব্যাগটা তারা জ্যাকের হাতে দিল। জ্যাক খুব যত্মের সঙ্গে ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে ফেলল। অপসৃয়মান অন্য সবাইকে শুনিয়ে আর্নেস্ট ঘোষণা দিয়ে দিল, সে সবার চেয়ে বেশি সংখ্যক খরগোশ আর তিতির শিকার করে ফিরে আসবে। অন্যরা জোরে জোরে হাসতে হাসতে হাত নেড়ে যার যার গন্তব্যের দিকে বিদায় হলো।
এবার জ্যাকের পরমানন্দের একটা অধ্যায়ের শুরু। এই আনন্দের কথা জ্যাক বিস্ময়ের সঙ্গে সারা জীবন মনে রেখেছে এবং স্মৃতিকাতরতায় বার বার পেছনে ফিরে গেছে। তার সঙ্গের দুজন মানুষ একজন আরেক জনের থেকে দুমিটার বিচ্ছিন্ন, তবে সমান তালে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। জ্যাক তাদের পেছনে এবং কুকুরটা সবার আগে। মামার চোখ তখন হঠাৎ মনে হলো বুনো এবং চতুর হয়ে গেছে। সব সময় খেয়াল রাখছে তার নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় আছে কি না। থেকে থেকে ঝোপের ভেতর দিয়ে নীরবে হেঁটে যাচ্ছে। সেখান থেকে পিছে ফেলে যাওয়া কোনো পাখি হঠাৎ তীক্ষ্ম চিৎকার দিয়ে আকাশে উড়ে যাচ্ছে। কখনও ফুলের সুগন্ধে ভরা কোনো গিরিখাতের ভেতর দিয়ে হেঁটে নিচের দিকে নামতে নামতে দেখতে পাচ্ছে, পথটা আবার ওপরের দিকে উঠে গেছে। চারপাশে সবুজের ওপর আলো পড়ে ঝকঝক করছে। তাপ ক্রমান্বয়ে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে এবং তারা রওনা হওয়ার সময় যে মাটি আর্দ্র ছিল সে মাটিকেও শুকিয়ে দিচ্ছে তাপ। গিরিখাতের ভেতর বন্দুকের শব্দ হয়; একঝাক ধূসর রঙের তিতিরের ছানা তীক্ষ্ম শব্দ তুলে কুকুরের পাশ দিয়ে উড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আবার শব্দ, কুকুরের সামনে ছুটে চলা এবং শেষে ফিরে আসা: উন্মাদ চোখে আলো ঠিকরে পড়ে। রক্ত মাখা চোয়ালে একগুচ্ছ পালক কামড়ে ধরে আছে। আর্নেস্ট এবং ডানিয়েল কুকুরের মুখ থেকে শিকার নিয়ে জ্যাকের কাছে দিলে জ্যাক উত্তেজনা আর ভীতির মিশেল অনুভূতিতে সেটা গ্রহণ করে এবং তারা পরবর্তী শিকারের সন্ধান শুরু করে। শিকারের পতনের পর আর্নেস্ট যে আনন্দ ধ্বনি প্রকাশ করে সেটা ব্রিলিয়ান্টের আনন্দ ধ্বনি থেকে আলাদা মনে হয় না। তারপর আরো এগিয়ে চলে তারা। খড়ের ছোট হ্যাট পরা থাকলেও রোদের তাপে নেতিয়ে পড়ে জ্যাক। মালভূমির চারপাশটা সূর্যের হাতুড়ির নিচে নেহাইয়ের মতো কাঁপতে শুরু করে। থেকে থেকে বন্দুকের আওয়াজ শোনা যায়। তারপর আর খুব একটা শোনা যায় না। শিকারিদের কেউ একজন কখনও হয়তো একটা খরগোশকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছে। সেটা আর্নেস্টের বন্দুকের নিশানার সামনে পড়লে অবশ্যই শেষ হয়ে যেত। আর্নেস্ট বানরের মতো ক্ষিপ্র এবং এখন তার দৌড়ের গতি তার কুকুরের দৌঁড়ের গতির সমান। কুকুরের মতো শব্দ করতে করতে শিকারের পেছনে ধাওয়া করে কিছুদূর গিয়ে পাকড়াও করে পেছনের পা ধরে তুলে দূরে পেছনে থাকা ডানিয়েল এবং জ্যাককে দেখায়। তারা দুজনও আনন্দে হাঁপাতে হাঁপাতে আর্নেস্টের কাছে পৌঁছে যায়। পুনরায় শিকার শুরুর আগেই জ্যাক শিকার রাখার ব্যাগটা খুলে ধরে আনা শিকারটাকে রেখে দেয়। প্রখর সূর্যের নিচে টলতে টলতে, সীমাহীন সবুজের ভেতর কয়েক ঘণ্টা হেঁটে, অবিরাম আলো বর্ষণের ভেতর এবং বিশাল আকাশের নিচে জ্যাক নিজেকে এক ভাগ্যবান বালক মনে করে।
চলবে..