‘নারী মানেই দুর্বলতা নয় একটি ইতিবাচক ও শক্তিশালী শব্দ'
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
উত্তরের কৃষি সমৃদ্ধ জেলা নওগাঁ ১১টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ জেলায় আছে ৬টি সংসদীয় আসন। উপজেলা প্রশাসনের সবচেয়ে বড় পদ ইউএনও। এরপরেই আছে এসিল্যান্ড। জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলায় ৬নারী নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া ৪ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত আছেন নারী। কাজের মান একটু কমবেশি হলেও, সকল কর্মকর্তাই সমানতালে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসনের সবচেয়ে বড় চেয়ারে বসে করে যাচ্ছেন দৈনন্দিন কাজকর্ম, আলো ছড়াচ্ছেন এসব নারী ইউএনওরা। লাল সবুজের পতাকা হাতে, উন্নয়ন আর অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন নিজের কর্মক্ষেত্র এলাকাকে। নারীর মমতায় গড়ে তুলেছেন জনবান্ধব প্রশাসন।
উপজেলায় যে নারী ইউএনওরা কর্মরত রয়েছেন তারা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের আন্তরিকতাই তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যাচ্ছে উঁচু মাত্রাই। সব মিলিয়ে এই নারী কর্মকর্তারা সময়ের সঙ্গে আরও উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছেন। মেধা, দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিত্বে পুরুষদের সমানতালে এখন নারীদের পদচারনণা। রীতিমতো পুরুষদের পেছনে ফেলেই নারীদের এই এগিয়ে চলা।
জেলার বৃহত্তম উপজেলা মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ লায়লা আঞ্জুমান বানু গত বছরের ৪ এপ্রিল এখানে যোগদান। বিসিএস ৩৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা এর আগে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঢাকা কমিশনার অফিসে। পাশের জেলা নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বেড়ে ওঠা এই সাহসী কর্মকর্তা গত ২৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে মনছুর আলী নামে এক ব্যক্তি লাইসেন্স বিহীন গুদামে অবৈধভাবে প্রায় কোটি টাকার খাদ্য সামগ্রী মজুতের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী জব্দ এবং মাসুদ রানা নামে একজনকে আটক করেন।
মোসাঃ লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, 'এটা নিশ্চই আমাদের জন্য সৌভাগ্য। অসহায় নারীরা যখন বিশ্বাস নিয়ে আমাদের কাছে আসেন, আমাদেরকে আপন মনে করে তাদের সব সমস্যার কথা অকপটে খুলে বলেন এবং ভরসা করেন ন্যায়বিচার পাওয়ার, তখন একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশান্তি পাই এবং সকল পরিশ্রম সার্থক বলে মনে হয়।'
মান্দার মোসাঃ লায়লা আঞ্জুমান বানু পাশাপাশি আত্রাই উপজেলায় সঞ্চিতা বিশ্বাস, রাণীনগরে উম্মে তাবাসসুম, বদলগাছীতে মোছা. আতিয়া খাতুন, ধামইরহাটে আসমা খাতুন এবং পত্নীতলা পপী খাতুন দায়িত্ব পালন করছেন।
আত্রাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস গত বছরের ১০আগস্ট এই পদে যোগদান করেন। উপজেলাবাসীকে কাছে টেনে নিয়েছেন তিনি। সেখানকার সব মহলে তাঁর নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে উম্মে তাবাসসুম গত বছরের ১৯ নভেম্বর যোগদান করেন। বর্তমানে তিনিও সমান তালে করে যাচ্ছেন কাজ।
বদলগাছী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তৃপ্তি কণা মন্ডল। তিনি গত বছর ৭ ডিসেম্বর সেখানে যোগদান করেন। সম্প্রতি এডিসি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আজ ৮ এপ্রিল জয়পুরহাট জেলায় যোগদান করছেন। তার জায়গায় উপজেলার সরকারি কমিশনার (ভূমি) মোছা. আতিয়া খাতুন ভারপ্রাপ্ত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আসমা খাতুন গত তারিখে যোগদার করেন আসমা খাতুন। তিনি বলেন, 'অনেকেই মনে করেন, নারী কর্মকর্তা মানেই এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু আমি মনে করি, নারী কর্মকর্তা মানেই একটি ইতিবাচক ও শক্তিশালী শব্দ।'
পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মাত্র কয়েক মাস আগে যোগদান করেন টুকটুক তালুকাদার। তিনি এর আগে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি এডিসি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
নেত্রকোণা সদর উপজেলায় বেড়ে ওঠা ৩৩ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বলেন, যখন আমি প্রথম যোগদান করি আমাদের সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে তখন হয়তো অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, মেয়ে মানুষ কাজগুলো পারবো কিনা। আমার বিশ্বাস সময়ের সাথে সাথে এসব উত্তর হয়তো তারা পেয়ে গেছেন। কারণ আমরা নারীরাও পারি।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ৬ নারীর পাশাপাশি ৪ সহকারী কমিশনার (ভূমি) হলেন, সাপাহারের শারমিন জাহান লুনা, ধামইরহাটের মোসাম্মৎ জেসমিন আক্তার, বদলগাছির মোছা. আতিয়া খাতুন এবং মহাদেবপুরে সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে কর্মরত আছেন রিফাত আরা।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, সংবিধান এর ১৯(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। সাংবিধানিক এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই অনুকরণীয় হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো প্রজাতন্ত্রের কর্মে বিশেষ করে প্রশাসনে নারীদের অংশগ্রহণ। বাংলাদেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মে ৩৮ শতাংশের অধিক সংখ্যক নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। নওগাঁ জেলায় এই মুহূর্তে ০৬জন ইউএনও ও ০৪জন এসিল্যান্ড তাদের যোগ্যতা, মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’