ভাসমান ড্রাম ব্রীজ তৈরিতে একজন শিক্ষকের উদ্যোগ
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর জন্য ভাসমাণ ড্রাম ব্রীজ নির্মাণ করলেন ইব্রাহিম আলী (৪৫) নামের একজন স্কুল শিক্ষক। ইব্রাহিম আলী কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
ড্রাম ও বাঁশের মাছা দিয়ে ৫০ ফিট দূরত্বে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য সাঁকো তৈরি করে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপণ করলেন ইব্রাহীম আলী। বুধবার (২৫ মে) দুপুরে ড্রাম ব্রীজের উদ্বোধনের পর থেকে ওই এলাকার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত শুরু করে। এতে খুশি পুরো গ্রামবাসী।
সতী নদীর উপর এই ভাসমাণ ৫০ ফিট ড্রাম ব্রিজে দুঃখ ঘুচলো শিক্ষার্থীসহ ১৫ হাজার মানুষের।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী (৪৫) তার স্কুল যাওয়া আসায় পরে ওই এলাকার সতী নদীটি। এরপর তিনি ড্রাম ব্রীজ করার উদ্যোগ নেন। তিনি নিজস্ব ও দুই চারজন এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ২০টি ড্রাম ও শতাধিক বাশেঁর সমন্বয়ে একটি ভাসমাণ বাঁশের ব্রীজটি নির্মাণ করলেন। ব্রীজটি নির্মাণ হওয়ায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি। তার এমন মহতী উদ্যোগ এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী বলেন, ড্রাম ও বাঁশের মাছা দিয়ে ৫০ফিট দূরত্বে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য একটি সাঁকো তৈরি করি। কারণ বেশ কিছুদিন থেকে সতী নদীর উপর নির্মিত এটি সেতু ভেঙ্গে পড়ে যায়। কিন্তু নদীর দুই পাশে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার কয়েক শত শিক্ষার্থী কোমর পরিমান পানিতে নেমে আলাদা পোশাক ব্যবহার করে স্কুল, কলেজে যাতায়াত করত। তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা মাথায় রেখেই কাজটি করা হয়েছে। আর এধরনের একটি কাজ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মন করছি।
তিনি আরও বলেন, অনেক ছাত্র ছাত্রী ভয় ভয় করে যাতায়াত করত। এ জন্য নিজ উদ্যোগে ও দুই চারজন বন্ধুসহ ২০টি ড্রাম ও একশ বাঁশ দিয়ে পানির উপরে ৫০ ফিট বাঁশের সাকো নির্মাণ করি ওই এলাকায় যাতায়াতের জন্য।
নওদাবাস দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. রুহুল আমিন বলেন, শালমারা ঘাটে একটি ব্রীজ ছিল সেটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙ্গার পর হতে মানুষের খুবই অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এখানে নদীর একবুক পানি পার হয়ে ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ যাতায়াত করে। পরে কয়েকজন এলকাবাসী ও শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী একটি পরিকল্পনা করে যে ড্রামের উপর বাঁশের মাছা তৈরি করে যাতায়াত করা যাবে। পরে তার উদ্যোগেই এ ভাসমান বাঁসের সাঁকোটি তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
কলেজ শিক্ষার্থী সজল বলেন, আমি সাইকেল ঘাড়ে করে এক বুক পানি পাড় হয়ে আসলাম। ব্রীজটি ভাঙ্গার পর দুর্দশায় শেষ নেই। এখানে দেখার কেউ নেই। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ দেখেও না। আমরা খুব কষ্ট করে নদী পাড় হয়ে যাতায়াত করছি স্কুল কলেজে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, সতি নদীর উপর আগে একটি ব্রীজ ছিল সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে এলাকার মানুষ কষ্টে পারাপার করছেন। তিনি আরো বলেন, সেতুর টেন্ডার হয়েছে কাজও চলছে।