সৎ উদ্যোক্তা হতে চান আত্মপ্রত্যয়ী যুবক লোকমান
একসময় শখের বসে পায়রা বা কবুতর পালন করতে দেখা যেত। তবে কালের বিবর্তনে কবুতর এখন আর শখের পোষা পাখি নয়। কবুতর পালন এখন স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। কবুতর পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। তাদেরই একজন গাজীপুরের শ্রীপুরের মো. লোকমান হোসেন মামুন।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ছাপিলাপাড়ার বাসিন্দা লোকমান। ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। প্রথমে শখের বসে কবুতর পালন শুরু করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ কবুতর পালন প্রকল্পটি লাভজনক হওয়ায় এতে স্বাবলম্বী হয়েছেন। লোকমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে বৈরাগীরচালার অনেক বেকার যুবক সুখের স্বপ্ন দেখছেন। বাড়ির আঙিনা বা ছাদে কবুতর পালন করা হচ্ছে। এতে যেমন আয় হচ্ছে তেমনি বেকারত্ব ঘুচাচ্ছে যুবকদের। এমন সম্ভাবনাময় প্রকল্পে বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালনে উৎসাহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় যুবকরা।
লোকমান হোসেন ভাড়া বাসার এক কক্ষের ভেতরে খাঁচায় আবদ্ধ করে সাত-থেকে দশ প্রজাতির কবুতর পালন করে আসছেন। তার খামারের সাদা, কালো কিংবা গোলাপি রঙের কবুতর দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। তিনি দুই জোড়া কবুতর দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার খামারে ৭০ জোড়া কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে ব্ল্যাক ড্যানিস টাম্পলার, এলমন্ড ড্যানিস টাম্পলার, টাইগার ড্যানিস টাম্পলার, ইন্ডিয়ান ফ্যান্টেল, রাশিয়ান ভলগা, এক্সিবিশন, এন্ড্রোপ, গ্রিজেল রেসার, সবজি রেসার, মাক্সি রেসার, সোয়া চন্দন ও পাকিস্তানি টেডি কবুতর রয়েছে। ক্রেতাদের কাছে এসব বাহারি কবুতরের বেশ চাহিদা রয়েছে।
লোকমান হোসেন জানান, এসব কবুতরের খাবার তালিকায় আছে মিশ্র খাবার। প্রতি মাসে কবুতরের খাবারের পেছনে ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তিনি নিজেই খামারের পরিচর্যা ও দেখভাল করেন।
তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখন পর্যন্ত তার ৬ জোড়া কবুতর মারা গেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ঠাণ্ডা লেগে রাণীক্ষেত রোগে মারা যায়। পরে তিনি ফার্মেসী থেকে ভ্যাকসিন কিনে সব কবুতরের শরীরে পুশ করেছেন। খামার আরও বড় করার পরিকল্পনা তার।
খামারিদের দেওয়া তথ্যমতে, ঠিকমতো খাদ্য ও পরিচর্যা পেলে কোনো কোনো কবুতর দুই মাসের কিছু কম সময়ে বাচ্চা দেয়। আর প্রতি জোড়া কবুতর দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এ কারণে শুধু বেকার যুবকরাই নয়, কবুতর পালনে এগিয়ে এসেছেন জেলার অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নিজেদের বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদে খাঁচা তৈরি করে পালন করছেন দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতর।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামান জানান, এখন অনেক যুবক নিজ উদ্যোগে কবুতর পালনে এগিয়ে আসছেন। বেকার যুব সমাজকে কবুতর পালনে এগিয়ে আনতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কবুতর পালনে শ্রম ও খরচ কম। তাই এ পেশায় যুবকরা বেশি ঝুঁকছে।
এসজি/