ছাত্রবন্ধু প্রকৌশলী আবদুল আজিজ
লেখা ও ছবি : নাহিদ হাসান
জন্ম তার ঢাকার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের মৌলভী পাড়া গ্রামে। আবদুল আজিজের বাবা সরকারি ব্যাংকার ছিলেন। তিনি বদলী হতেন বলে ছেলে পড়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুলে। এসএসসি এইচএসসি’র পর বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং।
জীবনের শুরু তার সরকারী চাকরিতে। পিএসসি (সরকারী কর্ম-কমিশন)তে উত্তীর্ণ হয়ে রেলওয়ের প্রকৌশলী হিসেবে। চট্টগ্রামে চাকরি করেছেন। তবে উদ্যমী ও কর্মতৎপর তরুণ আবদুল আজিজের অনেক গুণ। কাজের অবসরে নানা কিছু খেয়াল করেছেন। অনেকের সঙ্গে মিশেছেন। দেখেছেন, অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান ভালো করলেও দক্ষ জনবল তৈরির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো বাংলাদেশেই শিল্পখাতের বিকাশ ঘটছে না। অর্থনৈতিকভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে। ভালো করা অনেক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে নানাভাবে ভাবতে, ভাবতে দেশের জন্য কিছু করবেন বলে সরকারী ভালো এবং আরামের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন জীবন শুরু করলেন আবদুল আজিজ। তার স্বপ্ন হলো, ‘আমি দেশের কল্যাণে কাজ করব ও বাংলাদেশের অথনীতিতে অবদান রাখব’। দেশের রিজার্ভ মানি রক্ষা ও বিদেশী জনশক্তি নয়, বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তিকে শিক্ষিত এবং দক্ষ করে তুলতে কাজ শুরু করলেন। নানা পরিকল্পনা গড়ে মাঠে নামলেন।
এই জীবনের শুরু হলো প্রকৌশলী আবদুল আজিজের একটি বাইং হাউজ দিয়ে। চাকরির জমানো টাকাই তার সম্বল হলো। তবে সেখানেও জীবনের ভাবনা মিলে গেল তার। দক্ষ জনবল না থাকায় তিনি বড় ধরণের লসে পড়লেন। তবে থেমে পড়লেন না হার না মানা, কোনো ধরণের মাদক ও বাজে কাজে আক্রান্ত না থাকা আবদুল আজিজ। এর মধ্যে তার পড়ালেখার ভুবনের প্রতি অনুরাগ আরো অনেক বেড়েছে। ভেবে দেখলেন ও জানলেন কাজ করতে গিয়ে, আমাদের দেশের কারিগরি শক্তি পিছিয়ে আছে। ফলে নানাভাবে চেষ্টা করে ২০০৮ সালে নামলেন তিনি। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)’ নামের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি তারই হাতে গড়া। অনেক কষ্ট করে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন প্রকৌশলী আবদুল আজিজ। তারা কাজ করছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এখনো এনআইএফটি তাদের সার্টিফিকেটে ভালোভাবে চলে। এখানে তার অবদান হলো গার্মেন্ট ও টেক্সটাইলের তিন বছর মেয়াদী কোর্সগুলো চালু। আছে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা। আমিষের অ্যাগ্রো বা কৃষিজাত খামার আছে এখন তার। আছে অটোমোবাইলে বিনিয়োগ। নিজে একটি সফটওয়্যার কম্পানিও খুলেছেন। আছে ‘টেস্টি’ ও ‘সতেজ’ নামের ফুড প্রসেসিং ব্যান্ড। ‘মেট্রো সুপার শপ’র মালিক তিনি। গণমাধ্যম গড়েছেন ‘অধিকার’ অনলাইন, ইন্টারনেট টিভি ও দৈনিকের মাধ্যমে। আবাসনেও আছেন। ‘সোনারগাঁও ইউনিভাসিটি’ নামের বাংলাদেশে অন্যতম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনি উদ্যোক্তা ও ভাইস চেয়ারম্যান। ‘এনআইইটি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি)’ নামের কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে গড়া কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তার। ‘এনপিআই (ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট)’ নামের নানা খাতের প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ার প্রতিষ্ঠানটি গড়েছেন। ‘বিআইএসটি (বিজিআইএফটি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)’, ‘এনআইএমটি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি)’, ‘অগ্রণী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ ও গাজীপুরের ভাওয়ালের ‘ভিজিএমআই (ভাওয়াল গাজীপুর মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট)’ তার প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা-উদ্যোক্তা কেবল পড়ালেখা ও কাজ শেখান না, তাদের চাকরিও দেন।
কারিগরী খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই উদ্যোক্তা-কর্মী কাজ করতে গিয়ে এই ভুবনের নানা সমস্যা দেখলেন। নিজেও পোহালেন। ফলে কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র-শিক্ষকের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলতে হয় বলে তাদের নানা সমস্যা তাকে আক্রান্ত করলো ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কমচারীদের মতো। ফলে প্রকৌশলী আবদুল আজিজ গড়ে তুললেন ‘পিয়ানু (প্রফেশনালস ইনস্টিটিউট অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি)। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো পিয়ানুতেও তিনি প্রেসিডেন্ট। কভিড-১৯ রোগের আক্রমণের সময় করোনাভাইরাসের মহামারির আমলে ইন্টারনেট ব্যবহার অনেক গুণে বেড়েছিল। তখন তিনি গড়ে তুলেছেন যাছাই.কম। এটি তার সর্বসাম্প্রতিক ইন্টারনেট ভিত্তিক বাণিজ্যকর্ম। তাদের ভুবন ই-ক্যাবের তিনি সামনের নির্বাচনে একজন পরিচালক। মোট নয়জন আসবেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ইলেকশনে। অনলাইন ব্যবসায়ী ও কর্মী ছাত্র, ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াবেন তিনি। যেহেতু তার অনেক ছাত্র, ছাত্রী আছে। যারা পড়ালেখার ফাঁকে কাজ করে খায়।
ছবি : সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে সমাবর্তনে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শিক্ষামন্তী ডা. দীপু মণির সঙ্গে উদ্যোক্তা প্রকৌশলী আবদুল আজিজ।
ওএস।