ও গুলমোহর, ওগো কৃষ্ণচূড়া
লেখা ও ছবি : চৌধুরী মাসাবি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
আগুন ঝরা রৌদ্রতাপ গ্রীষ্মের। এ তাপ নয়, চোখে লাগছে আগুন রঙা কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো। আমাদের লালমাটির সবুজ ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বিরাট গাছে তার এখানে, সেখানে; থোকায়, থোকায় ফুটে আছে রক্তিম এই ফুলগুলো। আমাদের ক্যাম্পাসের ছোট, ছোট পাহাড় ও গাছ, গাছালি সবুজ পল্লবে ঘেরা থাকে। সবুজ পত্রের ভুবনে মাঝেমধ্যে ফুটেছে টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়াগুলো। সবুজের মাঝে লাল-এ যেন বাংলাদেশের পতাকারই অবয়ব। ক্রিকেট বিজয়ের আরেক বাহন, পড়ালেখার ভুবনের গৌরব। দেখলে চোখে পড়ে, গ্রীষ্মের নীল আকাশ। তার তলে আবীরের রং ধারণ করেছে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো। এর ফুলগুলো ক্যাম্পাসের শোভা বাড়িয়েছে অনেকগুণ। নয়নাভিরাম দৃশ্যগুলো কেবল শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীই নন, উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরাও। তারা কেউ আর ফিরে যেতে চাইছেন না। তবে এই ফুল একদিন ঝরে যাবে। ফলে জ্ঞানের কথা বলি। শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া। কৃষ্ণচূড়ার ইংরেজিটি নামটি হলো ‘ফ্লেম ট্রি’। বৈজ্ঞানিক নাম ‘ডেলোনিক্স রেজিয়া’। ফ্যাবেসি বৈজ্ঞানিক বৃক্ষ প্রজাতির অন্তর্গত, আরবি, হিন্দি আর উদুতে ‘গুলমোহর’। বাংলায়ও এই নাম বহু পরিচিত ও অনেকের প্রিয়।
সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায় কৃষ্ণচূড়া গাছ ফুল দেয়। এশিয়া মহাদেশের ভারত, পাকিস্তান, প্রশান্ত মহাসাগরের দেশগুলো, হংকং, চীনের দক্ষিণাঞ্চল, তাইওয়ানে দেদার ফোটে। আফ্রিকার দেশগুলোতেও আছে। মরুময়, উঞ্চ যে দেশগুলোর আবহাওয়া। ফলে মিশর, মালে, সুদানের কথা বলা চলে।
ফুলের কথা বলতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম আবর্তনের ছাত্রী আফরিন জাহান প্রমি বলেছেন, ‘আমাদের ৫০ একরের এই ক্যাম্পাসকে নতুন রঙে সাজিয়েছে টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো। গোল চত্বর থেকে অনেক জায়গায়ই কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো ফুলে সেজেছে এখন। যেদিকে তাকাই মনে হয় আমার, যেন কৃষ্ণচূড়ায় আগুন লেগেছে।’
একের পর এক গাছ, উজ্জ্বল আবীর রঙা টুকটুকে ফুলগুলো। এ তো কৃষ্ণচূড়ার ক্যাম্পাস। লাল টুকটুকে। ফুটে থাকলে মন মাতায়। বাতাসে পাপড়িগুলো ভাসলে সৌন্দর্যে বহুগুণে বেড়ে চলে। এ আমাদের ভালোবাসার ভুবনকে দারুণ-মনে করিয়ে দেয়। চোখ আটকে থাকে রক্তিম আভার ফুলের সমারোহে। গাছের নিচে অজস্র পাপড়ি বিছিয়ে রাখে লাল রঙা বিরাট এক গালিচা। আপন সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে। সব ক্লান্তি অনায়াসে ভুলিয়ে দেয় ফুলের সৌরভ।
একটি বিরাট পাকা সড়কের দুপাশে ফুটে আছে অনেকগুলো কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ। আমরা বলি ‘কৃষ্ণচূড়া রোড’। দুই পাশে বিশাল গাছগুলো ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধ। কৃষ্ণচূড়া গাছে ছাওয়া পথটিতে হাঁটতে, হাঁটতে মাথার ওপর লাল সবুজের শামিয়ানার ফাঁক দিয়ে নীল আকাশ উঁকি দিয়ে চলে।
ভোর সকাল দেখলে মন বলে, লাল একটি কত্ত বড় গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে পথ। তখন তো আসলে আমাদের পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ জায়গাই কৃষ্ণচূড়ার লাল ভুবনে ছাওয়া থাকে। কোমল, দারুণ মনোহর, ভালোবাসার এক অবিশ্বাস্য বর্ণিল ভুবন এক। একের পর এক ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষককে ডেকে নিয়ে আসে আপন ভুবনে। তারা এই পথ বেয়ে একা, কখনো দু, চারজনের দলে হেঁটে চলেন আপন খেয়ালে পড়ালেখার ভুবনে।
কোথায় নেই এখন কৃষ্ণচূড়ার সারি? কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে, ব্যাবসায় অনুষদের পাশে, সমাজবিজ্ঞান ও কলা অনুষদের সামনের দিকে, ব্যাডমিন্টন কোর্টের ধারে, বিজ্ঞান অনুষদের ধারে-থোকায়, থোকায় অনেক উঁচুতে ফুটে আছে রক্তরঙা ফুলগুলো। তারা কথা বলতে পারে না। কিন্তু অনেক কথা বলিয়ে নেয়। ভালোবাসার ভুবনে মনে ভালোবাসা এঁকে দেয়। আমাদের গতি রোধ করে। রং ও ফুটে থাকার সৌন্দর্যের মোহে। এই তো যথেষ্ট।
নয়নাভিরাম এমন দৃশ্যগুলো আরো সব নানা ছবিতে রোজ উপভোগ করছেন সবাই। বাংলা ভাষার জন্য প্রথম আন্দোলন করা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে হল আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নামটি ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল’। ছেলেদের। এই হলের সামনে বাঁধাই চত্বরের ভেতরে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো আছে। এই গাছটি ছায়া হলের ছেলেদের কবি করে তুলছে, তাদের মনের ভেতরে স্বপ্ন এঁকে চলেছে।
ওএস।