নেত্রকোনায় কমছে বনভূমি, ঝুঁকির মুখে পরিবেশ
নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষির আধুনিকীকরণসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত চলছে বৃক্ষ নিধন, ফলে পরিবেশ রয়েছে ঝকির মুখে। বাড়ছে প্রকৃতির বৈরি আচরণ। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভুমি থাকা প্রয়োজন হলেও নেত্রকোনায় এ বনভূমির পরিমান কম। দশমিক ৩০ শতাংশ। বেড়ে চলছে অসময়ে অনাবৃষ্টি, খরা, অতিবৃষ্টি, প্রচণ্ড দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
পাহাড়, সমতল ও হাওর এই তিনস্তর বিশিষ্ট বনভূমি রয়েছে নেত্রকোণায়। কিন্তু দিন কি দিন নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে বর্তমানে সেই বনভুমির পরিমাণ নেমে এসেছে অতি নগন্যের কোঠায়। প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বসবাসকারী এজেলার আয়তন ২ হাজার ৮১০ বর্গকিলোমিটার বা ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৭০একর। এদিকে জেলা বনবিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট বনভূমির পরিমান মাত্র ১ হাজার ৯৭৫ একর। যা জেলার সর্বমোট আয়তনের (০.৩০) দশমিক ৩০শতাংশ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, চাষাবাদ ও শিল্পায়নের জন্য বন-জঙ্গল কেটে প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। কিছু স্বার্থপর ব্যক্তি বন-জঙ্গল উজাড় করছে। ফলে পশুপাখি অন্ন ও বাসস্থান হারাচ্ছে এবং অন্য জীববৈচিত্র্য লোপ পাচ্ছে। পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। ফল-ফসল ও প্রাণহানি ঘটছে।
জেলার সচেতন সমাজ মনে করছেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে প্রাকৃতিক বনরক্ষা করে এবং সামাজিক বনভূমির পরিমাণ বাড়াতে খাস জমিতে, রাস্তার পাশে, নদীর চরে সরকারিভাবে বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যার মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন গড়ে তুলতে হবে। বনায়নে সামাজিক সক্রিয় আন্দোলন, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বনভূমি রক্ষায় কঠোর আইন প্রনয়ণ এবং এর প্রয়োগের বিকল্প নেই।’
নেত্রকোনার সিনিয়র সাংবাদিক শামীম তালুকদার বলেন, জেলায় প্রকৃতির বিরুপতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরাসহ নানান রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে প্রকৃতি, ভারসাম্যতা হারাচ্ছে পরিবেশ। এর কারণ বনভূমির পরিমাণ কমে আসা।
জেলা শহরের সাতপাই এলাকার শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, মানুষ তার প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছে। পাহাড়ের বড় বড় বৃক্ষ থেকে শুরু করে হাওরের অক্সিজেন পার্ক খ্যাত করচ ও হিজলের বাগানগুলোও ধংস করা হচ্ছে। কিন্তু সে অনুপাতে রোপন করা হচ্ছে না। সরকারের একার পক্ষে পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই সকলের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেছেন, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে শুরু হয়েছে মরুকরণ, বাড়ছে দুষণ, বাড়ছে ভূমিক্ষয়, পরিবর্তিত হচ্ছে ঋতুচক্র, হচ্ছে খরা, ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। এই অবস্থা থেকে উত্তোরনের একমাত্র পথ ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে সবুজ আস্তরন তৈরি।
সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্যলীলার মধ্যে বৃক্ষরাজি অন্যতম, যা ছাড়া প্রাণিকুলের জীবন-জীবিকার কোনো উপায় নেই। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী বৃক্ষের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় বনভুমির উন্নয়ন ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই দাবি জেলাবাসীর।
এ ব্যাপারে জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক হারুন অর রশীদ বলেন, জেলার বনভূমির পরিমাণ অত্যন্ত নগন্য। ঘাটতি পুরণে কাজ করে যাচ্ছে জেলা বন বিভাগ। কৃত্রিম বনায়নের জন্যে প্রচুর খাস জমি প্রয়োজন। জেলা প্রশাসন বনায়নের জন্যে খাস জমি বরাদ্দ দিলে বনায়ন কার্যক্রম বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।